Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Heart Disease

Heart disease: হৃদ্‌রোগে মৃত্যু আটকান

চল্লিশের কোঠায় বা তার আগেই হৃদ্‌রোগ এবং তাতেই মৃত্যু। এমন দুর্ঘটনা আটকানোর উপায় সচেতনতা ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা।

চল্লিশের কোঠায় বা তার আগেই হৃদ্‌রোগ এবং তাতেই মৃত্যু। এমন দুর্ঘটনা আটকানোর উপায় সচেতনতা ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা

চল্লিশের কোঠায় বা তার আগেই হৃদ্‌রোগ এবং তাতেই মৃত্যু। এমন দুর্ঘটনা আটকানোর উপায় সচেতনতা ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৫৬
Share: Save:

গত এক বছর ধরে অকালমৃত্যু খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। কাউকে কেড়েছে করোনা, কাউকে করোনা-পরবর্তী অসুস্থতা। আতঙ্ক বাড়িয়ে, গত কয়েক মাসে অল্প বয়সে হৃদ্‌রোগে মৃত্যুও বেশ বেড়ে গিয়েছে। হৃদয়ের গতি হঠাৎ থেমে যাওয়ায় ইউরো কাপের খেলায় মাঠে লুটিয়ে পড়েছেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। মৃত্যুর চোখে তিনি ধুলো দিয়ে ফিরলেও, পারেননি ডিলান রিচ। ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যাচে মাঠেই হৃদ্‌রোগে সম্প্রতি প্রয়াত এই কিশোর ফুটবলার! সপ্তাহখানেক আগেই চল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই হৃদ্‌রোগের বলি হয়েছেন অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্ল। পরিচিত গণ্ডিতেও চল্লিশের আগেই বহু সম্ভাবনাময় জীবন হার্ট অ্যাটাকে থমকে যাচ্ছে। শোক, ভয়, অনিশ্চয়তা এতটাই গ্রাস করছে যে, ত্রিশ থেকে চল্লিশকে অনেকেই বিপজ্জনক বয়স বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন। তরুণ বয়সে হৃদ্‌স্পন্দন হঠাৎ থেমে যাওয়ার এই পরিণতি থেকে বাঁচার উপায় কী? আলোচনা করলেন কার্ডিয়োলজিস্ট কৌশিক চাকী ও হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুনীলবরণ রায়।

হার্ট অ্যাটাক মৃত্যুর সম্ভাবনা

‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন ঘটনার কারণ অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন। হঠাৎ করে হৃদ্‌রোগ হলে, মানে হৃৎপিণ্ডের মধ্যে রক্ত চলাচলের ধমনী হঠাৎ বন্ধ হয়ে হার্টের বড় অংশে রক্ত পৌঁছতে না পারলে এ রকম হতে পারে। এই ধরনের মৃত্যুকে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ বলে। অনেক ক্ষেত্রেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও সময় মেলে না। এ ছাড়া হঠাৎ হার্টের গতি অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গেলে হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করতে পারে না, মস্তিষ্কে রক্ত গিয়ে পৌঁছয় না। ফলে মৃত্যু হয়। হার্ট চলতে চলতে হঠাৎ ব্লক হয়ে গেল, এমন হলে তো মৃত্যু হবেই। বা ঘুমের মধ্যে মারা যাবে। এমন দুর্ঘটনা আগেও ঘটত। কিন্তু আগে পঞ্চাশ বছর বয়সের পর এমন খারাপ খবর আসত, এখন সেই বয়সটা ত্রিশ-চল্লিশে নেমে এসেছে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইউরোপের তুলনায় হার্টের অসুখের সম্ভাবনা তিন থেকে চার গুণ বেশি,’’ জানালেন ডা. চাকী।

ডা. রায় বলছেন, তরুণ বয়সেও ভিতরে অনেক অসুখ ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। বংশগত রোগও থাকতে পারে। সেটা যদি চিহ্নিত না করা যায়, তবে শারীরিক ও মানসিক চাপের সময়ে তার কারণে প্রবল সমস্যা হতে পারে। শর্করা বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ধরা না পড়লে, কোলেস্টেরল বা সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এমন হতে পারে। যে ফুটবলার মাঠেই ঢলে পড়ছেন, যে তারকা ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন, তাঁদের হয়তো এমন কোনও অনির্ণীত রোগ ছিল। নইলে তো সকলেরই এই সমস্যা হত। তা তো নয়। রক্তচাপও নীরব ঘাতক। হঠাৎ তা বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের ধমনী ছিঁড়ে সেরিব্রাল হেমারেজ হয়েও মৃত্যু হতে পারে। মস্তিষ্কের ধমনীতে কোনও সমস্যা বা অ্যানারিজ়ম থাকলেও তা ফাটলে হেমারেজ হয়ে মারা যান মানুষ। এই অ্যানারিজ়মের (আঙুরের থোকার মতো) দেওয়াল হালকা হয়। এটা থাকলে কখন ফাটবে, বলা যায় না। অন্য দিকে, ঘুম থেকে উঠে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ হয় করোনারি হার্ট ডিজ়িজ়ের কারণে। দেখা গিয়েছে, ষাটের পরে হার্ট অ্যাটাক হলে তা-ও মানুষ সামলে নেন। কিন্তু তরুণ বয়সে অ্যাটাক হলে মৃত্যুর ঘটনা বেশি হয়। তরুণদের হৃৎপিণ্ডে অ্যারিদমিয়া (ছন্দের ওঠানামা) বেশি হয়, ওই ধাক্কাটা সহ্য করতে পারে না।

কী ভাবে বিপদ বাড়ছে

আধুনিক লাইফস্টাইল, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যেস, বসে কাজ অর্থাৎ কায়িক শ্রমের অভাব হার্ট অ্যাটাকের বিপদ সময়ের আগে ডেকে আনছে। যে মানুষটার প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরলের সমস্যা হয়তো পঞ্চাশের কাছাকাছি গিয়ে ধরা পড়ার কথা, তার ৩৫-৪০ হতেই শরীরে এই সব সমস্যা দানা বাঁধছে। বংশগত কারণে হাইপারট্রফিক কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি (হৃৎপিণ্ডের পেশি অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাওয়া), বাড়িতে কারও হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যুর ঘটনা থাকলে কম বয়স থেকে হার্ট চেকআপ করাতে হবে। যেমন ইসিজি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি ইত্যাদি। তাতে সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে হঠাৎ মৃত্যু অনেকটা আটকানো সম্ভব।

আর রয়েছে প্রচণ্ড স্ট্রেস। অফিসের টেনশন, অতিমারিতে চাকরি বাঁচানোর চাপ, পারিবারিক জটিলতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। কাউকে সংসার টানতে হচ্ছে, কেউ কোভিডকালে বাড়ির বয়স্কদের স্বাস্থ্য নিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন। এত স্ট্রেসে কর্টিজ়ল হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। ফলে প্রেশার, সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। ডা. চাকী বললেন, যাঁদের কোভিড হয়নি, তাঁরা নিজেদের ও পরিবারকে নিয়ে দুশ্চিন্তায়। অসুখটা হলে হাসপাতালবাস বা বাড়িতে কোয়রান্টিন— দুই-ই মানসিক অবসাদ, ট্রমার জন্ম দিচ্ছে। যাঁদের অল্পবিস্তর হার্টের রোগ আছে, তাঁদের সংক্রমণ বেশি হলে কোভিডের পরে হৃৎপিণ্ডে পরিবর্তন হচ্ছে, পেশি আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তার থেকে হার্টের গোলমাল, হঠাৎ করে মৃত্যুও ঘটেছে। একে পোস্ট কোভিড মায়োকার্ডাইটিস বলা হচ্ছে। ডা. রায় বললেন, কোভিডের পর শ্বাসকষ্ট বা অ্যারিদমিয়া হয়ে হঠাৎ মৃত্যু হচ্ছে। কোভিডে হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত জমে যায়। এই বিষয়টা জানার জন্য ডি-ডাইমার পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল বেশির দিকে থাকলে রক্ত পাতলা করার ওযুধ দিতে হবে। কোভিডের পর হার্ট পুরো ব্লক হয়েও মৃত্যু হয়েছে। দু’-তিন মাস এই আশঙ্কাগুলো থাকে। আর টিকা নিলে ব্লাড থিনার বন্ধ করা ঠিক নয়।

সতর্ক থাকুন, প্রস্তুতি রাখুন

লিঙ্গ, (পঁয়ত্রিশের উপরে পুরুষদের ও চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের বছরে এক বার হার্ট চেকআপ করানো উচিত) বয়স, ধূমপান, পারিবারিক ইতিহাস, প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল— এই সাতটি হৃদ্‌রোগের রিস্ক ফ্যাক্টর। এর পাঁচটা আপনার বিপক্ষে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ওবেসিটি ও আগে আলোচিত রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে পঁচিশের পরেই হার্ট, প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল, কিডনি পরীক্ষা আবশ্যক। নেশা (হার্টের গতি দ্রুত করে দিতে পারে), ধূমপান, তৈলাক্ত ও জাঙ্কফুড থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। রিস্ক ফ্যাক্টর আছে, বুকে ব্যথা করছে, সেই ব্যথা চোয়ালে, বাঁ হাতে, পিঠে ছড়িয়ে যাচ্ছে, ঘাম হচ্ছে, মাথা ঘুরছে— এ সব ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সিঁড়ি ভাঙা বা অন্য স্বাভাবিক কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেলেও খুব সাবধান হোন।

ডা. চাকীর পরামর্শ, চিকিৎসক কারও হার্টের রোগের সম্ভাবনা আছে বললে, বাড়িতে অ্যাসপিরিন ও সর্বিট্রেট রাখুন। দরকারে, হাসপাতালে পৌঁছনো পর্যন্ত একটা অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খাবেন, একটা সর্বিট্রেট জিভের তলায় রাখতে পারেন। অস্বস্তি বোধ হলে বসে বা শুয়ে পড়ুন, সাহায্য চান। প্রথম ত্রিশ থেকে নব্বই মিনিটের, বড়জোর তিন ঘণ্টার (গোল্ডেন আওয়ার) মধ্যে ঠিক চিকিৎসা পেলে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে মানুষকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তাই হাসপাতালে পৌঁছতে দেরি করবেন না। নয়তো হৃৎপিণ্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। ব্রেন বা হার্টের মাসলের এক বার ক্ষতি হলে সম্পূর্ণ নিরাময় খুব শক্ত। জীবনহানি তো বটেই, বেঁচে গেলেও সেই জীবনের মান হয়তো আশানুরূপ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heart Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE