সুন্দরবনের স্পেশাল পেঁয়াজের চাটনি, সঙ্গে বারবিকিউ করা পমফ্রেট। অথবা কলমি শাক আর লঙ্কার আচার সহযোগে চিজে মাখোমাখো কাঁকড়া! মুর্শিদাবাদী বারবিকিউ চিকেনের সঙ্গে ওয়াইনে ভাজা ডিম। ভাবছেন এ আবার কী খাবার! এ কালের শাশুড়ি জামাই তো বটেই তাদের পরবর্তী প্রজন্মও যে এ স্বাদে মজবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। শেফ জয় এর হেঁশেলের কিছু রেসিপি ট্রাই করে দেখতেই পারেন।
ট্যামারিন্ড রিফ্রেশার
মা ষষ্ঠী যে কেন জৈষ্ঠ্য মাসের একটা দিন জামাই বাবাজীবনদের জন্যে উতসর্গ করলেন কে জানে! বোধহয় কোনও ফিচেল জামাইকে জব্দ করতেই উনি গরমের সময়টা বেছে নিয়েছেন। কুছ পরোয়া নেহী! গরমকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে গন্ধরাজ লেবুর সুগন্ধে ভরা টক ঝাল মিষ্টি বরফ ঠান্ডা পাকা তেঁতুলের শরবত ! আঃ কী আরাম! শুনেই যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সুন্দর কাচের গ্লাসে ট্যামারিন্ড রিফ্রেশারে চুমুক দিয়ে মনে হয় গরম যুগ যুগ জিও।
উপকরণ
(চার জনের জন্যে)
সেদ্ধ করা পাকা তেঁতুলের ক্কাথ: এক কাপ
(বিট নুন দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে)
চিনি: স্বাদ অনুযায়ী
ভাজা জিরে, ধনে ও লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চামচ করে
ক্রাশড বরফ: ২ কাপ
সোডা: ৫০০ মিলি
গন্ধরাজ লেবুর পাতা
প্রণালী: সেদ্ধ তেঁতুল ছেঁকে নিয়ে ভাল করে চিনি মিশিয়ে সব ভাজা মশলা দিয়ে নেড়ে নিন। গ্লাসে ঢেলে ওপরে ক্রাশড বরফ দিয়ে সোডা ঢেলে দিন। গন্ধরাজ লেবু পাতা ভাসিয়ে বরফ ঠান্ডা কুলার পরিবেশন করুন।
মাটন ড্রামষ্টিক স্টু
মাটনের সঙ্গে সজনে ডাঁটা রান্না করার দুঃসাহস এক মাত্র শেফ জয়ই দেখাতে পারেন। ডাঁটা দিয়ে পাঁঠার মাংস শুনে হয়তো অনেকেই ধাক্কা খেতে পারেন। কিন্তু আসল ধাক্কাটা খাবেন এই স্টু মুখে দিলে! আহা কী অনির্বচনীয় স্বাদ! লেবুর রাজা গন্ধরাজের তাজা গন্ধের সঙ্গে আদা কাঁচা লঙ্কার সুঘ্রাণ স্টু-র স্বাদে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। মাটনের সঙ্গে সজনে ডাঁটার গাঁটছড়া যে এতো মধুর হতে পারে তা মুখে না গেলে মালুম হবে না। আর স্টু-র স্বাদ হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সজনে ডাঁটার মিষ্টি মিষ্টি শাঁস আর নারকেলের দুধ। একটু চেষ্টা করে দেখুন না। বাড়িতে বানিয়ে মেয়ে জামাই ও তাদের শশুরমশাইকে চমকে দিতে পারেন কিনা!
উপকরণ
মাটন: ৫০০ গ্রাম
আদা, রসুন বাটা: ২ চামচ
পেঁয়াজ: ২ টো
কাঁচা লঙ্কা বাটা: ২ চামচ
সজনে ডাঁটা: ৬ টা
নুন, চিনি: স্বাদ মতো
হলুদ: সামান্য
নারকেলের দুধ: এক কাপ
গন্ধরাজ লেবুর রস: ১চামচ
লেবুর পাতা: ৪ টে
প্রণালী: আদা, রসুন বাটা, পেঁয়াজের টুকরো ও নুন প্রেশার কুকারে ভাল করে সেদ্ধ করে নিন। মাংস তুলে নিয়ে জলটা ছেঁকে রাখুন। এরপর স্টকে কাঁচা লঙ্কা বাটা ও ডাঁটা দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। সামান্য একটু হলুদ দিতে হবে। স্বাদ অনুযায়ী নুন মিষ্টি দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। মাংসের টুকরো দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ ফুটিয়ে নিয়ে নারকেলের দুধ ঢেলে নামিয়ে রাখুন। এর মধ্যে লেবুর রস ও পাতা দিয়ে কিছু ক্ষণ চাপা দিয়ে রাখতে হবে। গন্ধরাজের সুগন্ধ স্টু-এর সঙ্গে মিলেমিশে গেলে গরমাগরম পরিবেশন করুন।
আরও পড়ুন: বোহেমিয়ানে বা়ংলা ফিউশন ফুড
গলদা চিংড়ির আম কাসুন্দি
অ্যালার্জির ভয়ে চিংড়িকে গুডবাই করব তেমন মানুষ আমি একেবারেই নই। আরে বাবা ভাল মন্দ খাবার না খেলে বেঁচে থাকাটাই যে পানসে হয়ে যাবে! তাই অ্যান্টি অ্যালার্জিক খেয়ে চিংড়ি চাখার কোনও বিরতিই নেই। আমি একা নই। অনেক খাদ্য রসিক মানুষের মনের কথা কথা। কিন্তু এই গলদা চিংড়ির আম কাসুন্দি যে একে বারে অন্য রকম! কাঁচা আমের সঙ্গে কাসুন্দি আর খোয়া ক্ষীরের মধুর মিলনে চিংড়ি যে কী অসম্ভব স্বাদু হয়ে উঠেছে তা না চেখে দেখলে বোঝা মুশকিল। সত্যিই এ স্বাদের ভাগ কাছের জনকেও দিতে মন চায় না। রান্না যে সত্যিই অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে অনায়াসে টক্কর দিতে পারে তা আর এক বার প্রমাণ করে দিলেন শেফ জয়।
উপকরণ
বড় গলদা চিংড়ি: চারটে
গ্রেট করা কাঁচা আম: ২ চামচ
আম কাসুন্দি: ২ চামচ
আদা বাটা: ২ চামচ
নারকেলের দুধ: ১ কাপ
খোয়া ক্ষীর: ২ চামচ
কাঁচা লঙ্কা বাটা: ৪ চামচ
নুন, চিনি: স্বাদ মতো
হলুদ: সামান্য
শুকনো লঙ্কা: গোটা -২
সর্ষের তেল: ২ চামচ
প্রণালী: বড় চিংড়ি পরিষ্কার করে ধুয়ে পিঠের দিক থেকে কিছুটা কুরে বের করে নিতে হবে। কোরা চিংড়ির সঙ্গে আম, আম কাসুন্দি, ক্ষীর, কাঁচালঙ্কা বাটা, নুন চিনি দিয়ে স্টাফিং করে বেক করে নিতে হবে। সর্ষের তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে আদা লঙ্কা বাটা, নুন, চিনি, অল্প হলুদ দিয়ে কষে নিয়ে নারকেলের দুধ দিয়ে ফুটে উঠলে চিংড়িগুলো ছেড়ে দিন। ফুটে ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে দারুণ উপাদেয় গলদা চিংড়ির আম কাসুন্দি।
অনুলিখন: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: অনির্বাণ সাহা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy