Advertisement
০২ মে ২০২৪
Covid Protocol

ঢেউ আসার আশঙ্কা কম, তবু বিধি মানায় জোর চিকিৎসকদের

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ বা পরামর্শ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারও করোনার চিকিৎসার পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।

 চিকিৎসকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, সুরক্ষা-বিধি ঠিক মতো মেনে চললে করোনাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

চিকিৎসকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, সুরক্ষা-বিধি ঠিক মতো মেনে চললে করোনাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫৩
Share: Save:

সরকারি কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি এখনও। যে কারণে করোনা-বিধি মেনে চলার কোনও চেষ্টাও নেই সিংহভাগ জনতার মধ্যে। মাস্ক পরা বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো কোনও নিয়মই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যা দেখে অনেকেরই আশঙ্কা, বিধি না মানার এই রন্ধ্রপথেই ফের রাজ্যে করোনা-ঢেউ আছড়ে পড়বে না তো?

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে করোনা নিয়ে সতর্কবার্তা মিলতেই এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চিকিৎসকেরাও একই প্রশ্ন করছেন, তবে সেই সঙ্গে তাঁরা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, সুরক্ষা-বিধি ঠিক মতো মেনে চললে করোনাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। শহরের এক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনেক আগে থেকে সকলকে সতর্ক করা হচ্ছে। সেই মতো যদি সতর্ক হওয়া হয়, তা হলে করোনার ঢেউ বঙ্গে প্রবেশ করলেও বাড়াবাড়ি হবে না।’’

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ বা পরামর্শ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারও করোনার চিকিৎসার পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে সমস্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। একই ভাবে প্রতিটি জেলাকে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন। কিন্তু রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা-বিধি মানার প্রবণতা একেবারে শূন্যে বলেই সকলের পর্যবেক্ষণ। বড়দিনের পরে এ বার বর্ষবরণের উৎসবের অপেক্ষায় শহর থেকে জেলা। সেই উদ্‌যাপনের বাঁধভাঙা ভিড়ে করোনা-বিধি না থাকায় আবার বিপদ হানা দেবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তাই, চিকিৎসকেরাও জানাচ্ছেন, সব কিছুই চলতে পারে। কিন্তু তা করোনা-বিধি মেনে।

ইতিমধ্যেই রাজ্যে আসা এক বিদেশি যুবতী এবং ব্যাঙ্কক থেকে আসা এক যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। কিন্তু সেগুলি ‘বিএফ.৭’ ভ্যারিয়েন্ট কি না, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। যদি তা হয়, তা হলে রাজ্যের পক্ষে বিষয়টি উদ্বেগের। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান-সহ কয়েকটি দেশে ওমিক্রনের তুতো ভাই ‘বিএফ.৭’ ভ্যারিয়েন্ট এখন খেল দেখাচ্ছে। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, তুতোভাই হওয়ায় নতুন ভ্যারিয়েন্টটির রোগ সৃষ্টির ধরন ও সামগ্রিক ভাবে রোগের লক্ষণ প্রকাশ অনেকটা ওমিক্রনের মতো। কিন্তু মিউটেশনের কারণে এফ স্পাইক প্রোটিনের ৩৪৬তম স্থানে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ‘আর্জিনিন’ পরিবর্তিত হয়ে এখন হয়েছে ‘টাইরোসিন’। সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘এর ফলে এই ভ্যারিয়েন্টটি সাংঘাতিক সংক্রামক হয়ে উঠেছে। যে কোনও ওমিক্রন প্রজাতির ভাইরাসের আর-নট ভ্যালু যেখানে ৫, সেখানে এর ক্ষেত্রে ১০-১৮। অর্থাৎ, এক জন মানুষ ১০-১৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন।’’

আবার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, দেশে আগে কখনও হানা দেয়নি, এমন নতুন কোনও স্ট্রেন যদি তাৎপর্যপূর্ণ ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখনই নতুন করে পুনরায় ঢেউ আসার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘চিনের যে যে স্ট্রেন এই মুহূর্তে সেখানে ত্রাসের সৃষ্টি করছে, তা কিন্তু ভারত-সহ বিশ্বের বাকি অনেক দেশেই এত দিন চোখ রাঙিয়েছে। সুতরাং, ওই স্ট্রেন থেকে নতুন করে দেশে মারাত্মক আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া কঠিন। তাই অযথা আতঙ্কিত না হলেও প্রত্যেকের সাবধানে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়।’’

বিএফ.৭ ভ্যারিয়েন্টটি অতি দ্রুত ছড়ালেও তার জেরে মৃত্যু-হার বাড়বে না বলেই মনে করছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কোভিড চিকিৎসার নোডাল অফিসার, চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের এখানে প্রচুর মানুষ প্রতিষেধক নিয়েছেন। এ ছাড়াও, ওমিক্রনে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে একটা হার্ড ইমিউনিটি রয়েছে। তাই ঝড় আসার আশঙ্কা খুবই কম। আসলে একটা ঢেউ আসতে পারে। তাই এখন করোনা-বিধি সকলকে মেনে চলতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Protocol COVID Rules COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE