নানা রকম ফলের গাছ হোক বা সব্জির বাগান— বাড়িতে কম জায়গাতেও দিব্যি করা যাবে। এর জন্য কী মাটি লাগবে, কতটা লাগবে তা ভাবনাচিন্তা করার আর দরকার নেই। মাটি ছাড়াই দিব্যি ফসল ফলাতে ফলবে। তরতরিয়ে বাড়বে গাছের চারা। নির্দিষ্ট সময়ে তাতে ফুল ও ফলও ধরবে। আর মাটি যেহেতু লাগছে না, তাই বাগান নোংরাও হবে কম এবং পোকামাকড়ের উৎপাতও কম হবে। এমন বাগান করতে চান?
শুনতে অবাক লাগলেও, এখন কৃষিপদ্ধতি অনেক উন্নত হয়েছে। মাটি ছাড়াই ফসল ফলানোর নতুন পদ্ধতি বেরিয়ে গিয়েছে। একে বলা হয় ‘হাইড্রোপোনিক’ পদ্ধতি। মাটি ছাড়া কেবল নানা পুষ্টি উপাদানে মেশানো জল দিয়েই ফসল ফলানো যাবে। জল ও গাছের জন্য জরুরি পুষ্টি উপাদান— এই দুটি জিনিস সময়ান্তরে ও সঠিক পরিমাণে দিলেই যে কোনও রকম গাছ লাগাতে পারবেন কম জায়গাতেই। এই পদ্ধতিতে কম খরচে ও কম সময়ে গাছের চারা তৈরি করাও সম্ভব। মাটির কোনও বালাই না থাকায় জলের সাশ্রয় হয় প্রায় ৯৫%। বীজ থেকে চারাগাছে রূপান্তর ঘটে মাত্র সাত-আট দিনে।
‘হাইড্রোপোনিক’ পদ্ধতিতে কী ভাবে বাগান হবে?
কয়েকটি জিনিসের প্রয়োজন হয়। বাড়িতে কম জায়গাতে ছোট করে বাগান করতে হলে স্বল্প খরচেই তা করা যাবে। নানা রকম পদ্ধতি আছে।
মাটি যেহেতু লাগছে না, তাই নারকেল ছোবড়া বা পারলাইট অথবা রক উল, ক্লে পেবেল ব্যবহার করে গাছের চারা লাগাতে পারেন বা বীজ পুঁততে পারেন। নারকেলের ছোবড়া বা পারলাইট জল টেনে গাছের শিকড়ে সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন:
ডিপ ওয়াটার কালচার- এই পদ্ধতিতে চারা গাছের শিকড় জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। সেই জলে নানা রকম পুষ্টি উপাদান ও সার মেশাতে হবে। শিকড় জল থেকেই তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান টেনে নেবে।হাই

হাইড্রপোনিক পদ্ধতিতে বাগান করলে মাটির প্রয়োজন হবে না। ছবি: ফ্রিপিক।
নিউট্রিয়েন্ট ফিল্ম টেকনিক (এলএফটি)- বড় বড় পাইপের মতো চ্যানেল তৈরি করে নিতে হবে আগে। চ্যানেলের ভিতরে গাছের চারা লাগিয়ে তার ভিতর দিয়ে পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ জলের সরবরাহ করতে হবে। জলের ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি। সে জন্য ছোট পাম্পও লাগিয়ে নিতে হবে।
অ্যারোপোনিক্স- কম জায়গায় অনেক রকম গাছ বা সব্জি ফলাতে হলে এই পদ্ধতিটি কাজে আসতে পারে। ছোট ছোট চ্যানেলে অসংখ্য গাছ লাগানো যাবে। গাছের শিকড় বাতাসে ঝুলবে। তবে তাতে বারে বারে জল ও নিউট্রিয়েন্ট সলিউশন স্প্রে করতে হবে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম দিয়ে এই সলিউশন তৈরি করতে পারেন।
ড্রিপ সিস্টেম- গাছের গোড়ায় ড্রিপ লাইনের মাধ্যমে জল আসবে। পাম্প ও টাইমার সেট করতে হবে। শিকড় শুকিয়ে গেলেই যেন টাইমার সিগন্যাল নেয়। তখন আবার পাম্প চালিয়ে জল সরবরাহ করতে হবে।
ছোট গাছ যেমন তুলসি, লেটুস বা পুদিনা এই পদ্ধতিতে ফলাতে পারেন। ছোট ট্রে-তে পাথর বা ক্লে পেবেল রেখে তাতে নিউট্রিয়েন্ট সলিউশন দিয়ে চারা লাগাতে হবে। বারে বারে জল বদলাতে হবে। জলের পিএইচ ৫.৫-৬.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে।
হাইড্রপোনিক পদ্ধতিতে ঘরের ভেতরে বা ঢাকা জায়গায় বাগান করতে হলে জোরালো এলইডি আলো বা সোলার প্যানেল বসাতে পারেন।