প্রতীকী ছবি।
কোভিডের কারণে এ বছরটা আর পাঁচটা বছরের তুলনায় আলাদা। এ বারের পুজোটাও আলাদা। তাই অন্যান্য বছরের মতো বল্গাহীন আনন্দে না মেতে নিজের সন্তান ও পরিবারের মুখ চেয়ে এবং অন্যের কথা ভেবেই এ বার আমাদের সংযমী হওয়ার পুজো। একটা বছর না হয় ঘরেই থাকলেন! এই টুকু সামাজিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আপনার শিশুর কাছেও এই পুজোটা না হয় ‘অন্য পুজো’ হয়ে রইল!
প্রতি বছরই পুজোর কয়েকটি দিন দেখতে পাই, ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের কাউকে কোলে নিয়ে, কারও হাত ধরে দলে দলে প্রতিমা দর্শনে বেরিয়েছেন বাবা-মায়েরা। মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁরা ঠিক কতটা মজা পান তা জানি না, কিন্তু শিশুরা ওই প্রবল ভিড়ভাট্টা, দূষণে বিশেষ আনন্দবোধ করে না। ঘুমের অনিয়ম, বাইরের খাবার খেয়ে শরীর খারাপ করে চিকিৎসকের কাছে আসা— এ সব প্রতি বছরই দেখছি। এ বছরেও সন্তানের হাত ধরে পুজোর কেনাকাটায় মেতে উঠেছেন অনেকেই। যে শিশুকে লকডাউনের সময়ে বা তার পরেও বাড়ির বাইরে বেরোতে দেননি বাবা-মা, আজ তাকে কোলে নিয়েই দিব্যি পুজোর কেনাকাটা করতে দোকানে বা শপিং মলে ভিড় জমিয়েছেন তাঁরা! দূরত্ব-বিধির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে জামাকাপড়, কানের দুল কিনতেই বিভোর হয়ে গিয়েছেন। এমনকি সন্তানকে মাস্কটুকু পরানোর প্রয়োজনও ভুলেছেন অনেকে। খুব ছোট শিশুদের অবশ্য মাস্ক পরানো সম্ভব নয়। ফলে তাদের পক্ষে এই ভিড় কিন্তু মারাত্মক।
লকডাউনের সময়ে ঘরে থাকায় যেটুকু সংযম তবুও দেখা গিয়েছিল, পুজোর মরসুমে তা কার্যত উধাও। বাজারে বাঁধভাঙা ভিড় দেখে পুজোর ক’টা দিন কী হতে চলেছে, তা ভেবেই চিন্তা হচ্ছে। কারণ, মনে রাখতে হবে, পুজোয় বেরিয়ে কিন্তু বাড়ির ছোটদের এবং বয়স্কদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন আপনি নিজেই। বদলে এ বছর একটু অন্য রকম শিক্ষা দিন না সন্তানকে! তাদের হাত ধরে মণ্ডপে ঘোরার বদলে সামাজিক কর্তব্যবোধ শেখান, শেখান অন্যের পাশে দাঁড়াতে। শেখান আরও মানবিক হতে।
মনে রাখবেন, পুজোর ভিড়ে করোনাকে যে শুধু নিজের শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ করে দেবেন, তা নয়। সেই সঙ্গে সংক্রমিত হতে পারেন আপনার বয়স্ক বাবা-মা বা দুধের শিশুটিও। আর ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিড ১৯-এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী এবং কতটা, তা কিন্তু এখনও অজানা। কোভিড-পরবর্তী উপসর্গের (সিন্ড্রোম) পরিধি কতটা, তা এখনও গবেষণাসাপেক্ষ। গত কয়েক মাসে শুধু কলকাতা শহরেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছোট শিশুরা করোনামুক্ত হওয়ার কয়েক মাস পরে দেখা গিয়েছে যে, তার শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নিজের ছাপ রেখে গিয়েছে কোভিড। কোভিড আক্রান্ত একটি শিশুর ফুসফুস এর ফলে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তা-ও কিন্তু এখনই ঠিক ভাবে বলার সময় আসেনি। তাই একটা পুজোয় না হয় মণ্ডপ দর্শনের বদলে টিভি বা ফেসবুকেই প্রতিমা দর্শন করার শিক্ষা দিলেন সন্তানকে!
মৃত্যু, আর্থিক সঙ্কট, চাকরিতে ছাঁটাই, আত্মহত্যা— সব মিলিয়ে অতিমারির এই বছরটা কিন্তু মোটেই আনন্দের নয়। তাই এই পুজোয় নতুন জামাকাপড়ের গন্ধে বা প্রতিমা দর্শনে নয়, বরং অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই পুজোর আনন্দ খুঁজে নেওয়ার শিক্ষা দিন সন্তানকে। সন্তানের জন্য নতুন জামা একটু কম কিনে সেই টাকায় বরং আরও একটি শিশুর চিকিৎসার সুযোগ করে দিলেন। তাতে আপনার সন্তান প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা পাবে।
জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy