Advertisement
E-Paper

দোল খেলুন, তবে সাবধানে, বলছেন চিকিৎসকেরা

রং হোক বা আবির, তাতে নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকে।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০২:২৩
রং মাখার সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি, মত চিকিৎসকের। —নিজস্ব চিত্র

রং মাখার সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি, মত চিকিৎসকের। —নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: দোলে ব্যবহৃত রং কতখানি নিরাপদ ?

বাজারচলতি কোনও রং-ই তেমন নিরাপদ নয়। রাসায়নিক পদার্থ মেশানো রং তো বটেই, এমনকি ভেষজ রংও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। তবে পাতা, ফুল, ফলের নির্যাস থেকে হাতে তৈরি রং সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাড়িতে ভেষজ রং তৈরি করে নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সব রং সাধারণত অস্থায়ী।

প্রশ্ন: রং থেকে সমস্যা হয় কেন? শরীরের কোন কোন অংশে বেশি প্রভাব পড়ে?

রং হোক বা আবির, তাতে নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকে। আসলে যে সব রাসায়নিক দিয়ে সাধারণত রং তৈরি হয়, সেগুলি মূলত শিল্পে ব্যবহারের জন্য। তা মানুষের শরীরে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবেই। আর শুধু মানুষ নয়, এই সব রাসায়নিক পশু, পাখি সকলের জন্যই বিপজ্জনক। এমনকি, পরিবেশেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সাধারণ ভাবে রং-এ থাকা ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, জিঙ্ক ইত্যাদির প্রভাবে আমাদের চোখ, ত্বক, চুল এবং শ্বাসনালির মাধ্যমে ফুসফুস মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন: রঙে কী ধরনের রাসায়নিক থাকে? এগুলি থেকে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

কালো রঙে থাকে লেড অক্সাইড যা কিডনির কাজ ব্যাহত করতে পারে। সবুজ রঙে থাকা কপার সালফেট ত্বকের অ্যালার্জি ও চোখের জন্য ক্ষতিকর। লাল রঙে থাকে মারকিউরিক সালফাইড, যার কারণে ত্বকের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। নীল ও আসমানি রঙে থাকে বিষাক্ত প্রুসিয়ান ব্লু ও সাদা রঙে থাকে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড যা ‘টোপিক ডার্মাটাইটিস’ ও এগজিমার ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। উজ্জ্বল হলুদ আবির ও বাঁদুরে রঙে সবথেকে বেশি পরিমাণে লেড বা সীসা থাকে। সীসার প্রভাবে শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

কী ভাবে তৈরি করবেন ভেষজ রং/ আবির

হলুদ: হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে ময়দা বা বেসন মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন হলুদ আবির।
লাল: লাল চন্দনের সঙ্গে সমপরিমাণে ময়দা মিশিয়ে বানাতে পারেন লাল আবির। বিটের জলে ফুটিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন লাল জল রং।
সবুজ: পালং শাক আর পুদিনা পাতা বেটে নিয়ে, ছেঁকে নিলেই তৈরি হবে সবুজ রং।
বাদামি: মেহেন্দি পাতা, আমলকি ও হলুদ গুঁড়ো এক সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা যায় বাদামি রং।

প্রশ্ন: বিষাক্ত রং থেকে চোখে কেমন প্রভাব পড়তে পারে?

দোল খেলার সময়ে রং থেকে চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে। রং ভরা বেলুন আচমকা চোখে লাগলে চোখের কর্নিয়া ‘ডিসলোকেট’ হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রেটিনা। রং-এ থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলি চোখে গেলে চোখ জ্বালা করা, কনজাংটিভাইটিস, কেরাটিটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। সমস্যা থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকাই একমাত্র পথ। রং খেলার সময়ে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে। রং ব্যবহারের সময়ে পরিষ্কার রুমাল বা কাপড়ের টুকরো দিয়ে চোখ দু’টি আড়াল করলে তা অনেকটাই নিরাপদ হতে পারে।

প্রশ্ন: রং থেকে ত্বক কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?

দোলে রং খেলার সময়ে আমাদের চামড়া বা ত্বকই সবথেকে বেশি রং এবং রঙে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসে। তাই চামড়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সবথেকে বেশি। আর বেশি সমস্যায় পড়ে শিশুরা।

রং ও আবিরে থাকা রাসায়নিকের প্রভাবে র‌্যাশ, এগজিমা আর চুলকানি ছাড়াও বাড়ে অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমার সমস্যাও। সোরিয়াসিস থাকলে তা বেড়ে যেতে পারে। ত্বকে কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস থেকে শুরু করে কেমিক্যাল লিউকোডার্মা

অর্থাৎ শ্বেতির ঝুঁকি বাড়ে। ত্বক শুকিয়ে গিয়ে র‌্যাশ, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সোরিয়াসিস, এগজিমা-সহ নানা অসুখের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে যাঁদের এগজিমার প্রবণতা আছে, তাঁদের ভোগান্তি ভীষণ ভাবে বেড়ে যায়। আবির ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে ব্রণ, ফুসকুড়ি বা র‌্যাশের সমস্যা বাড়তে পারে। চকচকে দেখানোর জন্য আবিরে অনেক সময়ে অভ্র ও মিহি কাচের গুঁড়ো মেশানো হয়। আবির মাখার সময়ে এর থেকে ত্বক ছড়ে গিয়ে সংক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়া, রং তুলতে গিয়ে বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহারে এমনিতেই ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কোন রঙে কী ক্ষতিকর রাসায়নিক

কালো: লেড অক্সাইড (কিডনির জন্য ক্ষতিকর)
লাল: মারকিউরিক সালফাইড (চর্মরোগ সৃষ্টি করে)
হলুদ: লেড ক্রোমেট (শিশুদের জন্য ক্ষতিকর)
সবুজ: কপার সালফেট, ম্যালাকাইট গ্রিন (অ্যালার্জি ও চোখের রোগ সৃষ্টি করে)
নীল ও আসমানি: প্রুসিয়ান ব্লু (চর্মরোগ

প্রশ্ন: রং থেকে অ্যাজমার সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা আছে কি?

রং ও আবির থেকে অ্যাজমার সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা প্রবল। দোল খেলার সময়ে বাতাসে ভেসে থাকা আবির শ্বাসনালীতে পৌঁছে হাঁচি, সর্দি, কাশি এবং এর থেকে অ্যাজমার ঝুঁকি ভয়ানক বেড়ে যায়। দোলের পরে বাচ্চাদের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার এটাই অন্যতম কারণ।

প্রশ্ন: রং থেকে গর্ভবতী মহিলাদের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?

রং থেকে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভস্থ ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে। রঙের মাধ্যমে রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করে গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ, অন্ধ হওয়া এমনকি গর্ভপাত, সব কিছুই হতে পারে। গর্ভবতীদের ওষুধ প্রয়োগেও অনেক বাধা থেকে যায়। তাই হবু মায়েদের রং না খেলাই ভাল। লেড বা সীসার প্রভাবে ‘লার্নিং ডিসেবিলিটি’-র মতো সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।

প্রশ্ন: রং খাবারে মিশলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

দোলের সময়ে বাজারের খাবারে রং মেশার সম্ভাবনা থাকে। এই রং মেশানো খাবার বিষাক্ত। এমন খাবার পেটে গেলে পেটের অসুখ, পাতলা পায়খানা, বমি, অসহ্য পেটের যন্ত্রণা হতে পারে। এমনকি খাদ্যনালিতে সংক্রমণও দেখা দিতে পারে।

প্রশ্ন: রঙের কারণে পরিবেশ কী ভাবে প্রভাবিত হতে পারে?

রঙে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। পরিবেশবিদদের মতে, রঙে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিকের কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ে। গাছের পাতা বা ঘাসে এই রং লাগলে এবং পরে তৃণভোজী প্রাণীরা তা খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। অনেকেই দোল খেলতে গিয়ে মজার ছলে অবলা প্রাণীদের গায়ে রং দেন। এতে তাদের ত্বকেও এই সব রাসায়নিক বিষক্রিয়া ঘটায়। তাই এমন করা থেকে বিরত থাকুন। আর শুকনো রং এবং আবির খেলার মাধ্যমেই দোল খেলা সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। এতে জলের অপচয় হবে না।

প্রশ্ন: তবে কি দোলে রং খেলা অনুচিত?

না, একেবারেই তা নয়। নিয়ম মেনে সুরক্ষিত ভাবে রং খেললে কোনও অসুবিধা নেই। ভেষজ রং ব্যবহারে জোর দিতে হবে। জলের ব্যবহার কম করতে পারলে ভাল। পরিবেশ বাঁচিয়ে দোল খেললে তা পরিবেশ এবং মানুষ বা অন্য প্রাণী, সকলের পক্ষেই ভাল।

প্রশ্ন: দোলে রং খেলার সময়ে কী কী সতর্কতা নেওয়া দরকার?

রঙে থাকা রাসায়নিকগুলি দেহের সংস্পর্শে এসে বিভিন্ন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতি করে। শরীরে রং বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়। না হলে কয়েক ঘণ্টা পরে গায়ে র‌্যাশ, চুলকানি বা অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখে রং গেলে হালকা করে জলের ঝাপটা দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কন্ট্যাক্ট লেন্স পরা আরও সতর্ক হওয়া দরকার। ঘষে ঘষে রং তোলার চেষ্টা করলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঠান্ডা জলে মৃদু সাবান ব্যবহার করলে বিপদের সম্ভাবনা কম থাকে।

রং মাখার সময়ে চশমা, চুলে হেয়ার কন্ডিশনার, শরীরের খোলা অংশে ও মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে সানস্ক্রিন মেখে বেরলে ভাল। পুরো হাতা সুতির জামা পরে রং খেললে ত্বক বাঁচবে। রং মাখলেও অ্যালার্জি এড়াতে মুখে মাস্ক পরা উচিত।

সাক্ষাৎকার:

অভিজিৎ অধিকারী

Colour Holi Holi Celebration Doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy