Advertisement
E-Paper

স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে...

হাতে তৈরি চুম্বক, বিদেশের ট্রেনের টিকিট, ভাঙা কাচ আর নারকেল দড়ি দিয়ে তৈরি একটা আয়না... এ সব দিয়েই সেজে উঠেছে অন্দরমহল। বাড়ির প্রত্যেকটা কোণেই ধরা পড়ে গৃহকর্ত্রীর সৃজনশীল মনহাতে তৈরি চুম্বক, বিদেশের ট্রেনের টিকিট, ভাঙা কাচ আর নারকেল দড়ি দিয়ে তৈরি একটা আয়না... এ সব দিয়েই সেজে উঠেছে অন্দরমহল।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০১:২১
পুরনো ট্রাঙ্কই এখন স্টেটমেন্ট পিস

পুরনো ট্রাঙ্কই এখন স্টেটমেন্ট পিস

শিশুসাহিত্য বা কমিক নভেল যেমন হয়, খুব সহজে যাকে ছোঁয়া যায়, বারবার পড়া যায়, ভার নেই কিন্তু প্রাণ আছে... এ বাড়িও অনেকটা সে রকমই। সাজানোর আড়ম্বর নেই, প্রাণের পরশ আছে। ভাবনা আছে। বাড়ির ছোট ছোট জিনিসেও যত্নের ছোঁয়া। একটা বেড়ালের মতো ছোট্ট প্লান্টার যাতে কোনও গাছ হয়তো রাখা যায় না, সেটাও সযত্ন সাজানো রয়েছে তাকের উপরে। কবেকার পুরনো এক ট্রাঙ্ক, যেটা হয়তো অনেকেই খাটের তলায় আড়াল করে রাখেন, সেটাই রুপোলি, সোনালি রঙে রাঙিয়ে স্টেটমেন্ট পিসে পরিণত করা হয়েছে। বসার ঘরে সেন্টার টেবল হিসেবে দিব্যি চোখ টানছে। একটা পুরনো কাবার্ডকে ভিনাইল পেন্টিং করে তৈরি করে ফেলেছেন বেডসাইড টেবল। আর এ সবই সময় নিয়ে যত্ন করে তৈরি করেছেন অনন্যা ইন্দু রায়।

অনন্যার কথায়, ‘‘বিয়ের পর থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। ছিলাম কলকাতায়, নিজের চাকরি ছেড়ে স্বামীর কাজের সূত্রে পাড়ি দিলাম মুম্বই। সেখান থেকে বেঙ্গালুরু। এখানে এসেই মনে হল এ বার থিতু হব। নতুন ফ্ল্যাট কিনলাম। কিন্তু তার দিনকয়েক পর থেকেই শুরু হল লকডাউন। ফ্ল্যাট সাজানোর দায়িত্বও এসে পড়ল কাঁধে। বর বলল, ক্রিয়েটিভ কিছু তাঁর দ্বারা হবে না। কিন্তু সে জোগাড় করে দেবে। ব্যস! আমি হয়ে গেলাম রাজমিস্ত্রি আর বর হেল্পার। দেওয়াল রং করা, লাইট লাগানো, আসবাবের ডিজ়াইন, পালিশ... সব নিজে হাতে করেছি। এখন যখন গোছানো বাড়িটা দেখি খুব আনন্দ হয়। মনে হয় প্রত্যেকটা কর্নার কত আপন।’’

অনন্যার রঙের প্রতি খুব টান। পুরো বাড়িটাই সাজিয়েছেন বোহো কনসেপ্টে। কোনও দিন আঁকা শেখেননি। কিন্তু তাঁর মায়ের খুব শখ ছিল ছবি আঁকার। ছোটবেলায় দুই ভাই-বোন পাশে বসে দেখতেন সেই ছবি আঁকা। আর এখন নিজেই হাতে তুলে নিয়েছেন রং-তুলি আর গুরু বানিয়েছেন ইউটিউবকে। গাছও তাঁর খুব প্রিয়। গাছগুলো তিনি নিজেই প্রপাগেট করেছেন, কোনওটা আবার রাস্তা থেকে তুলে এনে লাগিয়েছেন। ‘‘গাছ থাকলে বাড়িটা প্রাণবন্ত লাগে। একা থাকলেও একাকিত্ব টের পাওয়া যায় না,’’ বলছিলেন তিনি।

নিজে হাতে ম্যাক্রাম বুনেও ঘরের আসবাব কভার, প্লান্টার কভার তৈরি করেছেন অনন্যা। শোয়ার ঘরের দেওয়ালের আয়নাও নিজে হাতে তৈরি করা। পছন্দ পেন্টিং। কিন্তু তার দাম অনেক। তাই নিজে এঁকে তা দিয়ে সাজান ঘরের দেওয়াল। অনন্যা বলছিলেন, ‘‘বাড়ি সাজানোটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার মনে হয় সকলের। আমারও মনে হত। প্রথম প্রথম একটা গাছ কিনতে গিয়ে দেখতাম আকাশছোঁয়া দাম। একটা কুশন কভার হয়তো কয়েক হাজার টাকা। তখন ভাবলাম, আমি নিজেই তৈরি করে নেব। শুরু হল একটা একটা করে। তার পর যেন নেশা চেপে গেল। তৈরি করেই গেলাম... কুশন কভার, পটচিত্র, আয়না, ম্যাগনেট। সব বানাই। এটা আমার প্যাশন।’’

তবে দেশবিদেশ থেকে সুভেনির সংগ্রহ করার শখও আছে তাঁর। এতে বেড়ানো শেষ হয়ে গেলেও রেশ থেকে যায়। সেই দেশটাও ধরা থাকে চার দেওয়ালের মধ্যে। ‘‘ইস্তানবুল থেকে কেনা ছোট্ট লন্ঠন জ্বালিয়ে, টার্কিশ ডিনার প্লেটে খাবার সাজিয়ে যখন বসি, বর কাব্যি করে। মনে হয় যেন সেই দেশেই ডিনার সারছি,’’ মজা করে বলছিলেন গৃহকর্ত্রী। বিদেশি টিকিট, মুদ্রা, স্ট্যাম্পও তিনি বাঁধিয়ে রাখেন দেওয়ালে। বাড়ির কোনও কোণ কাফের মতো, কোনওটা আবার গাছ দিয়ে তৈরি গ্রিন কর্নার। লকডাউনে বাড়ির মধ্যেই যেন টুরিস্ট স্পট।

তবে অনন্যার মতে, নিজে হাতে ঘর সাজাতে যেমন ধৈর্য লাগে, তেমনই ওয়েস্টও সংগ্রহে রাখতে হয়। আলো এই বাড়ির অন্যতম সঙ্গী। বিভিন্ন রকম আলো দিয়ে ঘরে অ্যাম্বিয়েন্স তৈরি করাও তাঁর শখ। দিনে ঘর যেমন আলোয় ভরে থাকে, রাতের অন্ধকারেও বাড়ি তেমনই উজ্জ্বল রাখতে ভালবাসেন অনন্যা।

‘‘ছোটবেলায় মাকে দেখতাম, চাদরটা পরিপাটি করে টেনে গুঁজে দিতেন। বসার ঘরটা একটু আলাদা যত্ন নিয়ে সাজাতেন। সেটুকু ভেবেই শুরু করেছিলাম। কিন্তু ক’দিন আগেই জলের লাইন ঠিক করতে আসেন দু’জন। ওরা কাজ সেরে বলল, ‘দিদি, আপনার বাড়িটা কী সুন্দর! একটা ছবি তুলব?’ এটাই আমার প্রাপ্তি,’’ বললেন অনন্যা।

নিজে হাতে তৈরি সব জিনিসে যে মায়া, তা-ই যেন জড়িয়ে রেখেছে অনন্যার সংসার।

Home Decor Decoration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy