Advertisement
E-Paper

কোলোস্ট্রামের গুরুত্ব কী, এখনও জানেন না অনেকে

হলুদ দুধ, অর্থাৎ কোলোস্ট্রামের উপকারিতা নিয়ে এ দেশে প্রচার শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। শিশুরোগ চিকিৎসক অরুণ সিংহ বলেন, ‘‘কোলোস্ট্রামের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এতে থাকা বিশেষ ইমিউনোগ্লোবিন সদ্যোজাতকে জীবাণুযুক্ত পরিবেশের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা দেয়।’’

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৮
সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোলোস্ট্রাম থেকে বঞ্চিত করবেন না তাকে। ছবি: শাটারস্টক।

সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোলোস্ট্রাম থেকে বঞ্চিত করবেন না তাকে। ছবি: শাটারস্টক।

সরকারি স্তরের প্রচার সত্ত্বেও তথ্য বলছে, সে ভাবে বদলায়নি ছবি। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে গাঢ় হলুদ রঙের মাতৃদুগ্ধ (কোলোস্ট্রাম) পান করানোর প্রবণতায় রাজ্যের কিছু অনুন্নত এলাকায় ইতিবাচক সাড়া মিলছে।
অথচ, কোলোস্ট্রাম সম্পর্কে আজও অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের কোনও ধারণা নেই। এটাই যে প্রচারের বড় ব্যর্থতা, মানছে চিকিৎসক মহল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং ইউনিসেফের রিপোর্টেও ধরা পড়েছে ভারতের এই দৈন্য ছবি। রিপোর্টে প্রকাশ, সমীক্ষা চালানো ৭৬টি দেশের মধ্যে ভারত ৫৬তম। অথচ তালিকার প্রথম দশে রয়েছে রোয়ান্ডা, ভুটান, উরুগুয়ের মতো দেশ।
তবে গত সাত বছরে কলকাতার ছবিটা বদলেছে বলে দাবি কলকাতা পুরসভা এবং পুর এলাকার ৫৮ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে শিশু ও মায়ের পুষ্টি নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই দুই ওয়ার্ডের বস্তিগুলিতে পুষ্টির সচেতনতা নিয়ে কাজ চলছে। তবে সাফল্যে বড় বাধা পরিযায়ী বাসিন্দারা। ভিন্ রাজ্য থেকে এসে অনেকেই দিনমজুরের কাজ করতে এ শহরে ঘাঁটি গাড়েন। কাজ না থাকলে নিজের রাজ্যে চলে যান। এঁদের চিহ্নিত করে পুষ্টির কাজ চালানো কঠিন— বলছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও পুরসভা।
এ ক্ষেত্রে অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির একটি পুরুলিয়ায়। এক সময়ে শিশু-মৃত্যুতে এ রাজ্যে প্রথম ছিল ওই জেলা। তাতে রাশ টানতে ২০০৩ সালে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো হাসপাতালে নবজাতক চিকিৎসার কেন্দ্র গড়ে ওঠে। কম খরচে কী ভাবে রুগ্ণ ও কম ওজনের শিশুদের বাঁচানো যায়, তা দেখিয়েছিল ওই কেন্দ্র। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘পুরুলিয়া মডেল’ নামে পরিচিত।
পরিবর্তনের সেই ধারা বজায় রেখেই পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার মা ও শিশুর অপুষ্টি নিরাময়ে গত বছর থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে ইউনিসেফ। জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮৩১। গর্ভবতী ও সদ্যপ্রসবা মা এবং ছ’মাস থেকে ছ’বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের মাসে অন্তত ২২ দিন খাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে কেন্দ্রগুলিকে নির্দেশ দেন জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায়।
পুরুলিয়ার গ্রাম স্তরেও যে পরিবর্তন আসছে, তার প্রমাণ লোহারশোল, বেদিয়াপাড়ার মতো এলাকা। শহরের কোল ঘেঁষা এই গ্রাম এখনও অশিক্ষার অন্ধকারে। কিন্তু নিজের বয়স না জানা মুকুলা বেদিয়াও জেনে গিয়েছেন, জন্মের পরপরই বেরোনো গাঢ় হলুদ রঙের মাতৃদুগ্ধ সদ্যোজাতকে খাওয়ানো মানে তা চল্লিশটা ইঞ্জেকশনের সমান। তাই গত মাসেই যখন পুত্রবধূ মামণির সন্তান জন্মায়, মুকুলা নিজেই কাঁথায় জড়িয়ে মামণির কোলে শিশুকে তুলে দিয়েছিলেন হলুদ দুধ খাওয়াতে।
হলুদ দুধ, অর্থাৎ কোলোস্ট্রামের উপকারিতা নিয়ে এ দেশে প্রচার শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। শিশুরোগ চিকিৎসক অরুণ সিংহ বলেন, ‘‘কোলোস্ট্রামের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এতে থাকা বিশেষ ইমিউনোগ্লোবিন সদ্যোজাতকে জীবাণুযুক্ত পরিবেশের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা দেয়।’’ ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান মহম্মদ মহিউদ্দিন বলছেন, ‘‘এখানেই সাফল্য। মুকুলা একটা উদাহরণ। এমন বহু শাশুড়িকে সহজ ভাষায় বোঝানো গিয়েছে কোলোস্ট্রামের পুষ্টিগুণ।’’
লড়াই চলছে কলকাতাতেও। গত মাসেই শুরু হয়েছে ৫৮ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন নজরদারি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতাল, এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাসে এক বার ওই এলাকায় আসবেন নার্সরা। প্রসূতি এবং মায়েদের সঙ্গে তাঁরা সরাসরি কথা বলবেন। তাতে ভাল সাড়া মেলার প্রত্যাশায়
পুর প্রশাসন।

Health Medical Colostrum Child Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy