Advertisement
০৭ মে ২০২৪
COVID-19

Covid Hero: প্রবাসী ভারতীয়দের এক করে লন্ডন থেকে সাহায্যের হাত বাড়ালেন বাঙালি কন্যা

অর্থসাহায্য ছাড়াও যাবতীয় মেডিক্যাল সাপ্লাই কিনে দেশের নানা অঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন লন্ডনের বাঙালি চিকিৎসক।

চিকিৎসক রিমোনা সেনগুপ্ত।

চিকিৎসক রিমোনা সেনগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র

পৃথা বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২১ ১০:০৩
Share: Save:

ঘন ঘন কলিং বেল বাজছে। কখনও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, কখনও ওষুধ, কখনও পাল্স অক্সিমিটার— একের পর এক জিনিসের ডেলিভারি হচ্ছে। ধীরে ধীরে বসার ঘরটা এমন বোঝাই হয়ে গেল যে পা ফেলার জো নেই! তখন একটি দীর্ঘ তালিকা নিয়ে বসলেন চিকিৎসক রিমোনা সেনগুপ্ত। দেশের কোন রাজ্যে কোনও জিনিসের অভাব সেটা মিলিয়ে সেই অনুযায়ী জিনিস পাঠানো শুরু করলেন লন্ডনবাসী বাঙালি-কন্যা।

রিমোনার জন্ম ব্রিটেনে হলেও খুব ছোটতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতা চলে আসেন তিনি। স্কুলজীবনটা কেটেছিল এই শহরেই। ১৮ বছরের পর তিনি ফিরে যান ইংল্যান্ডে। ডাক্তারি পড়ে এখন তিনি পূর্ব লন্ডনের জেনেরাল প্র্যাক্টিশনার (জিপি)। রিমোনার বাবা কলকাতা শহরের নামকরা চোখের ডাক্তার। তাঁর প্র্যাক্টিস এখানেই। তাই পরিবারের বাকি সদস্যেরা থেকে গিয়েছিলেন কলকাতাতেই। প্রত্যেক বছর একবার করে কলকাতা আসেন রিমোনা। দেশের সঙ্গে তাঁর শিক়ড় কখনওই আলগা হয়ে যায়নি। তাই এপ্রিলের মাঝামাঝি যখন দেখলেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গভীর সঙ্কট ডেকে এনেছে দেশে, তিনি আর চুপ করে বসে থাকতে পারলেন না।

‘‘কী করব তার একটা পরিকল্পনা তৈরি করে ফেললাম। কিন্তু শুধু পরিকল্পনায় তো আর কিছু হয় না! টাকা না থাকলে কোনও লাভ নেই। তাই কী করে ফান্ড জোগাড় করা যায়, সেটা ভাবা শুরু করলাম,’’ বললেন রিমোনা। দিল্লির মেয়ে বন্দনা খুরানা তাঁর লন্ডনের বন্ধু। তাঁর সঙ্গে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছিলেন রিমোনা। প্রথমে ছিল ৪-৫ জন সদস্য। সেই গ্রুপের লিঙ্ক লন্ডনের ভারতীয়দের হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপে পোস্ট করতেই ৩-৪ দিনের মধ্যে সেই গ্রুপ বেড়ে হয়ে গেল ৩০০-৪০০ জন! সকলেই যে যার মতো অর্থ সাহায্য করেছিলেন। তবে রিমোনা বুঝেছিলেন, শুধু একেক জন এগিয়ে এলে যথেষ্ট ফান্ড জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই তিনি লন্ডনের বিভিন্ন অফিসগুলো একটানা মেল পাঠাতে শুরু করলেন, ভারতের জন্য সাহায্য চেয়ে। তাঁর এই কাজে অনেকটাই সাহায্য করেছিল তাঁর মামাতো দাদা অর্চি দাশগুপ্ত। কয়েকদিনের মধ্যেই তার ফল পাওয়া গিয়েছিল।

উত্তর প্রদেশের একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পে পাল্‌স অক্সিমিটার এবং আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছিলেন রিমোনা।

উত্তর প্রদেশের একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পে পাল্‌স অক্সিমিটার এবং আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছিলেন রিমোনা।

পূর্ব লন্ডনে প্রচুর দক্ষিণ এশিয় প্রবাসীদের বাস। রিমোনার রোগীদের মধ্যে অনেকেই ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার। তাঁদের চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখেছিলেন, শুধু মেডিক্যাল না, নানা রকম সামাজিক-মানসিক সাহায্য করতে হচ্ছে রিমোনাকে। ‘‘জিপি হিসাবে আমাদের কাজটা শুধু ডাক্তারি করা নয়। অনেক সময়ই আমরা গার্হস্থ্য হিংসা বা শিশু-সুরক্ষার নানা বিষয়ে জড়িয়ে পড়ি। থেরাপিস্টের মতো সাহায্যও করতে হয়। এই অভিজ্ঞতা ছিল বলে আমি বুঝেছিলাম করোনা-সঙ্কটে শুধু আর্থিক সাহায্য করলেই হবে না, সামাজিক স্তরেও সাহায্য করতে হবে আমাদের,’’ বললেন তিনি।

ভারতে যে কোনও সংস্থাকে ফান্ড বা জরুরি জিনিস পাঠানোর আগে, ভাল করে যাচাই করে নিতেন রিমোনা এবং তাঁর সঙ্গীরা। জরুরি নম্বর, অক্সিজেনের খোঁজ, হাসাপাতালে বেড রয়েছে কিনা, তা-ও যাচাই করে ভারতের করোনা-রোগীদের জানিয়ে দিতেন। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তামিল, গুজরাতি, মরাঠি, বাঙালি— অনেক ভাষার মানুষ ছিলেন। তাই বিপদের সময়ে ভারতবাসীদের সাহায্য করতে ভাষাগত কোনও অসুবিধা হয়নি। বয়স্ক মানুষ যাঁরা প্রযুক্তির সঙ্গে তত পরিচিত নন, তাঁদের যাবতীয় তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে লিখে পাঠাতেন রিমোনার সঙ্গীরা। হাসপাতালে যাওয়ার আগে কোন নথি প্রয়োজন, কীসের প্রিন্টআউট লাগবে, কার কী ধরনের মেডিক্যাল রেকর্ড— সবই লিখে পাঠাতেন তাঁরা। যাতে তাড়াহুড়োর সময় চট করে সব কিছু পেয়ে যান রোগীরা। ‘‘অনেক হয়তো জানেন না হাসপাতালে ভর্তির সময় কী প্রয়োজন। অনেকে ভুলে যান, তাঁদের কী ধরনের রোগ রয়েছে। মিউকরমাইকোসিসের ওষুধ কিনতে গেলেও কিন্তু কিছু নথির প্রয়োজন। আমার মনে হয়েছিল এই তথ্যগুলো দিয়ে সাহায্য করতে পারলে সাধারণ মানুষের বিপদে অনেকটা সুবিধে হবে,’’ বললেন রিমোনা।

রিমোনার ফান্ড জুন মাসের গোড়ায় বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও এতজন সাহায্য পাঠাচ্ছেন যে তা বন্ধ করা যায়নি। তাই এখন ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণের কাজে মন দিয়েছেন রিমোনা। কী ভাবে তাঁদের সাহায্য করা যায়, সেই ব্যবস্থায় ব্যস্ত তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE