Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
zinc

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনা ঠেকাতে বড় ভূমিকা নেয় জিঙ্ক, কোন কোন খাবারে মিলবে তা?

জিঙ্কের অভাবে শরীরের প্রায় ২০০টি এনজাইম বা উৎসেচকের কাজের অসুবিধা হয় বলে শরীর জুড়ে দেখা দেয় প্রতিক্রিয়া।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খাবার পাতে মন দিন। ছবি: শাটারস্টক।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খাবার পাতে মন দিন। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ১২:৪১
Share: Save:

করোনার ভয়ে সচেতন মানুষ এখন চিন্তিত রোগ প্রতিরোধ নিয়ে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, সুষম খাবার খেলে আর নিয়মনিষ্ঠ জীবন কাটালে আলাদা করে আর কিছুরই দরকার পড়ে না। তবে সে সব নিয়মে ঘাটতি থাকে বলেই সমস্যা বাড়ে। জিঙ্ক বা দস্তা অতীব প্রয়োজনীয় খনিজ। প্রায় প্রতিটি স্বাস্থ্যকর খাবারেই সে আছে। সে সব একটু-আধটু খেলেই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

‘আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ’-এর গাইডলাইন অনুযায়ী ১৪ বছরের বেশি বয়সি ছেলে ও গর্ভবতী মহিলার দরকার দিনে ১১ মিগ্রা জিঙ্ক, মেয়েদের ৮ মিগ্রা ও স্তনপান করানো মায়েদের দরকার ১২ মিগ্রা। কিন্তু হিসেব বলে, এটুকু চাহিদাও পূরণ হয় না প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের। সারা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই এক কথা।

জিঙ্কের অভাবে শরীরের প্রায় ২০০টি এনজাইম বা উৎসেচকের কাজের অসুবিধা হয় বলে শরীর জুড়ে দেখা দেয় প্রতিক্রিয়া। জিঙ্কের অভাবে কোষের কার্যকারিতা কমে, প্রোটিন তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। আর এই মুহূর্তে যা সবচেয়ে বড় চিন্তার, কমজোর হয়ে যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অতএব অন্য আরও পুষ্টির পাশাপাশি নজর দিতে হবে জিঙ্কের দিকেও।

আরও পড়ুন: খ্যাতি-বৈভব-গ্ল্যামারের মধ্যেও অবসাদের ছোবল! কেন মরেন সুশান্তরা...

জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার

• মাংসাশী হলে জিঙ্কের সরবরাহ নিয়ে ভাবনা কম। কারণ, ১০০ গ্রাম কাঁচা মাটনে প্রায় ৪.৮ মিগ্রা জিঙ্ক আছে। আর ৮৫ গ্রাম চিকেনে আছে ২.৪ মিগ্রা। তবে চর্বি বেশি থাকে বলে নিয়মিত মাটন খাওয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে যাঁদের হৃদরোগ. কোলেস্টেরল-প্রেশার-সুগার বা ওবেসিটি আছে। তাঁরা মাটনের পরিবর্তে চিকেন খেতে পারেন। অন্য উপকারের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। তবে দেশি চিকেনে উপকারের পাল্লা ভারী।

• কাঁকড়া বা চিংড়িতেও আছে প্রচুর দস্তা। সবচেয়ে বেশি আছে ওয়েস্টারে, ৫০ গ্রামে ৮.৫ মিগ্রা। তবে আমাদের দেশে এটি খাওয়ার খুব একটা চল নেই।

• নিরামিষাশী হলে খান সব রকম ডাল, রাজমা, ছোলা, বিন, মটরশুঁটি। ৫০ গ্রাম মুসুর ডাল খেলে ২.৪ মিগ্রা জিঙ্ক পাবেন। ৯০ গ্রাম রাজমায় ২.৫ মিগ্রা, ৮০ গ্রাম ছোলায় ১.২৫ মিগ্রা। কল বেরোনো মুগ বা ছোলা খেলে আরও ভাল।

• সকালের আধবাটি ওটস থেকে ১.৩ মিগ্রা। তার সঙ্গে ২৫০ গ্রাম লো-ফ্যাট ইয়োগার্ট থাকলে ২.৩৮ মিগ্রা আর লো-ফ্যাট দুধ থাকলে ১.০২ মিগ্রা।

আরও পড়ুন: আইসিএমআর-এর রিপোর্টের সঙ্গে বাস্তবের ফারাক অনেক

• ব্রাউন রাইস, হোল হুইট ব্রেড বা ঘরোয়া আটার রুটি ও আধুনিক কিনোয়াও জিঙ্কের বড় উৎস।

• মাঝেমধ্যে বাদাম ও বীজ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই। ২৮ গ্রাম কাজু আর কুমড়োর বীজে যথাক্রমে ১.৬ মিগ্রা ও ২.২ মিগ্রা জিঙ্ক আছে। আমন্ড ও অন্যান্য বাদাম ও বীজেও প্রচুর জিঙ্ক থাকে।

• মাঝেমধ্যে মাশরুম খেতে পারেন। লো-ক্যালোরির এই সব্জিতে জিঙ্কও আছে পর্যাপ্ত। ২১০ গ্রামে ১.২ মিগ্রা। উপরি পাওনা ভিটামিন এ-সি-ই ও প্রচুর আয়রন।

• খেতে পারেন পালংশাক, ব্রকোলি ও রসুন।

• ডার্ক চকোলেটের অনেক গুণ। মূল খাবার খাওয়ার পর এক টুকরো খেলে তৃপ্তি যেমন হয়, ওজনও কম থাকে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। ফ্ল্যাভনয়েড ও জিঙ্কের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও তা খুবই কার্যকর। তবে তাতে যত বেশি পরিমাণে কোকা থাকবে, অর্থাৎ তা যত বেশি ডার্ক হবে, তত উপকার। ১০০ গ্রাম ৭০-৮০ শতাংশ ডার্ক চকলেটে জিঙ্ক থাকে ৩.৩ মিগ্রা।

কাজেই সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে জিঙ্ক নিয়ে খুব বেশি ভাবার দরকার নেই। অভ্যাসের সামান্য একটু বদল আনতে পারলেই জিঙ্কের অভাবে অন্তত রোগ প্রতিরোধহীনতায় ভুগতে হবে না। এর পরেও যদি জিঙ্কের জোগান নিয়ে সন্দেহ থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতি দিন একটি করে জিঙ্ক ট্যাবলেটও খেতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Zinc Immunity COVID-19 Foods
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE