সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে কনস্টিপেশন হয় আর পাইলস বা অর্শের অন্যতম কারণ এটাই।
নতুন দিনের শুরুতে বেশির ভাগ মানুষেরই ঘুম ভাঙে খুশি মনে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় এক কোটি বা তারও বেশি মানুষের কাছে সকাল আসে কার্যত বিভীষিকা নিয়ে। প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে এঁরা ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকেন। কেননা, তাঁরা পাইলস বা অর্শ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। জেনে রাখুন, আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ পাইলসের চিকিৎসা করান। আর চিকিৎসা করানোর সুযোগ পান না বা হাতুড়ের কাছে যান এমন রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এ দেশে প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই এক জন অর্শ নিয়ে কষ্ট পান। এই অসুখ কিন্তু বলতে গেলে নিজেদেরই ডেকে আনা। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে কনস্টিপেশন হয় আর পাইলস বা অর্শের অন্যতম কারণ এটাই।
ক্রনিক ডায়ারিয়া হলেও পাইলস হয়
শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যই দায়ী নয়, ক্রনিক ডায়ারিয়া হলেও অর্শের ঝুঁকি বাড়ে। বাড়তি ওজন এই অসুখের আর এক অন্যতম কারণ। এ ছাড়া যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ বাথরুমে বসে চেষ্টা করেন তাদেরও পাইলসের আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া বংশে থাকলে হেমারয়েডের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। পাইলসের ডাক্তারি নাম হেমারয়েড। যারা বেশি ওজন তোলেন তাঁদেরও এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আর হবু মায়েদের নানান শারীরিক বদলের সময় পাইলসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে একটু নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করলে রোগ বাড়তে পারে না।
আরও পড়ুন: উচ্চতা বাড়ুক ব্যায়ামে
বাড়তে দেবেন না
গ্রেড-১ থেকে গ্রেড–৪, মোট চারটি স্টেজ আছে পাইলসের। শুরুতে সতর্ক হলে রোগটা বাড়তে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্কোচবশত প্রথমে অসুখটা চেপে রাখা হয়। ফলে তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করা যায় যে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান পাইলসকে (ডাক্তারি নাম হেমোরয়েড) জব্দ করতে পারে সহজেই। কিন্তু, অসুখ বেড়ে তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সার্জারি করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। ডিজিটাল রেক্টাল এগজামিনেশন ও প্রক্টোস্কোপ দিয়ে অর্শরোগ নির্ণয় করা হয়।
আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ পাইলসের চিকিৎসা করান
লেসার সার্জারি করে রোগমুক্তি
শল্য চিকিৎসার জনক সুশ্রুতের সময় থেকেই অর্শ সারানোর জন্য অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেওয়া হত। নানান বিকল্প পদ্ধতির সাহায্য নিতে গিয়ে অনেকেই অর্শের জ্বালাযন্ত্রণা সমেত অসুখটা বাড়িয়ে ফেলেন। প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ওষুধ আর লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করে রোগের বাড় আটকে দেওয়া যায়। কিন্তু বেড়ে গেলে রাবার ব্যান্ড লাইগেশন ও ইঞ্জেকশনের সাহায্য নেওয়া হয়। এই পদ্ধতি সেই সুশ্রুতের আমল থেকে চলে আসছে। এর পর এল অর্শকে বাদ দেওয়ার শল্য চিকিৎসা। এতে অসুখ সারলেও মল ধরে রাখার সমস্যা হয়। আর সেরে উঠতে অনেক সময় লাগে। তবে সাম্প্রতিক কালে ডপলার গাইডেড হেমারয়েড আর্টারি লাইগেশন (DGHAL)-এর সাহায্যে পাইলসের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় সহজেই। সার্জারির কথা শুনে ভয়ে রোগ পুষে রাখবেন না।
আরও পড়ুন: অ্যান্টিহিরো অ্যান্টিবায়োটিক
কী করবেন কী করবেন না
অনেক অসুখের মূলেই আছে ভুল খাওয়াদাওয়ার অভ্যেস। অনেকেই শাকসব্জি প্রায় খান না বললেই চলে। আবার অনেকের জল খেতে অনীহা।
দিনে ৩–৩.৫ লিটার জলপান দরকার। শীতের সময় কিছুটা কম হলেও চলে। রোজকার ডায়েটে রাখুন পাঁচ রকমের শাকসব্জি। আলু-পেঁয়াজ ছাড়া সময়ের সব রকমের সব্জি খেতে হবে। ঢ্যাঁড়শ কনস্টিপেশন কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাঁরা নিয়ম করে দুবেলা ঢ্যাঁড়শ খেলে সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। পালংশাক, নটেশাক সমেত সময়ের শাক থাকুক মধ্যাহ্নভোজনে। কুমড়ো, লাউ, পটল-সহ সময়ের সব্জি খেতে হবে। খোসা সমেত সব্জি খাওয়া উচিত। শসা খান খোসা সমেত। কলা, পেয়ারা, লেবু, আম, জাম-সহ বেশির ভাগ ফলেই ফাইবার আছে। নিয়ম করে দিনে ৩/৪টি ফল খেলে ভাল হয়। বাথরুমে গিয়ে অনেক ক্ষণ বসে চাপ দেবেন না। এতে সমস্যা বাড়ে। নিয়মিত ব্যায়াম করে ওজন ঠিক রাখুন। বাড়তি ওজন পাইলসের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। ভারী জিনিস তুলবেন না। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিতে হবে। মদ্যপানে সমস্যা বাড়ে। ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। কাবাবের নামে ঝলসানো মাংস খাবেন না। ময়দার খাবার খেলে সমস্যা বাড়ে। চাউমিন ময়দায় তৈরি হয়। মোমোও তাই। সুতরাং এই ধরনের খাবার বাদ দিন। কেক, বিস্কুট মাত্রা রেখে খান। পরিবর্তে খই, ওটস খেতে পারেন। কনস্টিপেশন হলে তা সারাবার চেষ্টা করুন। পাইলস হলে এটা ওটা করে সময় নষ্ট না করে শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy