আটা, ময়দার বিকল্প হিসেবে নানা ধরনের দানাশস্যের ব্যবহার বেড়েছে এখন স্বাস্থ্যসচেতন বাঙালির রান্নাঘরে। গোটা দানাশস্য যত পরিশোধিত বা রিফাইনড হবে, ততই তার মধ্যকার ফাইবার ও অন্যান্য খনিজের পরিমাণ কমে যাবে। তাই প্রক্রিয়াজাত শস্যের বদলে হোল গ্রেন ফ্লাওয়ার বেছে নিচ্ছেন এখন অনেকেই।
স্বাস্থ্যের খাতিরে কার্বোহাইড্রেটকে চিরতরে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া মোটেই উচিত নয়, জানাচ্ছে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন। তবে বেছে নেওয়া উচিত কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। সাদা আটা বা ময়দার বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া যায় রাগি, ওটস, মিলেট, জোয়ার, বাজরা, কিনোয়া, ফ্ল্যাক্সসিড ফ্লাওয়ার। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এই বিকল্পগুলির জুড়ি নেই।
বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে গোটা দানাশস্য থেকে তৈরি নয়, এমন আটার ব্যবহার। আমন্ড, কোকোনাট, রাঙালু, কলা, ছোলার মতো উপকরণ দিয়েও নন গ্রেন ফ্লাওয়ার বা আটা তৈরি করা যায়। এর কোনটিতে কী উপকার, জেনে নেওয়া যাক।
- ওটসের আটা: ওটস গুঁড়িয়ে নিয়ে সহজেই তৈরি করে ফেলা যায় ওটসের আটা। জলখাবারে দুধ দিয়ে, রুটি, প্যানকেক, চিল্লা, ইডলি, উপমা তৈরি করে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে এটি। ফাইবারের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। ওটসে থাকা বেটা গ্লুকান কোলেস্টেরল কমাতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- মিলেটের আটা: সারা উত্তর ভারতে রাগি-জোয়ার-বাজরার আটা খাওয়ার চল বেশি। এ ধরনের আটা প্যাকেটজাত অবস্থায় বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। রোজকার রুটি, পরোটার জন্য সাদা আটা বা ময়দার পরিবর্ত হিসেবে বেছে নিতে পারেন এগুলি। গ্লুটেনহীন, ক্যালশিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ তো বটেই, হজমও হয় তাড়াতাড়ি।
- কিনোয়ার আটা: হাই প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর এই শস্যে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসও থাকে। কিনোয়ার আটা দিয়ে রুটি, প্যানকেক, মাফিন বানানো যেতে পারে। স্বাদে ও বর্ণে অন্যান্য আটার চেয়ে বেশ আলাদা এটি।
- তিসির আটা: তিসির বীজ গুঁড়ো করে নিলেই তৈরি ফ্ল্যাক্সসিড ফ্লাওয়ার। হজমক্ষমতা বৃদ্ধি, হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে তিসির জুড়ি নেই। বাজারে ফ্ল্যাক্সসিড ব্রেড পাওয়া যায়। এ ছাড়া স্মুদি, স্যালাড ড্রেসিং কিংবা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে এটি খাওয়া যেতে পারে।
গ্লুটেনহীন আটার ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের নন গ্রেন ফ্লাওয়ার। মূলজাতীয় আনাজ, বাদাম, ছোলার ডাল, নারকেলের মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় এই ধরনের আটা। বানানো যায় স্বাদু খাবারও।
- কাঠবাদামের আটা: আমন্ড ফ্লাওয়ার গ্লুটেনহীন এবং প্রোটিন, ভিটামিনে সমৃদ্ধ হলেও এতে ক্যালরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। তাই পরিমিত ব্যবহার করাই ভাল।
- ছোলার বেসন: ছোলা, চানা দিয়ে তৈরি বেসনের ব্যবহার বাঙালির রান্নাঘরে খুবই জনপ্রিয়। রোজকার খাবার ছাড়াও নানা মুখরোচক পদ তৈরি করা যায়।
- নারকেলের আটা: কোকোনাট ফ্লাওয়ার প্রধানত ব্যবহার করা যায় বেকিংয়ের উপকরণ হিসেবে। লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত এই আটা হজম করতে সময় লাগলেও এটি স্বাস্থ্যকর।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়েতুলতে বিকল্প হোল গ্রেন বা নন-গ্রেন আটার ব্যবহার শুরু করতে পারেন ধীরে ধীরে। কিছু ক্ষেত্রে স্বাদেরসঙ্গে মানিয়ে নিতে হলেও স্বাস্থ্য থাকবে অটুট।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)