অফিসের গেটের উল্টো দিকের ফুটে ভুট্টাওয়ালার ঠিকানা। সাইকেল টানা ভ্যান আর এক খানা উনুন সঙ্গী তাঁর। সেই ভ্যানের উপর কয়েক স্তরে সাজানো ছোট-বড়-মাঝারি ভু্ট্টা। বিকেল চারটের পরে গোটা বর্ষাকালটাই তাঁকে দেখা যায় সেখানে। বৃষ্টি হলে রঙিন ছাতা মেলে বসে থাকেন লাল রঙের টুলে। পাশে রাখা মাটির উনুনের কয়লার আগুন হাতপাখা দিয়ে ধিকিয়ে দিতে দিতে। আঁচ গণগণিয়ে ওঠে। স্যাঁতসেঁতে দিনে ভুট্টার মতো খানিক নিজেকেও সেই ওমে সেঁকে নেন। বেশি ক্ষণ সুযোগ হয় না। ছাতা মাথায় অফিস পাড়ার দাদা-দিদিরা ভিড় করতে শুরু করেন বিকেল গড়াতে না গড়াতেই। উনুনের আঁচ নেবে সন্ধ্যা পেরিয়ে। তার আগে ভুট্টাওয়ালার হাতপাখা আর হাত দুই-ই চলতে থাকে। এক হাত করে আঁচে হাওয়া দেওয়ার কাজ। অন্য হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেয় ভুট্টা। দানা ঝলসে গেলে ভুট্টা ভ্যানের উপরে রাখা কাঠের তক্তায় উঠে আসে। সেখান জোড়া বাটিতে সাজানো নুন-লঙ্কা-চাট মশলার গুঁড়ো আর আধখানা করে কাটা লেবু। ব্যস্ত সমস্ত ক্রেতাদের অপেক্ষায় রেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য চলে ভুট্টায় লেবু-মশলা মর্দন। তার পরে হাত বদল। আবার উনুনে মন ভুট্টাওয়ালার। খোলায় মুড়িয়ে ভুট্টায় কামড় দিতে দিতে ততক্ষণে আপন পথে অফিসপাড়ার ভুট্টারসিকেরা। তাঁরা জানেন এ স্বাদের ভাগ হবে না।
এতো গেল তাঁদের কথা, যাঁরা বাড়ির বাইরে থাকেন। যাঁরা বাড়িতে থাকেন, তাঁদের ভুট্টাবিলাস একটু অন্য রকম। রাস্তার মোড়ের ধোঁয়া ওঠা ভুট্টার ওম বাড়িতে বসে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁদের ভুট্টা আসে কাঁচা অবস্থায়। যাতে ইচ্ছে হলে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভুট্টা বাড়িতেই সেঁকে নিতে পারেন। মুশকিল হল, বাড়িতে মাটির উনুন নেই, নেই কয়লার ধোঁয়া। তার পরেও রাস্তার ধারের ভুট্টার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন না। একটু সাবধান হলে স্টোভটপে ভুট্টা সেঁকতে গিয়ে পুড়ে তেতোও হবে না।
১। বাড়িতে ভুট্টা এনে ফ্রিজে রাখলে তার আর্দ্রতা নষ্ট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভুট্টা পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভুট্টা যখন সেঁকবেন বলে ভাবছেন, তার মিনিট ২০ আগে ভুট্টাগুলি জলে ভিজিয়ে রাখুন অন্তত ১০-১৫ মিনিট। তার পরে জল থেকে তুলে মিনিট পাঁচেক একটি ঝুড়িতে জল ঝরিয়ে নিন। তার পরে সেঁকুন।
২। বাড়িতে বেগুন পোড়ানোর মতো যে কোনও সব্জি ঝলসে নেওয়ার এক ধরনের জালি পাওয়া যায়। তেমন জালি কিনে ফেলুন। দাম একেবারেই বেশি নয়।
৩। আঁচ বেশি বাড়িয়ে রাখলে অসুবিধায় পড়তে পারেন। তাই সাবধানে থাকতে মাঝারি আঁচে সেঁকুন। আঁচ বেশি হলে ভুট্টার দানার উপরের অংশটি কালচে হয়ে তেতো হয়ে যাবে, কিন্তু ভিতরের অংশ নরম হবে না।
৪। ১০-১৫ সেকেন্ড অন্তর ভুট্টার ডাঁটি ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দিন। যাতে সব দিক সমান ভাবে ঝলসায়। এই পর্বে একটু বেশি সময় লাগলে লাগুক। কিন্তু ভুট্টায় স্বাদ আনতে এই পর্বটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৫। আগুনের খুব কাছে ধরবেন না। উনুনে পোড়ানোর মতো ধোঁয়াটে গন্ধ পেতে হলে ধীরে ধীরে ঝলসাতে দিন। চার পাশে সোনালি হয়ে এলে এবং উপরে অল্প অল্প কালো রং ধরলে তুলে নিন।
৬। রাস্তার ধারের ভুট্টায় মাখন বা তেল দেওয়া হয় না। কিন্তু আপনি চাইলে অল্প মাখন বা সর্ষের তেল উপরে মাখিয়ে দিতে পারেন।
৭। মশলার জন্য দু’টি শুকনো লঙ্কা আগুনে ঝলসে হাতে গুঁড়িয়ে নিন। তার সঙ্গে মেশান বিটনুন, আর অল্প চাটমশলা। ওই মশলা আর লেবুর রস ভুট্টায় ঘষে নিলেই তৈরি আপনার বর্ষার ‘পারফেক্ট’ ভুট্টা।