যত কদর পাতিলেবুর রসেরই। আবার লেবুর খোসা ব্যবহার করে নানা ধরনের গৃহস্থালীর কাজকর্ম করা হয়। কিন্তু খোসার উপরিতলের পাতলা হলুদ-সবুজ অংশ বা ইংরেজিতে যাকে বলে ‘জ়েস্ট’, তা বড়ই অবহেলার পাত্র। কিন্তু কোরানো খোসাও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এসেনশিয়াল তেল, ভিটামিন এবং লিমোনিন ও ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো যৌগে ভরপুর খোসার এই অংশ। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, প্রদাহনাশী বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি খাবারের মধ্যে যোগ করা যায়। লেবুর রসের থেকেও বেশি পুষ্টিগুণ জ়েস্টে থাকে। স্বাদ রসের মতোই টক টক। তবে কোরানোর সময়ে সতর্ক না থাকলে জ়েস্টের পরের স্তরের সাদা অংশ উঠে আসতে পারে। আর সে অংশের স্বাদ বেশ তেতো হয়। তাই রান্নায় বুঝেশুনে ব্যবহার না করলে তেতো হয়ে যেতে পারে পদ।
লেবুর খোসার উপরিতলের (জ়েস্ট) উপকারিতা কী কী?
১. অকালবার্ধক্য এবং কোষের ক্ষতির জন্য দায়ী ফ্রি র্যাডিকালস। সেগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ভিটামিন সি। আর খোসার পাতলা স্তরে সে উপাদানগুলিরই আধিক্য থাকে। অ্যান্টি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে শরীরের উপকার করে। ক্যানসার, ডায়াবিটিস এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কিছুটা এড়ানো সম্ভব লেবুর জ়েস্ট খেলে।
২. লেবুর খোসার উপরিতলে থাকা ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদনে এবং ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করে। ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়।

কেক বা কুকি বেক করার সময়েও ‘লেমন জ়েস্ট’ ব্যবহার করা হয় মাঝেমধ্যে। ছবি: সংগৃহীত।
৩. কোলাজেনের অভাবে ত্বক ঔজ্জ্বল্য হারায়, বলিরেখা পড়ে, বয়সের ছাপ পড়ে। কিন্তু লেবুর খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন সি কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। ফলে ত্বকের সমস্যাগুলি দূর হতে পারে লেবুর জ়েস্টের সাহায্যে। অতিবেগনি রশ্মি এবং দূষণের কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, সে সব থেকেও রক্ষা করতে পারে এটি। ত্বকের স্বাস্থ্যকে ভিতর থেকে উন্নত করার জন্য লেবুর জ়েস্টের তুলনা হয় না।
৪. লেবুর খোসায় পাওয়া যায় লিমোনিন নামের এক ধরনের অপরিহার্য তেল। এটি যকৃতের উৎসেচকগুলিকে উদ্দীপিত করে। ফলে শরীরে থাকা বিষাক্ত পদার্থগুলি বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। তা ছাড়া এটি পিত্ত উৎপাদন বাড়ায় বলে হজম ক্ষমতা উন্নত হয়।
৫. লেবুর জ়েস্টে পেকটিন নামে এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার থাকে। তাই এটি খেলে দীর্ঘ ক্ষণ পেট ভরা ভরা থাকে। হঠাৎ হঠাৎ খিদে পাওয়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে লেবুর খোসার উপরের পাতলা স্তর।
৬. মুখের ভিতরের দুর্গন্ধ, দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির সংক্রমণের জন্য দায়ী ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে পারে লেবুর খোসার অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। জ়েস্টে যে সাইট্রাসের স্বাদ পাওয়া যায়, তা নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সতেজতা বাড়াতে পারে।
৭. লেবুর খোসায় অল্প পরিমাণে ক্যালশিয়াম পাওয়া যায়। তা ছাড়া এতে ভিটামিন সি-র মতো খনিজ পদার্থও থাকে, যা হাড় মজবুত করতে পারে। খাবারের পাতে জ়েস্ট থাকলে হাড়ের ঘনত্ব এবং গাঁটের স্বাস্থ্য ভাল হতে পারে।
চা, স্যুপ, স্যালাড, মুরগির মাংসের রেসিপিতে খোসা কোরানো ছড়িয়ে দেন অনেকে। তাতে স্বাদে হালকা টক টক স্বাদ আসে। পাশাপাশি সুগন্ধ যোগ হয় পদে। তবে তা ছাড়া লেবুর লজেন্সের প্রস্তুতপ্রণালীতে, এমনকি কেক বা কুকি বেক করার সময়েও ‘লেমন জ়েস্ট’ ব্যবহার করা হয় মাঝেমধ্যে। গ্রেটার বা পিলারের সাহায্যে আলতো করে লেবুর খোসার উপর বুলিয়ে দিলেই পাতলা অংশটি উঠে আসবে। সেটিকেই ব্যবহার করতে হবে রান্নায়।
(এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। লেবুর খোসার উপরিতলের পাতলা হলুদ-সবুজ অংশ বা জ়েস্ট আপনি খেতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।)