পশ্চাৎগমন বা পিছনে পা ফেলে হাঁটার উপকারিতা অনেকের কাছেই এখন স্পষ্ট। কেবল মজা বা খেলার জন্য নয়, স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যেও উল্টো হাঁটার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। একে বলা হয় ‘রেট্রো ওয়াকিং’। জিমে বা বাড়ির ট্রেডমিলে কখনও পিছনে হেঁটে দেখেছেন? যন্ত্রের সাহায্যেও উল্টো হাঁটার উপকারিতা রয়েছে।
১. হাঁটুর অস্ত্রোপচার থেকে সেরে ওঠার জন্য এই কৌশল বেশ কার্যকরী। সম্পূর্ণ হাঁটু প্রতিস্থাপন হলে অনেকে বহু দিন পর্যন্ত হাঁটু সোজা করে ফেলতে পারেন না। কেউ যন্ত্রণার ভয়ে সোজা করেন না, কেউ বা অভ্যাস হারিয়ে ফেলেন বলে। আর সেই পরিস্থিতিতে ট্রেডমিলে পশ্চাৎগমন সাহায্য করতে পারে। পিছনে পা ফেলার সময়ে আগে আঙুলগুলি মাটিতে পড়ে। তার পর ধীরে ধীরে গোড়ালি। আর এই পদ্ধতিতে হাঁটু সোজা ফেলতেই হবে অন্য পা পিছনে নিয়ে যাওয়ার আগে। ফলে হাঁটু সোজা করার অভ্যাস আপনাআপনিই তৈরি হয়ে যায়। নিতম্ব এবং গোড়ালির অস্ত্রোপচারের পরেও ফিজ়িওথেরাপিস্টরা তাঁদের রোগীদের ট্রেডমিলে রেট্রো ওয়াকিং করার পরামর্শ দেন। প্রথমে পিছনে হাঁটা অভ্যাস করে ধীরে ধীরে সামনে হাঁটা, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মার্চ করা, বাধা অতিক্রম করে হাঁটা অনুশীলন করা উচিত। তবে হাঁটু সারিয়ে তোলার জন্য এ ছাড়াও অনেক উপায় রয়েছে।

নিতম্ব এবং গোড়ালির অস্ত্রোপচারের পরেও ফিজ়িওথেরাপিস্টরা তাঁদের রোগীদের ট্রেডমিলে রেট্রো ওয়াকিং করার পরামর্শ দেন। ছবি: সংগৃহীত।
২. ট্রেডমিলে পিছনে হাঁটলে বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে ‘প্যাটেলোফিমোরাল পেন সিন্ড্রোম’ (হাঁটুর পিছনের অংশ এবং ফিমার হাঁটুর সামনের যে অংশে এসে মিলিত হয়, সেটিই হল প্যাটেলোফিমোরাল জয়েন্ট) বা ‘রানার্স নি’-র সমস্যা দূর করতে পারে। ব্যথা কমাতে পারে। অস্টিয়োআর্থ্রারাইটিসের রোগীদের কোয়াড্রিসেপ পেশির জোর বাড়াতে পারে।
৩. ব্যায়ামের সময়ে আপনার দেহে কী পরিমাণ অক্সিজেন প্রবেশ করছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। ‘জার্নাল অফ অর্থোপেডিক অ্যান্ড স্পোর্টস ফিজ়িক্যাল থেরাপি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, ২৭ জনকে নিয়ে একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল, যেখানে দেখা যায়, ঘণ্টায় ৪ কিমি গতিতে ট্রেডমিলে হাঁটলে অক্সিজেন প্রবেশ করার পরিমাণ বাড়ছে। ট্রেডমিলে সামনে হাঁটার চেয়ে বেশি পরিমাণে কার্যকরী হতে দেখা গিয়েছে পিছনে হাঁটা। এই পরিমাণ যত বাড়বে, শরীর তত বেশি শক্তি সঞ্চয় করবে।
আরও পড়ুন:
তবে একই সঙ্গে, ট্রেডমিলে পিছনে না হেঁটেও হাঁটুর সমস্যা দূর করা যায়। নানা ধরনের ব্যায়াম রয়েছে সে সব ক্ষেত্রে। কিন্তু যদি দেখা যায়, কোনও কিছুই তেমন কার্যকরী হচ্ছে না, তখন এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। চিকিৎসকদের মতে, ট্রেডমিলে পিছনে হাঁটায় কোনও ক্ষতি নেই, কিন্তু কঠিন বলে মনে হতে পারে কারও কারও। কিন্তু যদি গতিবেগ খুব কম রেখে হাঁটার চেষ্টা করেন, তা হলে এই কৌশলে উপকৃত হবেন রোগীরা। শুরুতে ঘণ্টায় ৩ কিমি গতিবেগে শুরু করতে হবে। অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে ৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় নিয়ে যেতে পারেন। ট্রেডমিলের হাতল ধরে রাখতে হবে। সাবধানতা অবলম্বন করলে এই কৌশল হাঁটুর ব্যথা থেকে সেরে ওঠার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করতে পারে।