E-Paper

আইভি ড্রিপের খুঁটিনাটি

চটজলদি ক্লান্তি কাটাতে, ভিটামিন-মিনারেলের চাহিদা মেটাতে ইন্ট্রাভেনাস ড্রিপ কি আদৌ ভাল? জেনে নিন।

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৩

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

দিনভর ব্যস্ততা, ডায়েট... এ সব কিছুতে এনার্জি থেকে শুরু করে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদির ঘাটতি হতেই পারে। তা মেটাতে এখন তারকাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আইভি ড্রিপ নেওয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার এক হেলথ রিসর্টে ভিটামিন থেরাপি নেওয়ার ছবি পোস্ট করেছিলেন অর্জুন কপূর। হাতে ছিল আইভি চ্যানেল ড্রিপ। তার পর থেকেই ফের চর্চায় উঠে এসেছে এই আইভি বা ইন্ট্রাভেনাস ড্রিপ।

কী এই আইভি ড্রিপ?

এই থেরাপির সাহায্যে শরীরে চটজলদি জল, ভিটামিনস, মিনারেলস ইত্যাদির মাত্রা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে শিরায় চ্যানেল করে প্রয়োজনীয় তরল রক্তে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত ক্রিস্টালয়েড সলিউশন অর্থাৎ ছোট মলিকিউলের তরল যা সহজে রক্তের মাধ্যমে কোষে মেশে, তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ স্যালাইন ওয়াটার (সোডিয়াম ক্লোরাইড মিশ্রিত জল), ডিফাইভডব্লিউ ওয়াটার (ডেক্সট্রোজ় অর্থাৎ গ্লুকোজ়, জলে এ ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ডেক্সট্রোজ় ব্যবহার হয়), ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ লিকুইড ইত্যাদি। এ ছাড়া, প্রয়োজন অনুযায়ী সহজে কোষ ঝিল্লি ভেদ করতে পারে না, এমন তরলও আইভি ড্রিপে দেওয়া হয়।

আদৌ কি দরকার আইভি ড্রিপ?

ডিহাইড্রেশন, প্রয়োজনীয় উপাদানের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আইভি ড্রিপ ব্যবহারে শরীর-মন তাজা হয়, ফিরে আসে ত্বকের জেল্লা, বাড়ে বিপাক হার, নিয়ন্ত্রণ করা যায় ডায়াবিটিস। চুল পড়া, ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ, শরীরের কোনও ব্যথা ইত্যাদি থেকেও মুক্তি দিতে পারে আইভি ড্রিপ। আর ঠিক এ কারণেই খেলোয়াড় ও বিনোদন দুনিয়ার অনেকেই তা নিয়ে থাকেন। শহরের কিছু পার্লার, হেলথ রিসর্টেও রয়েছে এই ব্যবস্থা। কিন্তু তারকাদের দেখাদেখি সাধারণ মানুষের আদৌ এ পথে পা বাড়ানো কি ঠিক?

ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “আপৎকালীন অবস্থায় আইভি ড্রিপ দেওয়া হয়। কিন্তু সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান পরিমাণে কমে গেলে এর চাহিদা খাবারের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব। ড্রিপের তুলনায় সময় বেশি লাগলেও তা স্বাস্থ্যকর। বরং আইভির কারণে শরীরে অন্য সমস্যা হতে পারে।”

  • রক্তের নিজস্ব ঘনত্ব থাকে। তা বেড়ে, কমে যাওয়া ক্ষতিকর।
  • এ ক্ষেত্রে কী পরিমাণে, কতটা তরল, কতক্ষণ ধরে শরীরে প্রবেশ করবে সে মাত্রা ঠিকঠাক ভাবে নির্ণয় না করলে ব্যক্তির প্রাণসংশয় হতে পারে।
  • অতিরিক্ত তরল শরীরে ঢুকলে মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • তা ছাড়া, থ্রম্বোসিস, হেমাটোমা, সেলুলাইটিসের মতো সমস্যা হয়।
  • বাইরে থেকে তরল সরাসরি রক্তে মিশলে অনেক জীবাণু সোজাসুজি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
  • দক্ষ হাতে চ্যানেল না করলে বিপদের ভয় থাকে। চ্যানেলের যত্ন না নিলে সেখান থেকে চুলকানি, লাল ভাব, ব্যথা, রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চ্যানেলে বাবল তৈরি হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
  • শরীরের নিজস্ব কর্মক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়।

সতর্কতা

আইভি ড্রিপ নেওয়ার আগে শরীরের কিছু জরুরি উপাদানের মাত্রা কত রয়েছে, তা পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। চিকিৎসক, পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া আইভি ড্রিপ নেওয়া ঠিক না। উজ্জ্বল ত্বক পেতে বা অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্য আইভি ড্রিপ নিতে চাইলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি। গর্ভাবস্থায় তো বটেই, অন্য আরও কিছু অসুস্থতায় এই ড্রিপ ক্ষতিকর। তারকাদের প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে সব সময়েই বেশি। কিন্তু তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণ করার আগে ভাল করে যাচাই করে নিন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fatigue Health care

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy