Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Sugar

মধুরেণ সমাপয়েৎ

ওজন বাড়ার ভয়ে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকেই ভরসা রাখেন চিনির বিকল্পে। কিন্তু চিনির বিকল্প কতটা স্বাস্থ্যকর? জেনে নিন বিশদে ওজন বাড়ার ভয়ে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকেই ভরসা রাখেন চিনির বিকল্পে। কিন্তু চিনির বিকল্প কতটা স্বাস্থ্যকর?

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০২:০৭
Share: Save:

চিনি খাবেন নাকি তার বিকল্প? গুড়, মধুর মতো প্রাকৃতিক বিকল্প? নাকি আর্টিফিশিয়াল সুইটনারস? মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলেই সঙ্গে সঙ্গে মাথার ভিতরে উঁকি দেয় নানাবিধ প্রশ্ন। বাড়িতে মিষ্টি কিছু তৈরি করতে গেলেও চিনি না গুড় দিয়ে তৈরি করবেন, তা নিয়েও দ্বন্দ্ব। শুধুই কি চিনি? চা, কফির কাপে চিনি বাদ দিলেও, কাপকেক, পায়েস, আইসক্রিম, প্রিয় সন্দেশের মাধ্যমে রোজই বেশ খানিকটা চিনি খাওয়া হয়ে যায়। তার সঙ্গে রয়েছে ফ্রুট জুস বা এয়ারেটেড ড্রিঙ্কস। বাজারচলতি এনার্জি ড্রিঙ্কস বা ফ্রুট জুসেও মেশানো থাকে হাই ফ্রুক্টোস কর্ন সিরাপ (এইচএফসিএস)। তাই শুধুই চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করলে হবে না। প্রথমেই বাজারচলতি মিষ্টি স্বাদের খাবার কমাতে হবে খাদ্যতালিকা থেকে। তবে তার আগে জানা দরকার চিনি কি সত্যিই ক্ষতিকর?

চিনি ভাল না খারাপ?

ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়ালের কথায়, ‘‘আমাদের দেশে চিনি তৈরি হয় আখ থেকে। সেটা কিন্তু খুব খারাপ নয়। চিনির বিকল্প হিসেবে অনেকেই গুড়, মধু খান। কিন্তু মনে রাখতে হবে, গুড়, মধু ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিকল্পেও চিনির সমান ক্যালরি থাকে। কৃত্রিম বিকল্পও খেতে পারেন। অনেক কফিশপেই যে ব্রাউন সুগার বা সুগারফ্রি দেওয়া হয়, সেটা থাকে স্যাশেতে। তাই যখন চা বা কফিতে তা মেশানো হয়, চামচের হিসেব থাকে না। একটা স্যাশে কম পড়লে অনেকেই আর একটা স্যাশে খুলে মিশিয়ে নেন। এ সব দিকেও খেয়াল রাখা দরকার।’’ প্রিয়ার মতে, সুগারকেন থেকে তৈরি চিনি পরিমাণ মতো খেলে ক্ষতিকর নয়। তবে মধুমেহ বা ওবিস রোগীদের চিনি বা মিষ্টি খাবার খাওয়া কমাতে হবে।

একজন সুস্থ মানুষ চিনি খেলে কিন্তু সমস্যা নেই। তবে জানতে হবে, শরীরের অবস্থা অনুযায়ী কতটা চিনি তিনি খেতে পারেন। বেশি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে টাইপ টু ডায়াবিটিস, ওবেসিটির রোগীদের সমস্যা জটিল হতে পারে। সব খাবারের চিনির পরিমাণ মিলিয়ে একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ পুরুষ দিনে ৯ চা চামচ এবং মহিলা ৬ চা চামচ চিনি খেতে পারেন। কিন্তু ভারতে যেহেতু ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বেশি, তাই আমাদের দেশের মানুষদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ দিনে ৫ চা চামচের বেশি করা একেবারেই উচিত নয়।

চিনির পরিবর্তে কী?

চিনি না খেলেও মিষ্টি খাবার খেতে কি একদম ইচ্ছে করবে না? তা তো হয় না। তাই খুঁজতে হবে তার বিকল্প। চিনির বিকল্প দু’রকমের— প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম। যদি মিষ্টি খাবারে খাদ্যগুণ বজায় রাখতে চান, তা হলে প্রাকৃতিক বিকল্প বেছে নিন। প্রাকৃতিক বিকল্পের ক্যালরি চিনির সমানই থাকে। কিন্তু সেই খাবারে ভিটামিন, মিনারেলস ইত্যাদি খাদ্যগুণও পাবেন। অন্য দিকে ডায়াবিটিস বা ওবেসিটির সমস্যা থাকলে, ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে বেছে নিতে হবে কৃত্রিম সুগার।

প্রাকৃতিক বিকল্প কোনগুলি?

গুড়, মধু, ম্যাপল সিরাপ প্রাকৃতিক বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রিয়া বললেন, ‘‘১ চা চামচ চিনিতে ৪৫ ক্যালরি এবং সমপরিমাণ গুড়েও ৪৫ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। মধুতেও একই পরিমাণ। কিন্তু মধুর ফর্মেশন আলাদা হয়। আর এতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসও প্রচুর।’’ ওবিস বা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্যালরি কমাতে চাইলে এই বিকল্প খুব একটা সাহায্য করবে না। তবে এদের গুণ আছে। যেমন, গুড়ে আয়রনের পরিমাণ বেশি। তাই অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগলে গুড় বেশি উপকারী। অন্য দিকে মধুতেও চিনির তুলনায় খনিজ বেশি থাকে। তা ছাড়া চিনির চেয়ে মধু অনেক ধীর গতিতে রক্তে শর্করা রিলিজ় করে। সে দিক থেকেও মধুর উপকার বেশি। এ ছাড়াও মঙ্ক সুগার ব্যবহার করতে পারেন খাবারে। তবে তা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।

কৃত্রিম বিকল্প

আর্টিফিশিয়াল সুইটনারে ক্যালরি সামান্য। কোনও নিউট্রিশনাল ভ্যালুও নেই। তাই একে এনএনএস বা নন-নিউট্রিটিভ সুইটনারসও বলা হয়। কৃত্রিম সুইটনারের অল্প ব্যবহারেই মিষ্টি অনেক বেশি হয়। অন্য দিকে ক্যালরিও কম গৃহীত হয় শরীরে। কারণ আমাদের শরীরের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কৃত্রিম সুইটনার গ্রহণ করে না। এদের মধ্যে অ্যাসপার্টেম, এসিসালফেম-কে, নিয়োটেম, স্যাকারিন, সুক্রালোজ়, স্টিভিয়ার ব্যবহারই বেশি।

কৃত্রিম সুইটনারস কি নিরাপদ?

এফডিএ অর্থাৎ ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আমেরিকা) স্টিভিয়া বাদে বাকি পাঁচটি আর্টিফিশিয়াল সুইটনারসকে গ্রাস (জেনারেলি রিকগনাইজ়ড অ্যাজ় সেফ) লেবেল দিয়েছে। স্টিভিয়া অবশ্য এখনও এই তকমা পায়নি। কারণ স্টিভিয়া নিয়ে এখনও পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। হিনা বললেন, ‘‘কৃত্রিম সুইটনারসের কিন্তু কোনও সাইড এফেক্টস নেই। তবে নির্ভর করছে আপনি রোজ কতটা খাচ্ছেন। যদি এডিআই (অ্যাকসেপ্টেবল ডেলি ইনটেক) মেনে চলেন, তা হলে সমস্যা নেই। দিনে পাঁচ-ছ’টি ট্যাবলেটের আর্টিফিশিয়াল সুইটনারস খেতে পারেন।’’ কারণ যাঁদের সত্যিই ওবেসিটি, ডায়াবিটিস বা অন্য কোনও অসুখে চিনি খাওয়া বারণ, তাঁদের কিন্তু এটাই নিরাপদ অপশন।

চিনি হোক বা তার বিকল্প, মনে রাখতে হবে পরিমাণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিষ্টি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হলে তাতে লাগাম পরাতেই হবে। বাকি ক্ষেত্রে ভরসা রাখতে পারেন বিকল্পে। তবে অবশ্যই নিজের শরীর বুঝে ডায়াটিশিয়ান ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sugar Weight Loss
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE