Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
international women's day

International Women’s Day 2022: অভিনেত্রী থেকে ফুলওয়ালি, নানা কাজে ব্যস্ত মেয়েরা কেমন কাটাচ্ছেন নারী দিবস

শহরের মহিলারা কী ভাবে পালন করেন নারী দিবস? রইল নারী দিবসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত কয়েক জন নারীর রোজনামচা।

নারীরা শক্ত হাতে, যত্ন করে যেমন সংসারের হাল ধরেন, তেমনই বহির্জগতেও তাঁরা অন্যনা।

নারীরা শক্ত হাতে, যত্ন করে যেমন সংসারের হাল ধরেন, তেমনই বহির্জগতেও তাঁরা অন্যনা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ১৪:০১
Share: Save:

বিশ্ব জুড়ে ৮ মার্চ পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস’। দিনটির পিছনে রয়েছে শ্রমজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের ইতিহাস। নারীরা শক্ত হাতে, যত্ন করে যেমন সংসারের হাল ধরেন, তেমনই বহির্জগতেও তাঁরা অন্যনা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন তাঁরা। জীবনের নানা স্তরে বৈষম্যের শিকার হয়েও সেই বাধা পেরিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নজির গড়ছেন। নারী দিবসে রইল বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত কয়েক জন নারীর রোজনামচা।

ঐন্দ্রিলা সেন, অভিনেত্রী

নারী দিবস উপলক্ষে আলাদা পরিকল্পনা কোনও বছরই থাকে না। তা ছাড়া নারী দিবস কবে, সেটাও মাঝেমাঝে ভুলে যাই। সত্যি কথা বলতে, নিজের জন্মদিন ছাড়া কোনও তারিখই আমার মনে থাকে না। আমি এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, যেখানে বছরের প্রত্যেকটি দিনই আমি ভীষণ যত্নে থাকি। প্রতি দিনের মতো আজ সকালে প্রথমে জিমে গিয়েছিলাম। তার পর শ্যুটিং ছিল। বোন আমার কাছে বেড়াতে এসেছে। তাড়াতাড়ি শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়ায় বোনকে নিয়ে এক বার বেরিয়েছিলাম। তবে সেটা নারী দিবস উদ্‌যাপন করতে নয়। নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে।

ঐন্দ্রিলা সেন

ঐন্দ্রিলা সেন

শঙ্করী দাশগুপ্ত, গৃহবধূ

চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাই ডাক্তার বলেছেন, বিছানা থেকে একদম না উঠতে। কর্তা সকালে টিভি চালিয়েছিলেন, তখনই কানে এল আজ ‘নারী দিবস’। গত বার মনে আছে, ছেলে হঠাত্ একটা কেক নিয়ে হাজির। বলল, ‘আজ নারী দিবস’। বাড়ির সব মহিলারা মিলে আনন্দ করে কেক কেটেছিলাম। ওই টুকুই। ইদানীং চারদিকে নারী দিবস নিয়ে এত হইচই শুরু হয়েছে কই আগে তো ক‌খনও শুনিনি। সত্যি বলতে জানিও না কেন পালন করা হয় এই দিনটি। বছরের আর পাঁচটি দিনের মতো আজকের দিনটিও আমার কাছে এক। সুস্থ থাকলে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সবটা আজও একা হাতে সামলাই। চোখের সমস্যার কারণে বিকেলে দোকানে গিয়ে বসতে পারছি না। সুস্থ হয়ে উঠলেই আবার দোকানে যাব। আমি দোকানে গেলে কর্তা দু’ঘণ্টা আগে বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। সেটিই আমার কাছে অনেক। আর ওই যে বললাম, মিষ্টি খেতে ভালবাসি। আজও ছেলে একটা কেক নিয়ে এলে মন্দ হবে না!

শঙ্করী দাশগুপ্ত

শঙ্করী দাশগুপ্ত

পিঙ্কি কাঞ্জি, গৃহ পরিচারিকা

রোজের মতোই ঘুম ভাঙল ৫টায়। দুই মেয়ের টিফিন তৈরি করলাম, স্বামীর জলখাবার। দু’জন আলাদা স্কুলে পড়ে। দু’জনকে তাই আলাদা স্কুলে পৌঁছে দিলাম। সকাল ৭:৩০টায় লেক গার্ডেনসের এক আবাসনে পৌঁছাই সাইকেলে করে। শুরু হয় চার বাড়ির কাজ। কাপড় কাচা, ধুলো ঝাড়া, ঘর পরিষ্কার, বাসন মাজা— এই করতেই ১২.৩০টা বেজে গেল। তার পরই তাড়াতাড়ি দুই মেয়েকে বাড়ি আনলাম। দু’জনকে দুপুরে খাবার খাইয়ে আমাদের খাওয়াদাওয়া করতে করতে ৩.৩০টে-৪টে বেজে যায়। তার পর আবার যাব বিকেলের কাজ করতে। কিন্তু এই কাজ আর ভাল লাগছে না। কয়েক দিন হল কনে সাজানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। সপ্তাহে এক দিন অন্তর ক্লাস হয়। মাসে ১৫টি। ৬ মাসের কোর্স। শিখে গেলে ঠিক করেছি, বিউটিশিয়ানের কোর্স করব। স্যর বলেছেন, আমি তাড়াতাড়ি কাজ শিখে ফেলতে পারব। কারণ আমি নাকি ক্লাসে বাকিদের তুলনায় বেশি টিপটপ হয়ে যাই। মন দিয়ে কাজ শিখে রোজগারের অন্য উপায় খুঁজে নিতে চাই।

পিঙ্কি কাঞ্জি

পিঙ্কি কাঞ্জি

ঝুমা সেন, আইনজীবী

রোজের মতো আজও সকাল থেকে দিনের নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমি মূলত কলকাতা হাইকোর্টে কাজ করি। সকালে উঠে তাই আদালতের উদ্দেশে রওনা হলাম। সারা দিন কাটল কোর্টের নানা দায়িত্ব সামলে। নারী দিবসেও তার বাইরে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে অনেক দায়িত্ব থাকে। আদালতে দিনের কাজ শেষ করেই কিছু ক্ষণের জন্য বাড়ি যাব। ঘরের কিছু কাজকর্ম করব। তার পর দৌড়োতে হবে নিজের চেম্বারে। বালিগঞ্জে চেম্বারেও প্রতিদিন অনেকটা সময় দিতে হয়। আর তা ছাড়া, এই দিনটি হল ‘আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস’। সে কথা কত জন মনেই বা রাখেন? এ দিনটি তো রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া করে আর ঘরের জিনিসে ছাড় পেয়ে কাটানোরও নয়। দিনটির তাৎপর্য যে সে সবের গেরোয় পড়ে লঘু হতে বসেছে, সে কথা মনে করেই আমার নারী দিবস কাটছে!

ঝুমা সেন

ঝুমা সেন

শোভারানি সরকার, ফুল বিক্রেতা

২৭ বছর বয়স থেকে সতীনকে নিয়ে আলাদা থাকেন আমার স্বামী। সেই থেকে এই কাজ করছি। ফুল বিক্রি করে ছেলে-মেয়েকে বড় করেছি। আজও ফার্স্ট ট্রেনে করে প্রথমে বারাসাত গেলাম। রাতে ২.৫৮ নাগাদ প্রথম ট্রেন ছাড়ে বনগাঁ থেকে। সেই ট্রেন ঠাকুরনগরে আসে ৩.১৫ নাগাদ। ঠাকুরনগর থেকে মাল নিয়ে বারাসাতে নেমে অর্ধেক মাল নামিয়ে আবার ৭.৩৭-এর মাজেরহাট ধরেছি। আজ মেয়ে বাড়িতে ছিল, তাই সঙ্গে ভাত দিয়ে দিয়েছে। ও সব দিন থাকে না। ডান্স গ্রুপে নাচ করে। মেয়েকে নিয়ে চিন্তা নেই। ও রোজগার করে গত মাসে আমাকে মোবাইল কিনে দিয়েছে। গানও ভরে দিয়েছে। ফোন ধরতে পারি, কিন্তু করতে হলে মালতি কিংবা চায়না ধরিয়ে দেয়। মেয়ে না থাকলে অন্য দিন সকালে পান্তা আনি। দুপুরে ভাতের হোটেল ধরা আছে। বিক্রি ঠিক হলে ওখানে খাই। ছেলেটার শরীরে পুরো বাপের রক্ত। কাম ধান্দা নাই। আজ কার জন্মদিন জানি না। এ সব বড় লোকের রঙ্গ-তামাশা। আগের বছর এই সময়ে কার একটা জন্মদিন ছিল। পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা নাড়ু আর টুপি দিয়েছিল। সেটা এই ব্যাপার কি না, তা মনে নেই।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

international women's day Women's Day Special
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE