কেক-বিস্কুট অনেক দিন ধরেই ছিল। বেবিফুড-ম্যাগির রাজত্বও কম দিনের নয়। কিন্তু এখন আরও অনেক রকমের ‘ইনস্ট্যান্ট ফুড’ ঢুকে পড়েছে মধ্যবিত্তের বাজারে। ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ধোকা মিক্স, চিজ, সসেজ থেকে এখন পনীরের তরকারি, এমনকী পরোটাও পাওয়া যাচ্ছে রেডিমেড। পাশাপাশি নানা ধরনের ফলের রস, সোডা মেশানো পানীয়, জ্যাম, জেলি— আমাদের খাদ্যাভ্যাস আমূল বদলে যাচ্ছে। একটা রিপোর্ট বলছে এ দেশে উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত সমাজে ইনস্ট্যান্ট ফুডের ক্রেতার সংখ্যা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ছুঁয়ে ফেলেছে। সেই সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জগতে একটা ‘বুম’ এসেছে এখন। প্রায় ৩০ লক্ষ লোক এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং প্রতি বছরে আড়াই লক্ষের বেশি নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে এই শিল্পে। নিত্য খুলছে নতুন ধরনের সব চাকরির দরজা।
এই এক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে রয়েছে বেকারি, ডেয়ারি, ফ্রুট অ্যান্ড ভেজি-টেবল প্রসেসিং, মিট-ফিশ-পোলট্রি, অ্যালকোহল ও সফট ড্রিঙ্কস, মশলা, স্পাইস অ্যান্ড কন্ডিমেন্টস, ফ্লেভার, কনফেকশনারি, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ফুড প্যাকেজিং, ফার্মাসিউটিক্যাল, ফুড প্রসেস মেশিনারি ডিজাইন— হাজারো আলাদা আলাদা শিল্প। প্রতিটি শিল্পেই হাজারো পদ—
ফুড টেকনোলজিস্ট: এদের মূল কাজটা হল খাদ্য সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্যাকেটজাত করার কৌশল দেখভাল। পুরো কাজটায় গুণমান বজায় রাখা মূল দায়িত্ব।
রিসার্চ সায়েন্টিস্ট: কোনও খাবারের পুষ্টিগত মান বাড়ানোর পাশাপাশি ক্রেতাদের সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের অ্যাডিশনাল ভ্যালু যোগ করা নিয়ে ভাবনাচিন্তা, গবেষণা।
ইঞ্জিনিয়ার: যে কোনও ইউনিট চালাতেই প্রচুর প্ল্যানিং লাগে। নানা ধরনের যন্ত্র, তার মেরামতি, নানা কৌশল, নানা রাসায়নিক—সব মিলিয়ে কেমিক্যাল, মেকানিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, ইলেকট্রিকাল, এগ্রিকালচারাল আর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নানা ধরনের কাজ থাকে প্রত্যেক ইউনিটে।
এছাড়াও অর্গানিক কেমিস্ট, বায়োকেমিস্ট, অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট, হোম ইকোনমিস্ট, ম্যানেজার, অ্যাকাউন্ট্যান্টস-সহ নানা ধরনের কাজ রয়েছে এই শিল্পে।
ফুড টেকনোলজিতে গ্র্যাজুয়েশন করার পরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলিতে সুপারভাইজর, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, ফুড প্যাকেজিং ম্যানেজার, ফুড ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার, ফুড সেফটি অডিটরস, ফুড স্টাইলিস্ট, মার্কেটিং, সেলস ম্যানেজার-সহ নানা পদে কাজ করা যায়। আমূল, গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড, ডাবর ইন্ডিয়া লিমিটেড, পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস, নেস্টলে ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আইটিসি লিমিটেড, পার্লে প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড, অ্যাগ্রো টেক ফুডস, ক্যাডবেরি ইন্ডিয়া লিমিটেড, হিন্দুস্তান লিভার লিমিটেড, মিল্কফুড, এমটিআর ফুডস লিমিটেড-সহ ছোট বড় নানা কোম্পানি রয়েছে নিয়োগকর্তা হিসাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিও আছে। ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ব্যাকটেরিওলজিস্ট, টক্সিকোলজিস্ট, প্যাকেজিং টেকনোলজিতে প্রশিক্ষিত, অর্গানিক কেমিস্ট, বায়োকেমিস্ট-সহ নান পদে নিয়োগ করে। একই ভাবে মডার্ন ফুড কর্পোরেশন, নর্থ-ইস্টার্ন এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কর্পোরেশন প্রচুর লোক নেয়।
তবে ফুড প্রসেসিং ইউনিটগুলিতে চাকরি পেতে গেলে যে সবসময় ফুড টেকনোলজি নিয়েই পড়তে হবে এমনটা নয়। হোমসায়েন্স, নিউট্রিশন-সহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে এই সমস্ত সংস্থায় কাজ করা যায়। অবশ্যই ফুড টেকনোলজি নিয়ে পড়লে কর্মমুখী দক্ষতা বাড়ে।
ফুড টেকনোলজিতে বিই/বিটেক বা বিএসসি—দুধরনের কোর্স করা যায়। এই রাজ্যে খড়্গপুর অাইআইটি-সহ বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (যাদবপুর, টেকনো ইন্ডিয়া, হলদিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং) ফুড টেকনোলজি পড়া যায়। খুব ভাল হয় কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের আওতায় থাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড টেকনোলজি এন্ট্রিপ্রেনিওরশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট-এ (এনআইএফটিইএম) পড়তে পারলে। হরিয়ানার কুন্ডলিতে এই প্রতিষ্ঠানে বিটেক পড়ার জন্য অল ইন্ডিয়া জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মেরিট লিস্ট দেখা হয়। এছাড়াও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল ন্যাশনাল সুগার ইনস্টিটিউট (কানপুর), ন্যাশনাল ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (কারনেল, বেঙ্গালুরু), এমএস ইউনিভার্সিটি ভাদোদরা, গুজরাত অ্যান্ড সেন্ট্রাল ফুড টেকনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (হিমাচল প্রদেশ), ফ্রুট টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (লখনউ), সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিজ এডুকেশন , কারুণ্য ইউনিভার্সিটি (কোয়েম্বাটোর), আন্না ইউনিভার্সিটি (চেন্নাই), ইউনিভার্সিটি অফ মাইশোর, ইউনিভার্সিটি অফ বোম্বে, গুরুনানক দেব ইউনিভার্সিটি (অমৃতসর), ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাড্রাস, এসআরএম ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইত্যাদি। ইগনু ‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন’এর উপরে একটা সার্টিফিকেট কোর্স করায়। বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন শর্ত থাকলেও ১০+২ ক্লাসে বিজ্ঞান শাখায় পড়াটা আবশ্যক।
আরও পড়ুন: ঘি, মধু এবং ডিম নিয়ে কিছু চালু ভুল ধারণা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy