Advertisement
E-Paper

ঘরোয়া শেফদের সৃষ্টি এ বার দোকানে

কয়েক দশক আগেও এমনটাই দেখা গিয়েছে।চকোলেট-ভক্ত ছেলেদের মুখে রুচবে ভেবে পুরনো কলকাতার বনেদি গিন্নি নিজে পাড়ার ময়রাকে চকোলেট সন্দেশের রেসিপি বাতলেছেন। পরবর্তী কালে যা বাঙালির মিষ্টি-মানচিত্রে সসম্মানে ঠাঁই করে নিয়েছে। এ বারও যেন তারই অ্যাকশন রিপ্লে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৪
তিন বিজয়ী (বাঁ দিক থেকে) নন্দিনী দত্ত, গৌতম দাস, সুলক্ষণা বসু। শনিবার, শহরের একটি হোটেলে। দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।

তিন বিজয়ী (বাঁ দিক থেকে) নন্দিনী দত্ত, গৌতম দাস, সুলক্ষণা বসু। শনিবার, শহরের একটি হোটেলে। দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।

কয়েক দশক আগেও এমনটাই দেখা গিয়েছে।

চকোলেট-ভক্ত ছেলেদের মুখে রুচবে ভেবে পুরনো কলকাতার বনেদি গিন্নি নিজে পাড়ার ময়রাকে চকোলেট সন্দেশের রেসিপি বাতলেছেন। পরবর্তী কালে যা বাঙালির মিষ্টি-মানচিত্রে সসম্মানে ঠাঁই করে নিয়েছে। এ বারও যেন তারই অ্যাকশন রিপ্লে।

সেলিমপুরের নন্দিনী দত্ত বেশ পুলকিত, তাঁর দুই মেয়েকে সুকৌশলে ছানা খাওয়াতে গিয়ে মাথা খাটিয়ে বার করা স্ট্র্যাটেজি শহরের বিদগ্ধ রন্ধন-শিল্পীদের তারিফ কুড়িয়ে নিলেন। নন্দিনীর দুই মেয়েরই দুধ খাওয়া বারণ, ডাক্তারবাবু ছানা খেতে বলেছিলেন। কিন্তু ছানা তাদের মুখে রোচে না। তাই ছানার সঙ্গে ক্যাডবেরি, কোকো পাউডার, ভ্যানিলা এসেন্স প্রয়োগ করে নতুন কসরত করেছিলেন। সুচারু গার্নিশিংয়ে সেই সৃষ্টিরই নাম দিয়েছেন ‘চকো ডিলাইট’। এবিপি-সংস্থার ‘ক্যাডবেরি মিষ্টি সেরা সৃষ্টি’ প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডে যা দুই বিচারক শেফ জয়মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও শেফ শন কেনওয়ার্দির মন জয় করে নিল। আজ, রবিবার কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া-হুগলির ৫০টি মিষ্টির দোকানের ২৪টি আউটলেটে এই নতুন মিষ্টি শোভা পাবে।

কবরডাঙার গৃহবধূ সুলক্ষণা বসুরও জয়জয়কার মিষ্টি-রসিকমহলে। সুলক্ষণার কাছেও নিজের দশ বছরের পুত্রের মন জয় করাটা ছিল চ্যালেঞ্জ। সেই চেষ্টা থেকেই নতুন মিষ্টির আইডিয়া। চকোলেট কুকিজ গুঁড়িয়ে তার সঙ্গে ফ্রেশ ক্রিম, ক্ষীর, গলানো ডেয়ারি মিল্ক ইত্যাদি নানা উপকরণযোগে মাত করে দিয়েছেন তিনি। মুচমুচে এই ‘পপ টার্ট’ মিষ্টির দোকানের শোকেসে দীর্ঘায়ু হবে বলেও পেশাদার মিষ্টি-স্রষ্টারা ঢালাও শংসাপত্র দিয়েছেন।

আর চুঁচুড়ার যুবক গৌতম দাস দেখিয়ে দিয়েছেন, ঘরোয়া রান্নার প্রতিভায় ছেলেরা মেয়েদের থেকে কম যায় না একফোঁটা। নিজে মাথা খাটিয়ে বার বার ঠোক্কর খেয়ে ক্যাডবেরি সন্দেশের পাক তৈরি করেছেন ক্ষীর ও ছানা মিশিয়ে। এই ‘ক্রিম চকোলেট’ সন্দেশ রূপেও কম যায় না। ঠিক যেন ফুলগাছের
টবের আদল।

ক্যাডবেরি মিষ্টি প্রতিযোগিতায় অপেশাদার মিষ্টি-স্রষ্টাদের মধ্যে রেষারেষি-পর্বে সুলক্ষণা, নন্দিনী ও গৌতমই সেরা। ‘চকো শেফ’ শিরোপা পেয়েছেন তাঁরা। বিচারক জয়মাল্য ও শন দু’জনের মতেই, ক্যা়ডবেরি ও মিষ্টির যুগলবন্দি অনেক সময়ে কিটকিটে মিষ্টি হয়ে ওঠে। বেশি খাওয়া যায় না। ‘‘প্রতিযোগিতার সেরাদের সৃষ্টিতে মিষ্টির এই ভারসাম্যটাও দেখা হয়েছে।’’— বললেন জয়মাল্য। ‘চকো শেফ’দের সৃষ্টি মিষ্টিই এ বার দোকানে গড়বেন নামী ময়রারা। চন্দননগরের সূর্য মোদক, ভবানীপুরের বলরাম, রিষড়ার ফেলু মোদক, শ্রীরামপুরের মহেশ ময়রা, কলকাতার গাঙ্গুরাম-গুপ্ত ব্রাদার্স, নলিনচন্দ্র বা কে সি গোপেরা খতিয়ে দেখেছেন কোন মিষ্টিগুলো বিক্রি করার জন্য জবরদস্ত হবে।

অসংখ্য উৎসাহীর মধ্যে তিন জন সেরার শিরোপা পেলেও মিষ্টি-স্রষ্টারা অনেকেই নতুন নতুন আইডিয়ার হদিস পেয়ে পুলকিত। চকোলেট-ঠাসা গুলাবজামুন একটুর জন্য প্রথম তিনে আসেনি। প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বে চকোলেটের বরফি বা রাবড়ির মতো কয়েকটি আইটেমও অনেকের পছন্দ হয়েছে। মফস্‌সলের এক মিষ্টি-স্রষ্টা বলেন, ‘‘এত মৌলিক ভাবনার সচরাচর দেখা মেলে না। তার সঙ্গে যে মিষ্টিগুলো অনেকটা টেঁকসই হবে, বা বিক্রি করা সহজ হবে, সেটা ভেবেও সেরাদের বাছাই করা হয়েছে।’’

অপেশাদার স্রষ্টাদের সৃষ্টি কোন দোকান কত ভাল আত্মীকরণ করল, মিষ্টিখোরদের ভোটাভুটিতে এ বার জমবে সেই প্রতিযোগিতাই।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy