শীতে একটু ঠান্ডা লাগলেই যদি সর্দি–কাশিতে কাবু হন, ঋতু পরিবর্তনের আঁচ যদি সকলের আগে আপনার উপরই এসে পড়ে, কিংবা একটুতেই অসুখে সংক্রমিত হন তবে বুঝতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে আপনার৷ এই অবস্থায় সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান না করে যদি ওষুধ খেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন, বিপদ কিন্তু বাড়বে৷
অতএব আজ থেকেই সতর্ক হোন৷ শুয়ে–বসে থাকার অভ্যাস পাল্টে শরীরচর্চা শুরু করুন। নজর দিন স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার দিকে। সুষম খাবার খান৷ তার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে এমন কয়েকটি খাবারও খান নিয়ম করে৷
‘‘সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সাধারণ সর্দি–জ্বর–কাশি–শ্বা ইত্যাদিকে কম রাখতে এই সব খাবারের কোনও জুড়ি নেই৷ নিয়মিত খেলে বড় সংক্রমণও অনেকাংশে এড়ানো যায়৷’’ জানালেন পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা রানা৷ কী কী উপায়ে এই সব অসুখ সহজেই ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন জানেন?
আরও পড়ুন: নামমাত্র খরচে ফাটা ঠোঁটের সমস্যা রুখে দিন এই ঘরোয়া উপায়ে
রোজ খান
পেয়ারা, আমলা, কমলালেবু, পাতিলেবু বা সবেদার মধ্যে কোনও একটি বা একাধিক ফল খান রোজ৷ এতে আছে ভিটামিন সি। প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে তা নানা ভাবে শরীরের কাজে লাগে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোও এর অন্যতম কাজ৷ পাতে রাখুন কুমড়ো, গাজর বা পাকা পেঁপে৷ বিটা ক্যারোটিনের প্রভাবে প্রতিরোধ শক্তি তরতাজা হয়ে উঠবে৷ রসুন খেলে ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা যেমন কমে, শরীরে প্রদাহ হওয়ার প্রবণতাও অনেকটা সামলে দেওয়া যায়৷ কাঁচা খেতে পারলে সবচেয়ে ভাল। না পারলে স্যলাড বা চাটনিতে মিশিয়ে খান৷ না হলে রান্নায় মিশিয়ে খান৷ হলুদে আছে ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম–ম্যাঙ্গানিজের মতো উপকারী খনিজ৷ আছে কারকিউমিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট— যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রধান কারিগর৷ কাজেই রোজ সকালে এক ইঞ্চি মতো কাঁচা হলুদ খান৷ রান্নায় হলুদ ব্যবহার করুন৷ গুঁড়ো হলুদের পরিবর্তে নিজে বেটে নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল৷ ভেজালের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন৷
ঘরে পাতা টাটকা টক দইয়ের উপকার সম্বন্ধে আর নতুন করে বলার কিছু নেই৷ কিন্তু সর্দি–কাশি এড়াতেও যে তার ভূমিকা আছে তা জানা গিয়েছে সম্প্রতি৷ নিয়মিত দই খেলে শরীরে ইন্টারফেরোন তৈরি হয়, তার প্রভাবে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ কাজেই আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন৷ খান গোটা কয়েক আমন্ড। পর্যাপ্ত ভিটামিন ই-এর জোগানে সংক্রমণ ঠেকানোর শক্তি জোরদার হয়ে উঠবে৷ খেতে হবে গাঢ় সবুজ রঙের শাক–সব্জি৷ অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি এতে রয়েছে ফোলিক অ্যাসিড৷ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যার ভূমিকা অপরিসীম৷ গ্রিন টি–র অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে নিয়ে আজকাল প্রচুর হইচই হচ্ছে৷ এর অনেক উপকার৷ সর্দি–কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকেও সে মারতে পারে৷ কাজেই রোজ ২–৩ কাপ করে খেতেই পারেন৷ এই একই কাজের জন্য চাই শরীরে পর্যাপ্ত জিঙ্কের জোগান৷ নিরামিষাশীরা যা পাবেন ব্রাউন রাইস, ব্রাউন ব্রেড, খোসা-সমেত ডাল, বিন্স, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল ইত্যাদি থেকে৷ আমিষাশীদের কোনও অসুবিধা নেই৷ কারণ কাঁকড়া, রেড মিট, ঝিনুক ইত্যাদিতে জিঙ্ক আছে প্রচুর পরিমাণে৷
আরও পড়ুন: মানুষ কেন বিশেষ কারও প্রতি আকৃষ্ট হয় জানেন?
সর্দি–কাশির বাধানিষেধ
নিয়মিত মদ খাবেন না৷
আইবুপ্রফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ ন’–মাসে ছ’–মাসে এক–আধবার খেতে পারেন৷ কিন্তু নিয়মিত নয়৷
কিছু কীটনাশকে সিসা, পারদ বা ক্যাডমিয়াম থাকে৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে নিয়ে যেতে এদের ভূমিকা আছে৷ কাজেই সম্ভব হলে জৈব সারে পুষ্ট শাক–সব্জি–ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন৷ দামের জন্য সম্ভব না হলে বেশ কিছু ক্ষণ জলে ভিজিয়ে রেখে, ভাল করে ধুয়ে তবে খান৷ ভেগি ওয়াশ দিয়ে ধুলে আরও ভাল কাজ হবে৷
শুয়ে–বসে থাকবেন না৷ সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ঘাম ঝড়ানো ব্যায়াম করুন৷ সঙ্গে করবেন যোগা৷
ছবি: শাটারস্টক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy