Advertisement
E-Paper

পহলে দর্শনধারী! শুধু রান্নার স্বাদ নয়, নজর থাক পরিবেশনে, টেবিল সাজানোর সহজ উপায় জেনে নিন

শুধু ভাল রাঁধলে হল না। তা সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশন করা ততটাই প্রয়োজন। টেবিলে বসে খাওয়ার চল এসেছে ইংরেজদের থেকে। তাঁদের মতো করে টেবিল সাজানো শিখতে কেমন হয়?

Tips to decorate your dining table at home

খাবারের মেনু অনুযায়ী বদলাবে টেবিলের সাজ, শিখে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৭
Share
Save

অতিথি আপ্যায়নে বাঙালি একেবারে সিদ্ধহস্ত। রেঁধে-বেড়ে, পাত পেড়ে খাওয়াতে পারে এমন বাঙালি এখনও ঘরে ঘরেই রয়েছেন। সময়ের অভাবে হাতা-খুন্তি না ধরে রেস্তরাঁ থেকে যাঁরা খাবার আনিয়ে নেন, তাঁরাও কিন্তু অতিথিদের বসিয়ে পরিপাটি পরিবেশনটুকু করেন। খাবার যে ভাবেই আসুক, সে রেঁধে হোক বা অর্ডার দিয়ে আনিয়ে— টেবিলে তা পরিচ্ছন্ন ভাবে সাজিয়ে রুচিসম্মত ভাবে পরিবেশন করাটাই আসল। দুপুরের ভূরিভোজ হোক বা রাতের পার্টি, অথবা সান্ধ্যকালীন বন্ধুদের আড্ডা— টেবিল সাজিয়ে যদি অতিথিদের স্বাগত জানাতে হয়, তার জন্য কিছু নিয়ম-নীতি শিখে রাখলে মন্দ হয় না।

কেন শিখবেন টেবিলের সাজ?

এখন অনেকেই বলবেন, অতিথি বাড়িতে এলে তো টেবিলে সুন্দর করে থালা সাজিয়ে খেতে দেওয়াই হয়। তা হলে আর আলাদা করে শেখার কী আছে! সেটাই হল আসল কথা। কী উপলক্ষে খাওয়াচ্ছেন, মেনু কেমন, কোন সময়ে খাওয়াচ্ছেন, কী ধরনের টেবিলে থালা সাজাচ্ছেন— এই সব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ। ধবধবে সাদা মার্বেলের টেবিলে কাঁসার বাসন সাজানো আর গোল, ডিম্বাকৃতি বা চৌকো কাঠের বা কাচের টেবিলে চিনা মাটির থালা সাজানোর পদ্ধতি আলাদা হবেই। মেনু বদলালে টেবিলের সাজও বদলে যাবে। বাঙালি মেনু হলে টেবিল সাজাতে হবে এক রকম ভাবে, আবার যদি চাইনিজ-কন্টিনেন্টাল খাওয়ান, তা হলে টেবিলের সাজসজ্জা হবে অন্য রকম। একটিতে থাকবে খাঁটি বাঙালিয়ানা, অন্যটিতে খানিক পাশ্চাত্যের প্রলেপ পড়বে। শেখার শুরুটা হবে এখান থেকেই।

টেবিলের সাজগোজ। বাঙালি ভোজ থেকে কন্টিনেন্টাল— সাজের ধরন আলাদা আলাদা।

টেবিলের সাজগোজ। বাঙালি ভোজ থেকে কন্টিনেন্টাল— সাজের ধরন আলাদা আলাদা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

টেবিলের সাধারণ সাজ

নিয়মনীতি মেনে টেবিল সাজিয়ে রাখতে চাইলে, তারও অনেক ধরন আছে। বাসন, সব কিছু হতে হবে খুব ভাল মানের ও সুন্দর করে গোছানো। যদি চাইনিজ় বা কন্টিনেন্টাল খাওয়াতে চান অতিথিদের, তা হলে থালা, ছুরি, কাঁটা চামচ, গ্লাস, ন্যাপকিন কোথায় রাখবেন ও কী ভাবে, তা শিখে নিতে হবে। বাঙালি ঘরে ঠিক পাশ্চাত্যের কায়দা অনুসরণ করা সম্ভব নয়, তবে মূল ধারণাটা ঠিক থাকলে, বাকিটা নিজের মতো করে করা যাবে।

কেমন ভাবে টেবিল সাজালে অতিথিরা মুগ্ধ হবেন তা জেনে রাখা ভাল।

কেমন ভাবে টেবিল সাজালে অতিথিরা মুগ্ধ হবেন তা জেনে রাখা ভাল। ছবি: ফ্রিপিক।

প্রথমে টেবিলে সুন্দর কভার পাতুন। মাঝ বরাবর বিছিয়ে দিন মানানসই রানার। খাওয়ার ঘরের দেওয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে টেবিলের কভার বাছবেন। যদি মার্বেলের টেবিল হয়, তা হলে কভার পাতার দরকার নেই। রানারের মাঝ বরাবর রাখতে পারেন ফুলদানি, তাতে টাটকা ফুল রাখুন। টেবিলকে আরও সুদৃশ্য করতে হলে ক্যান্ডেল-স্ট্যান্ডও রাখা যেতে পারে।

এ বার আসা যাক বাসনপত্রে। চিনা মাটির, কাচের ক্রকারি সেট বেছে নিতে পারেন। সঙ্গে রাখুন রুপোলি চামচ-কাঁটা। তাতেই টেবিলের ভোল বদলে যাবে।

স্যালাড, সুপ মেনুতে থাকলে স্যালাড প্লেট এবং সুপ খাওয়ার বাটি প্রথমেই সাজিয়ে রাখতে হবে। এর পর ন্যাপকিন সমেত প্লেট রাখুন মাঝখানে। বাঙালি বাড়িতে প্লেটের সঙ্গে ন্যাপকিন দেওয়ার চল নেই। কিন্তু আজকাল অনেকেই তা ব্যবহার করে অভ্যস্ত। প্লেটের বাঁ দিকে কাঁটা চামচ এবং ডান দিকে চামচ ও ছুরি রাখতে হবে। চাইলে ন্যাপকিন প্লেটের বাঁ দিকে কাঁটার পাশে রাখতে পারেন।

ছুরির ধারালো দিকটি থাকবে থালার দিকে। যত রকমের খাবার থাকবে, সেই অনুযায়ী চামচের সংখ্যা বাড়বে। সবই থাকবে ছুরির পাশে। মাপ মতো বড় থেকে ছোট চামচ সাজিয়ে দিতে হবে। পাশ্চাত্য রীতিতে যে হেতু খাবার বিভিন্ন কোর্সে ভাগ করে পরিবেশন করা হয়, তাই থালা ও চামচের ভাগটা গুরুত্বপূর্ণ।

কেমন ভাবে রাখবেন প্লেট, কোথায় থাকবে ছুরি-চামচ?

কেমন ভাবে রাখবেন প্লেট, কোথায় থাকবে ছুরি-চামচ? ছবি: ফ্রিপিক।

এখন অনেকেই শেষপাতে কেক রাখেন। তার জন্য কেক ফর্ক রাখতে হবে প্লেটের উপরের দিকে অনুভূমিক বিন্যাসে।

জল কিংবা অন্যান্য পানীয়ের গ্লাস থাকবে উপরের ডান দিকের অংশে। জলের গ্লাস থাকবে ছুরির ঠিক উপরে এবং পানীয়ের গ্লাস সামান্য কৌণিক অবস্থানে।

যদি চিনা রেস্তরাঁর কায়দায় ডিমসাম বা ওয়ানটন খাওয়াতে চান, তা হলে বেতের স্টিমার বাস্কেট কিনে রাখতে হবে।

চায়ের নিমন্ত্রণ

দুপুর বা রাতের খাওয়া না-ই খাওয়ালেন, বাড়িতে হাই-টি খাওয়াতে চাইলে তার জন্যও টেবিলের সাজ জরুরি। তখন খুব বাহারি চামচ-ছুরি দরকার নেই। তবে সেরামিক বা কাচের স্ন্যাকস প্ল্যাটার-ট্রে, সুপ বোল সেট টেবিলে সাজিয়ে রাখতে পারেন। দেখতে ভাল লাগবে।

চায়ের টেবিল সাজানোরও নানা ধরন আছে।

চায়ের টেবিল সাজানোরও নানা ধরন আছে। ছবি: ফ্রিপিক।

চায়ের কেটলি-কাপ রাখুন টেবিলের মাঝ বরাবর বা এক পাশে। সঙ্গে কুকি-জার রাখতে পারেন।

যদি চায়ের সঙ্গে রোস্টেড চিকেন অথবা ফিশ ফ্রাই বা কোনও ভাজাভুজি খাওয়ান, তা হলে ফ্রায়েড সার্ভিং ট্রে-তে সেগুলি রেখে, যত জন অতিথি সেই হিসেবে কোয়ার্টার প্লেট সাজিয়ে দিন। প্রতিটি প্লেটের সঙ্গে রাখতে হবে ন্যাপকিন। প্লেটে ভাজাভুজি তুললে যা তেল শুষে নিতে পারে।

ঘরোয়া আড্ডা

হঠাৎ অতিথিরা আসবেন বলেছেন, অথবা ঘরে খাওয়াদাওয়ার সামান্য আয়োজন করেছেন, সে ক্ষেত্রে এত কায়দাকানুন না করে ছিমছাম ভাবেই টেবিল সাজান। তবে তাতে রুচির ছোঁয়া থাকতে হবে।

টেবিলে আগেই পরিষ্কার টেবিল ক্লথ পেতে নিন। যদি ঝোল জাতীয় খাবার থাকে, তা হলে গাঢ় রঙের লিনেন টেবিল ক্লথ বেছে নিতে পারেন।

টেবিলের  ‘রূপ’কথা।

টেবিলের ‘রূপ’কথা। ছবি: ফ্রিপিক।

যদি চার জনের বসার ছোট টেবিল হয় তা হলে টেবিলের মাঝে ফুলদানি রাখলে অনেকটা জায়গা চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে উপরে পেতে দিন রানার। তার উপর রাখুন নকশা করা নুন ও মরিচদানি। দেখতে ভাল লাগবে।

লিনেনের উপর পাতুন টেবিল ম্যাট। টেবিল ম্যাটও নানা রকমের হয়। কী ধরনের খাবার পরিবেশন করছেন সে অনুযায়ী পাটের, মাদুরের মতো, প্লাস্টিকের বা ওয়াটারপ্রুফ টেবিল ম্যাট বেছে নিন। শুকনো খাবার হলে বেতের টেবিল ম্যাটও ভাল।

কাচের বা সেরামিকের প্লেট সাজিয়ে দিন। প্লেটের উপরেই রাখুন ন্যাপকিন। টেবিলে রেখে দিন একটা টিস্যু বক্স।

পরিপাটি টেব্‌লের সাজ।

পরিপাটি টেব্‌লের সাজ। ছবি: ফ্রিপিক।

বেতের বা কাচের কয়েকটি কোস্টার রাখতে পারেন টেব্‌লে। তার উপর জলের গ্লাস বা বোতল বসিয়ে দিন।

টেবিলের আকার একটু বড় হলে ৬ জন বা ৮ জনের বসার জায়গা থাকলে, তাতে বিভিন্ন রকমের শো-পিস রাখতে পারেন। মাঝামাঝি ছোট গাছ বা ফুলদানি রাখলে টেবিলের রূপই বদলে যাবে। ফলের রেকাবি বা বেতের ঝুড়ি রাখলেও ভাল দেখাবে।

পাত পেড়ে ভূরিভোজ

পাত পেড়ে পঞ্চব্যঞ্জন খাওয়াতে যদি চান, তার জন্য টেবিলের সাজ কিন্তু জরুরি। রান্না যেমনই হোক, বেড়ে দেওয়ার কায়দায় তা হয়ে উঠতে পারে আরও লোভনীয়।

কাঁসা বা পিতলের থালাবাটি সাজাতে পারেন টেবিলে। রুপোর সেট থাকলে তো কথাই নেই। টেবিল বড় হলে থালার পাশে বাটি সাজিয়েই দিতে পারেন। না হলে বারে বারে বেড়ে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অতিথির বাঁ দিক থেকে পরিবেশন শুরু করবেন।

লুচি-তরকারি দিয়ে শুরু করতে চাইলে, আগে আলাদা প্লেটে লুচি, তরকারি বা বেগুন ভাজা গুছিয়ে পরিবেশন করুন। তার পর ভাতের থালা পাতবেন।

 রান্না যেমনই হোক, বেড়ে দেওয়ার কায়দায় তা হয়ে উঠতে পারে আরও লোভনীয়।

রান্না যেমনই হোক, বেড়ে দেওয়ার কায়দায় তা হয়ে উঠতে পারে আরও লোভনীয়। ছবি: ফ্রিপিক।

পাতের প্রথমেই ভাজা দিতে হবে। ডান দিক থেকে শুক্তো, চচ্চড়ি বা তরকারি, ডাল হয়ে মাছ বা মাংসের বাটি সাজান। ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক ধরে থালার চারপাশে বাটি সাজাতে হবে।

থালার একেবারে বাঁ দিকে থাকবে দই ও মিষ্টির প্লেট। একদম ডান দিকে রাখবেন জলের গ্লাস।

বাঙালি ভোজে পাতে নুন, লেবু-লঙ্কা দিতেই হবে। অথবা আলাদা ছোট প্লেটেও তা রেখে দিতে পারেন।

যদি কাঁসা বা পিতলের থালাবাটি না থাকে, তা হলে কাচের প্লেট ও বাটিতেই খাবার সাজিয়ে দিন। প্লেটের উপর মাপ মতো কলাপাতা রাখতে পারেন। দেখতে ভাল লাগবে।

বাড়িতে তো অতিথিদের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। একটু যত্ন নিয়ে টেবিলে সাজালে আপনজনেদের জন্য এলাহি আয়োজনই করা যায়।

Home Decoration Home Decor Tips

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}