রোদ কিংবা বৃষ্টির হাত থেকে নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট কী ভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তার নানা উপায় রয়েছে। এসি বা কুলারের মতো যন্ত্রের সাহায্যে শুধু নয়, পুরো বাড়িটিকেই যদি বাঁচাতে চান প্রকৃতির রোষ থেকে, তা হলে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। গ্রীষ্মের রোদের মতোই বর্ষায় ড্যাম্প ধরা থেকেও বাঁচানো জরুরি ঘরের দেওয়াল। এ সবেরই সহজ সমাধান এখন হাতের নাগালে।
বারান্দায় রোদ্দুর
শীতকালটুকু বাদ দিয়ে বছরের বাকি সময়ে ঘরের ভিতরে রোদ আসাটা আরামদায়ক নয়। তাই এখন অনেক বাড়ি বা ফ্ল্যাটে সানগার্ড লাগিয়ে নেওয়ার চল হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম দিকের ঘর হলে অনেক সময়ে এসি চালানো হলেও ঘর ঠান্ডা হতে চায় না সহজে। সে ক্ষেত্রে সানগার্ড খুব ভাল কাজ করতে পারে। বিভিন্ন রঙের ফোল্ডেড উইন্ডো সানশেড পেয়ে যাবেন অনলাইনেই। ব্যালকনি বা টানা বারান্দার বাইরেও এগুলি লাগানো যায়। দরকার মতো খুলে নেওয়া যায়। এটি শুধু ঘরে রোদ ঢোকা আটকায় তা-ই নয়, বৃষ্টির ছাঁট যাতে ঘরের ভিতরে না আসে, তার জন্যও অনেকেই এই গার্ড লাগিয়ে নেন। নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরির সময়েই এটি লাগিয়ে নিতে পারেন।
রঙের আবরণে
ইদানীং হিট প্রুফ পেন্ট বাড়িঘর ঠান্ডা রাখতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের কুল অ্যান্ড সিল পেন্ট পাওয়া যায় এখন বাজারে, যা দেওয়াল বা ছাদ গরম হওয়া থেকে বাঁচায়, আবার ড্যাম্প প্রতিরোধেও কাজ করে। বাড়ির দেওয়াল, ছাদ ভাল রাখতে শুধু ওয়েদার কোটই যথেষ্ট নয়। এখন যে কোনও আধুনিক হাউজ়িং কমপ্লেক্স বা ফ্ল্যাটের ছাদেই এই হিট প্রোটেকশন ইনসুলেশন থাকে। এক নামী রং প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মী জানালেন, এই ধরনের পেন্টের দাম নির্ভর করে তার ঘর ঠান্ডা রাখার ক্ষমতার উপরে। বেশ কিছু রকমের পেন্ট রয়েছে, যা লাগানোর আগে প্রাইমার লাগাতে হয়। ১০-১২ শতাংশ কুলিং-এর ক্ষমতাসম্পন্ন পেন্টগুলির কুড়ি লিটারের ড্রামের দাম ৫৫০০-৬৫০০ টাকার মধ্যে, জানালেন তিনি।
শুধু হিট প্রোটেকশন নয়, ড্যাম্প সারাতেও নানা ধরনের পেন্ট এখন পাওয়া যায়। বাথরুম লাগোয়া দেওয়াল, ছাদে জল জমে, জানলা দিয়ে জল চুঁইয়ে পড়ে দেওয়াল বা সিলিংয়ে ড্যাম্প হয়। বিশেষ করে বর্ষায় এই সমস্যা বেড়ে যায়। তার সমাধান হিসেবে ড্যাম্প-প্রুফ পেন্ট লাগানো যেতে পারে। বাইরের ময়শ্চার শুষে দেওয়াল বা ছাদের চিরস্থায়ী ক্ষতি যাতে না হয়, তাই সেই সূক্ষ্ম ফাটল বুজিয়ে ফেলতে ব্যবহৃত হয় এই ধরনের রং।
ঘরের ভিতরের রং নির্বাচন করার সময়ে হালকা, আর্দি রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে। রোদের প্রতিফলন কম হবে এতে। বাইরের তাপ শোষণ করবে এমন রং নির্বাচন না করাই ভাল।
পর্দানসিন
অন্দরভাগ আরামদায়ক রাখতে পর্দার নানা রকমফের পরখ করা যেতে পারে। আধুনিক ব্লাইন্ডস ঘরের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তোলে, পাশাপাশি ঘর ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে। যে জানলায় ব্লাইন্ডস লাগাচ্ছেন, সেটিতে ইনসুলেটেড গ্লাস লাগাতে পারেন। উইন্ডো ফিল্মও লাগিয়ে নিতে পারেন কাচের উপরে। এতে ঘরে রোদের আঁচ কম আসবে। বাজেট বেশি হলে কাঠের জানলা হতে পারে বিকল্প। পুরনো দিনের খসখস এখনও কিনতে পাওয়া যায়, আধুনিক ডিজ়াইনে। রিমোট কন্ট্রোলড ব্লাইন্ডসও রয়েছে বাজারে।
যদি নিজেরা ফ্ল্যাট বেছে নেন কিংবা বাড়ি তৈরি করেন, প্রথমেই নিশ্চিত করুন, হাওয়া-বাতাস খেলার উপযুক্ত পরিসর রয়েছে কি না। ক্রস ভেন্টিলেশন থাকলে ঘর অনেকটাই ঠান্ডা থাকবে। অনেকে ধুলো-ধোঁয়ার ভয়ে সর্বক্ষণ জানলা-দরজা বন্ধ করে রাখেন। এটি করলে এসি চালিয়ে, এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করে ঘরের ভিতরের পরিবেশও বজায় রাখতে হবে, না হলে তা অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে দিনের শুরুতে ও বিকেলের দিকে অল্প সময়ের জন্য হলেও জানলা খুলে ঘরে তাজা বাতাস প্রবেশ করানোর প্রয়োজন রয়েছে। নানা ধরনের ইনডোর প্লান্টস রাখতে পারেন ঘরে। বাড়ির লাগোয়া বাগান বা জমি থাকলে স্প্রিঙ্কলার লাগাতে পারেন।
বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগে পাল্টে যাওয়া পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার হরেক উপায় বার করতে হবে নিজেদেরই। তবেই মিলবে আরাম।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)