ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাওয়া করোনা-মুক্ত মানুষের প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসা করে ১২ জন করোনা-মুক্ত হয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনোহেমাটোলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য জানালেন, জুলাই মাসের শুরুতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্লাজমা ব্যাঙ্ক গড়ে উঠলেও মে মাস থেকেই এই নিয়ে তাঁরা পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ শুরু করেন। আইসিএমআর-এর গাইডলাইন মেনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া গেছে। প্রসূনবাবু জানালেন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়– গুরুতর উপসর্গ, মাঝারি উপসর্গ এবং মাইল্ড অর্থাৎ অল্প উপসর্গ। এর মধ্যে যাঁরা মাঝারি উপসর্গের নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমিত অর্থাৎ যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে এবং শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ৯০%-এর মধ্যে আছে ও অক্সিজেন দিতে হচ্ছে তাঁদেরই প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: লকডাউনে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছেন পুরুষেরাও
পরীক্ষামূলক ভাবে এই চিকিৎসা শুরু করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাঝারি উপসর্গের রোগীদের প্লাজমা দিয়ে তাঁদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা গেছে। তবে এখনই এই থেরাপি নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি, আরও কিছুদিন পর প্লাজমা থেরাপির সঠিক কার্যকারিতা বোঝা যাবে, বলে মনে করেন প্রসূন ভট্টাচার্য। প্লাজমা ব্যাঙ্কে কোভিডজয়ী রোগীর শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখা থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: খুলে যাচ্ছে জিম ও যোগকেন্দ্র, কী আছে কেন্দ্রের নির্দেশিকায়?
প্রসূনবাবু জানালেন, যাঁদের রক্তের গ্রুপ এ, তাঁদের এ এবং এবি গ্রুপের দাতার প্লাজমা দেওয়া যায়, বি গ্রুপকে দেওয়া হয় বি এবং এবি, এবি গ্রুপের রোগীকে শুধুমাত্র এবি এবং ও গ্রুপের রোগীকে ও, এ, বি এবং এবি গ্রুপের রক্তের মানুষ প্লাজমা দিতে পারেন।
আরও পড়ুন: নিজে থেকে কোভিড টেস্ট করা কতটা জরুরি? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
কারা প্লাজমা দান করতে পারবেন, সে বিষয়ে প্রসূনবাবু জানান,
· কোভিড-১৯ রোগী সেরে ওঠার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই তিনি প্লাজমা দিতে পারবেন।
· করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার ১৪ দিন থেকে ২৮ দিনের মধ্যে প্লাজমা দান করা যায়।
· দাতার বয়স ১৮–৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে গর্ভবতী মহিলা বা সদ্য মা যদি করোনা-মুক্ত হন, তাঁর প্লাজমা দেওয়া মানা।
· নভেল করোনা আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। বাড়িতে থাকা করোনা রোগী প্লাজমা দানের উপযুক্ত বলে বিবেচ্য নন।
· প্লাজমা দাতার ওজন কমপক্ষে ৫৫ কেজি হতে হবে এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হতে হবে ১২.৫ গ্রাম/ ডেসিলিটার।
কীভাবে প্লাজমা নেওয়া হয়
প্লাজমাফেরেসিস নামে এক বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে শরীর থেকে রক্ত টেনে নিয়ে প্লাজমা আলাদা করে রক্তের বাকি উপাদান (রক্তকণিকা ও অন্যান্য) শরীরে ফেরত পাঠানো হয়। সম্পূর্ণ পদ্ধতিটির জন্য সময় লাগে কম বেশি আধঘণ্টা। সংগৃহীত প্লাজমা একটি বিশেষ যন্ত্রে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক বছর সংরক্ষিত রাখা যায়। দরকার অনুযায়ী স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে রোগীকে দেওয়া হয়। প্লাজমা দানের ২৪–৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তা পূরণ হয়ে যায়।