রান্নাঘর নোংরা থাকলে বাড়ির সদস্যদের মধ্যে দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। হেঁশেলের স্বাস্থ্যবিধি সবচেয়ে জরুরি, কিন্তু সবার আগে জঞ্জাল হয় সেখানেই। কারণ জিনিস বেশি, ফাঁকফোকরও বেশি। তার উপর খাবার খুঁজতে রান্নাঘরেই হানা দেয় পোকামাকড় থেকে বিড়াল-ইঁদুর। আগাগোড়া রান্নাঘর সাফাই মানে গোটা দিন কাবার। সে ক্ষেত্রে কোন উপায় অবলম্বন করলে রান্নাঘরে ময়লা জমবে কম? নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে অথবা পুরনো বাড়িতেই রান্নাঘরকে নতুন রূপে সাজাচ্ছেন? তা হলে মাথায় রাখতে হবে কিছু কৌশল। আগে থেকে পদক্ষেপ না করলে পরে নাজেহাল হতে পারেন।
রান্নাঘর বানানোর সময়ে খেয়াল রাখবেন, সুন্দর, সাজানো, পরিষ্কার হেঁশেল দেখলে অতিথিদের মনে ঘেন্না জন্মাবে না, বাড়ির প্রত্যেকের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। কেবল পরিষ্কার নয়, সুন্দর করে সাজানোও গুরুত্বপূর্ণ।
কৌশলগুলি কী কী?
১. জিনিস সংরক্ষণের উপায়: থালা-বাটি, মশলাপাতি, জলের বোতল, তেলের পাত্র, ইত্যাদি যদি কাউন্টারটপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, তা হলে সহজে রান্নাঘর পরিষ্কার করা যাবে না। যত বারই পরিষ্কার করে রাখবেন, দ্রুত দিন কয়েকের মধ্যে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তাই জিনিসপত্র সংরক্ষণের জন্য ভাল ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। ড্রয়ার, ছোট ছোট বাসনের আলমারি, স্লাইড করে বেরিয়ে আসা তাক, ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করতে হবে রান্নাঘর। নয়তো জিনিস অগোছালো হয়ে থাকবে। এ ধরনের তাক বানানো খানিক খরচসাপেক্ষ, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি এবং সজ্জা প্রধান চাহিদা হলে এক বারে খরচ করে নিন। পরে সুবিধা হবে।

খোলা তাক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা ভাল যাতে ধুলো কম জমে। ছবি: সংগৃহীত।
২. ছিদ্রহীন উপাদানের কাউন্টারটপ: রান্নাঘর স্ল্যাব অথবা কাউন্টারটপের উপাদান যদি ছিদ্রযুক্ত হয়, তা হলে খুব সহজে ধুলোময়লা জমা হতে পারে তাতে। অতিরিক্ত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়বে সে ক্ষেত্রে। তা যদি না চান, তবে কোয়ার্টজ়ের তৈরি জিনিস রান্নাঘরে লাগাতে পারেন। কাউন্টারটপ এবং পিছনের টাইলসের জন্য এই উপাদানই উপযুক্ত। তা হলে রান্নার তেলমশলার ছিটে লাগলেও সহজে দাগ পড়বে না। যদি দাগ লাগেও, সহজে ধুয়ে ফেলা যাবে।
৩. বায়ু চলাচলের পথ: রান্নার তেল ও গন্ধ হেঁশেলকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। ক্যাবিনেট, কাউন্টারটপ, বাসনকোসনকেও ঢেকে ফেলতে পারে ময়লায়। রান্নাঘর পরিষ্কারের কাজটিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশনই একমাত্র উপায়। ছোট পাখা বসাতে হবে রান্নাঘরের দেওয়ালে। এমন পাখা বেছে নিতে হবে, যেটির শোষণ ক্ষমতা ভাল, ময়লা আটাকাতে সক্ষম। ক্যাবিনেটের উপর আঠালো অবশিষ্টাংশ জমা দূর করতে পারবে এবং বাতাসের গুণমান বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন:
৪. মেঝের উপাদান বাছাই: রোজ মেঝের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যায়, তার পর সংরক্ষণ করা বেশ কঠিন। বাড়ির সদস্যদের হাঁটাহাঁটি ছাড়া খাবার পড়া, জলের ছিটে, তেলের ছিটে, চেয়ারের পায়ার ঘর্ষণ, ইত্যাদিকে সহ্য করতে পারার ক্ষমতা থাকতে হবে মেঝের। আর তাই বাহুল্যবর্জিত ডিজ়াইনে ভরসা রাখতে হবে, নয়তো ডিজ়াইনের খাঁজে ধুলো জমতে বেশি সময় লাগবে না। তবে উপাদান হতে হবে টেকসই। চকচকে টাইলস বা পোক্ত কাঠ যা সিল করা থাকবে, কিংবা পালিশ করা কংক্রিটের উপাদান ব্যবহার করা ভাল। রান্নাঘরের নীচের ক্যাবিনেটগুলি মেঝের সংস্পর্শে না রেখে একটু উপরে তুলে দেওয়া ভাল। ফলে জল দিয়ে রোজ ঘর মোছার সময়ে ক্যাবিনেটগুলির উপাদানে চট করে পচন ধরবে না।

ক্যাবিনেটগুলি মেঝের সংস্পর্শে না রেখে একটু উপরে তুলে দেওয়া ভাল। ছবি: সংগৃহীত।
৫. সূক্ষ্মতার দিকে নজর: দৈনন্দিন কাজের সুবিধার জন্য ছোট ছোট জিনিসের দিকে নজর দিতে হবে। যেমন খোলা তাক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা ভাল। এর ফলে ধুলো কম জমবে। বাসনকোসন থেকে মশলাপাতিতে ময়লা লাগবে না। খাবারদাবার থেকে দূরে কোনও কোনায় ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করুন, যাতে খাবারে সংক্রমণ না ঘটে।