Advertisement
E-Paper

এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যু, মহানগর তবু প্রস্তুতিহীন

উত্তরবঙ্গের পর দক্ষিণবঙ্গেও এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত সল্টলেক ও কলকাতার হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা দু’জনেই বসিরহাটের বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩২

উত্তরবঙ্গের পর দক্ষিণবঙ্গেও এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত সল্টলেক ও কলকাতার হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা দু’জনেই বসিরহাটের বাসিন্দা। দু’জনই অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে (এইএস) ভুগছিলেন। এবং এই দু’টি ক্ষেত্রেই সরকারি হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ, আইটিইউ-তে শয্যার অভাবে রোগীদের ভুগতে হচ্ছে। অভিযোগ, এর ফলে এনসেফ্যালাইটিসে যে ধরনের চিকিৎসা দরকার তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। কিছু দিন আগেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ট্রপিক্যাল স্কুল অব মেডিসিনে একটি শিশুর চিকিৎসা নিয়ে রীতিমতো সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। তাকে মেডিক্যাল থেকে ট্রপিক্যালে স্থানান্তরিত করার পরে ভেন্টিলেটরের দরকার হয়েছিল। মেডিক্যাল থেকে ভেন্টিলেটর আনাও হয়। পরে দেখা যায় সেটি খারাপ।

অনেকটা একই ধরনের ঘটনা এ বার ঘটেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। টুম্পা সাহা (২৭) নামে এক তরুণীর সেখানে এইএস-এর চিকিৎসা চলছিল। ১২ অগস্ট থেকে তাঁর জ্বর শুরু হয়। আর জি করে তাঁকেও ভেন্টিলেটর দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। ওই তরুণীকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। একই সময়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এইএস-এ আরও একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাঁর ক্ষেত্রেও যথাযথ চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া, এনসেফ্যালাইটিস মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালগুলির ভূমিকা নিয়েও সন্তুষ্ট নন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেখান থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য ঠিকঠাক সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, “বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। ঠিকঠাক তথ্য না-পাঠালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে এখন দু’টি শিশু জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই) নিয়ে ভর্তি রয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জিতেন্দ্রপ্রসাদ নামে এক যুবকেরও জেই-র চিকিৎসা চলছে। গত ১১ অগস্ট ওই যুবকের দেহে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। ওই যুবকের মা জানিয়েছিলেন, জুন মাসের প্রথম দিকে জিতেন্দ্র দিন কুড়ির জন্য বিহারের আরা জেলায় দেশের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁর জ্বর, খিঁচুনি শুরু হয় ২৬ জুলাই থেকে। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন ওই যুবক বিহারের আরাতেই জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, অসুস্থ অবস্থায় বিহারের আরা থেকে ১৫ হাজার টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া দিয়ে ওই যুবককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের ক্ষেত্র কলকাতার বাইরে। তা-ও ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি এ বার এনসেফ্যালাইটিস নিয়েও মানুষকে সচেতন করা হবে বলে জানান তিনি। তবে জেই নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যে ৬৯৫ জন এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু উত্তরবঙ্গেই মৃতের সংখ্যা ১০৮। আর জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মারা গিয়েছেন ৪৮ জন।

মহানগরীতে জেই এবং এইএস রোগীর চাপ বাড়াতে থাকলেও, এমনকী জেই রোগীর মৃত্যুর পরেও কলকাতা পুরসভা এত দিন বিষয়টিকে আমল দিতে চায়নি। তবে এখন প্রায় রোজই জেলাগুলি থেকে মহানগরের হাসপাতালগুলিতে এইএস রোগী আসতে থাকায় নড়েচড়ে বসেছে তারা। শনিবার অতীনবাবু জানিয়েছেন, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে সতর্কতার পাশাপাশি এ বার জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়েও পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সচেতনতা বাড়ানোর অভিযান শুরু করা হবে।

তবে কলকাতায় শুয়োর ধরার অভিযান হঠাৎ করেই গতিহীন হয়ে পড়েছে। পুর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রতি দিন বিকেল সাড়ে চারটেয় শুয়োর ধরার অভিযান কতটা কার্যকর হচ্ছে তা নিয়ে বৈঠক করবেন পুরকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার থেকে তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

encephalitis basirhat kolkata medical college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy