Advertisement
E-Paper

রান্নার নানা পর্বের নানা ভুল শোধরাবেন কী করে?

ধাপে ধাপে এত ভুল হয় যে শেষমেশ খাবার যখন পাতে পৌঁছয়, তাতে পুষ্টি যতটা থাকার কথা, তা তো থাকেই না, উল্টে হাজির হয় কিছু বিপদ৷

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ১৭:২৩
ভুল শুধরে নিন এখনই।

ভুল শুধরে নিন এখনই।

আমাদের রান্নার পর্ব শুরু হয় ভুলের হাত ধরে৷ সব্জি কাটা থেকে যার সূত্রপাত৷ এর পর ধাপে ধাপে এত ভুল হয় যে শেষমেশ খাবার যখন পাতে পৌঁছয়, তাতে পুষ্টি যতটা থাকার কথা, তা তো থাকেই না, উল্টে হাজির হয় কিছু বিপদ৷ শুরু করি প্রথম থেকে৷

সব্জি কাটা ও ধোওয়া

আমরা সচরাচর ভাল করে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট করে কেটে রান্নার আগে পর্যন্ত সব্জি ভিজিয়ে রাখি জলে৷ যে সব সব্জির খোসা ছাড়াতে হয় না, তাদেরও কেটে ভিজিয়ে রাখার চল আছে৷ উদ্দেশ্য, ময়লা ও কীটনাশকের বিষ মুক্ত করা৷ বিষাক্ত রংও এ ভাবে কিছুটা দূর হয়৷ সঙ্গে দূর হয় ভিটামিন বি এবং সি–এর প্রায় ৪০ শতাংশ৷

ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘বিষাক্ত রং ও কীটনাশকের দৌলতে ত্বকের রোগ থেকে শুরু করে আরও এমন সব অসুখবিসুখ হতে পারে যে ভিটামিনের সঙ্গে কিছুটা সমঝোতা করে হলেও ধোওয়া–ধুয়িটা ঠিক করে করা দরকার৷ সব্জি কাটার আগে ভাল করে ধুয়ে জলে ভিজিয়ে রাখা উচিত৷ তাতে কিছুটা ভিটামিন গেলে যাবে৷ তবে সব্জি বড় করে কাটলে, কাটার পর না ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম মেনে রান্না করে নিলে ভিটামিনের অনেকটাই রক্ষা পায়৷ ফাইবার ও পুষ্টির কথা ভাবলে সব্জির খোসা না ছাড়ানোই ভাল৷ ডায়াবিটিস, হাই কোলেস্টেরল বা মেদবাহুল্যে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য তো বিশেষ করে৷ কিন্তু তা করা যায় না এই সব রং ও কীটনাশকের জন্যই৷ তবে পাতলা করে খোসা ছাড়াতে পারেন, যাতে দু’–দিকই রক্ষা করা যায়৷’’

সব্জি কাটা ও ধোওয়ার দিকে নজর দিন।

আরও পড়ুন: খেলা খেলা দিয়ে শুরু​

তেলের ধোঁয়া

আমাদের ধারণা, গরম কড়াইতে তেল দেওয়ার পর যত ক্ষণ না ধোঁয়া ওঠে, ফোড়ন বা মাছ–সব্জি দিতে নেই৷ তা না হলে রান্নায় কাঁচা তেলের গন্ধ থেকে যায়৷

এটা ভুল ধারণা! প্রতিটি তেলের নির্দিষ্ট স্মোক পয়েন্ট থাকে, অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় তেল ভেঙে গিয়ে ধোঁয়া ওঠে৷ এই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যায় উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিড৷ ভাঙে ভিটামিন৷ তৈরি হতে শুরু করে ফ্রি–র‌্যাডিক্যাল্স নামের ক্ষতিকর উপাদান৷ হাই কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, অ্যালঝাইমার, ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগের মূলে যার নির্ভুল হাত আছে৷

ধোঁয়ার মাঝে রান্না করলেও বিপদ৷

এই ধোঁয়ার মাঝে রান্না করলেও বিপদ৷ কারণ ধোঁয়ার সঙ্গে শরীরে ঢ়োকে ফ্রি–র‌্যাডিক্যাল্স৷ তার হাত ধরে খুলে যায় হৃদরোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সার ও আরও অনেক রোগের দরজা৷ হাঁপানি রোগীর সমস্যা বাড়ে৷

তাই কড়াই গরম করে তেল দিন৷ তেলের ধোঁয়া বেরনোর আগেই, ফোড়ন–সব্জি–মাছ, যা দেওয়ার দিয়ে, ঢাকা দিয়ে দিন৷ ক্ষতিকর ধোঁয়ার হাত থেকে শরীর বাঁচবে৷ পুষ্টি ভাঁড়ারও থাকবে অটুট৷

ছাঁকা তেলে ভাজা খাবার থেকে সাবধান।

ভাজার সমস্যা ও সমাধান

ছাঁকা তেলে ভাজলে খাবারের ভিটামিন ও প্রোটিনের পরিমাণ কমে৷ বাড়ে ক্যালোরি, ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট, ওজন, অপুষ্টি৷ পাল্লা দিয়ে বাড়ে হাইপ্রেশার–কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিজ, হৃদরোগ, স্ট্রোকের আশঙ্কা৷

পোড়া তেলে ভাজলে অ্যালডিহাইড নামে জৈব রাসায়নিকের প্রভাবে ডায়াবিটিজ, হাই প্রেশার, লিভারের রোগ, অ্যালঝাইমার, পার্কিনসনিজমের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়৷ ভাবছেন, দামি তেলে বিপদ কম? ভুল! একমাত্র নারকেল তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি বলে বহু ক্ষণ উচ্চ তাপে গরম করলেও তা মোটামুটি অবিকৃত থাকে ও বিপদ কম হয়৷

তা হলে উপায় একমাত্র নারকেল তেল? পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল বললেন, ‘‘তার দরকার নেই৷ স্বাদের খাতিরে সপ্তাহে এক–আধ বার অন্য তেলে ভাজা ভাজা–বড়া অল্প করে খেতেই পারেন৷ তবে স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে ছাঁকা তেলে না ভেজে কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে ঢাকা দিয়ে ভাজুন, যাকে বলে শ্যালো ফ্রাই৷ মুচমুচে ভাজা খেতে চাইলে কিনে নিন এয়ার ফ্রায়ার৷ এতে বিনা তেলে আলু, বড়ি ইত্যাদি সুন্দর ভাজা যায়৷’’

আরও পড়ুন: সহজ হোক সম্পর্ক​

বার বার গরম হতে হতে পোড়া তেলে ক্ষতির মাত্রা বাড়ে৷

পোড়া তেল কি ফেলে দিতে হবে

রাস্তাঘাটের কথা না হয় বাদই দিলাম৷ ঘরেও তো অনেক সময় কড়াই কাছিয়ে তেল রেখে দেওয়া হয় পরের রান্নার জন্য৷ বা যে তেলে মাছ–সব্জি বা অন্য কিছু ভাজা হয়, পরের রান্নাগুলি হয় সেই তেলেই৷ বার বার গরম হতে হতে পোড়া তেলে ক্ষতির মাত্রা বাড়ে৷ বাড়ে বিপদ৷

তা হলে উপায়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, পোড়া তেল আর এক বার ব্যবহার করা যাবে কি না তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর৷ যেমন, কোন তেলে কত তাপমাত্রায় ভাজা হয়েছে, তেল কত ক্ষণ গরম হয়েছে ও ঠান্ডা হওয়ার পর কী ভাবে তাকে রাখা হয়েছে৷ স্যাফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সর্ষে, তিল ও নারকোল তেল উচ্চ তাপেও মোটামুটি ঠিক থাকে৷ কাজেই মাঝারি তাপে অল্প সময় ধরে ডিপ ফ্রাই করলে পরে আর এক বার সেই তেলে রান্না করতে পারেন৷ তবে তাকে ছেঁকে রাখতে হবে৷ তেল ঘোলা হয়ে গেলে বুঝতে হবে তাতে ক্ষতিকর জৈব উপাদান আছে৷ তখন তা ফেলে দেওয়াই ভাল৷

ছবি: শাটারস্টক।

Cooking Kitchen Health Vegetables
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy