Advertisement
E-Paper

সদ্যোজাতকে মায়ের কাছে রাখতে চালু হচ্ছে ‘ক্যাঙারু কেয়ার’

ন’মাস একসঙ্গে থাকলে কী হবে, জন্মের পরমুহূর্ত থেকেই মা ও সদ্যোজাতের আলাদা ঠাঁই। লেবার রুম বা অপারেশন থিয়েটার থেকেই মা যখন ওয়ার্ডে যান, সন্তানকে তখন পাঠানো হয় নার্সারিতে। শিশু চিকিৎসকদের বহু আপত্তি সত্ত্বেও এত দিন এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:১২

ন’মাস একসঙ্গে থাকলে কী হবে, জন্মের পরমুহূর্ত থেকেই মা ও সদ্যোজাতের আলাদা ঠাঁই। লেবার রুম বা অপারেশন থিয়েটার থেকেই মা যখন ওয়ার্ডে যান, সন্তানকে তখন পাঠানো হয় নার্সারিতে। শিশু চিকিৎসকদের বহু আপত্তি সত্ত্বেও এত দিন এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। অবশেষে সন্তানকে মায়ের বুকের কাছে রাখার ‘ক্যাঙারু কেয়ার’ ব্যবস্থা ফের চালু হচ্ছে কিছু কিছু হাসপাতালে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে শিশুর মানসিক বৃদ্ধি যেমন যথাযথ হবে, তেমনই মায়ের বুকের দুধ তৈরিতেও বিশেষ ভাবে কাজ করবে এই ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য।

শিশু চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী, সদ্যোজাতদের জন্য সেরা জায়গা মায়ের পাশটিতে থাকা, অর্থাৎ ‘রুমিং ইন’। সল্টলেকের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালে সম্প্রতি এই পরিষেবা শুরু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চিকিৎসকেরা বহু দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। হাসপাতালের তরফে অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নার্সারিতে এক সঙ্গে রাখলে এক শিশুর থেকে অন্য শিশুর শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। মায়ের কাছে থাকলে সেই ভয় অনেক কম।’’ স্ত্রী রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, নার্সারিতে বেশির ভাগ সময়েই শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়ানো হয়। ফলে পরবর্তী সময়ে শিশু মায়ের বুকের দুধ খেতে চায় না। এটা খুব বড় সমস্যা। তিনি বলেন, ‘‘রুমিং ইন মা ও শিশু, দু’জনের জন্যই জরুরি। জন্মের পরেই মায়ের বুক থেকে রোগ প্রতিরোধকারী যে কোলোস্ট্রাম নিঃসৃত হয়, সেটাও মায়ের পাশে থাকলেই শিশুকে খাওয়ানো সম্ভব হয়। নার্সারিতে সেই সুযোগ থাকে না।’’

ইদানিং বেশির ভাগ শিশুর জন্মই হয় সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। ফলে বহু ক্ষেত্রেই মায়ের বুকে দুধ আসতে দেরি হয়। চিকিৎসকদের মতে, শিশুকে মায়ের সঙ্গে রাখা হলে তার সঙ্গটাই মায়ের দুধ নিঃসরণে সাহায্য করবে। তা ছাড়া, শিশু মায়ের সংস্পর্শে থাকলে মায়ের হৃৎস্পন্দন এবং উষ্ণতায় সে অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করে। তা হলে কেন মা ও শিশুকে আলাদা করে রাখা হয়? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সিজারিয়ানের পরে মায়ের শারীরিক অবস্থা ঠিকঠাক না থাকলে সরাকরি হাসপাতালে বাধ্য হয়েই আলাদা রাখা হয়। এক কর্তার কথায়, ‘‘ওয়ার্ডে দেখবে কে? নার্সের সংখ্যা তো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই সব বুঝেও আমাদের হাত-পা বাঁধা।’’

আর বেসরকারি হাসপাতাল? চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, শিশুকে আলাদা রাখলে মা ও শিশুর থাকার জন্য আলাদা খরচ নেওয়া যায়। তাই বেসরকারি হাসপাতালগুলি কোনও ভাবেই এক সঙ্গে রাখতে রাজি হয় না। এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা। মধ্য কলকাতার এক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের যথেষ্ট শারীরিক ধকল হয়। তাই প্রাথমিক ভাবে মায়ের সুস্থতার কথা ভেবেই নার্সারির চল হয়েছে। একই বক্তব্য বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও।

যদিও এই দাবিকে যুক্তিহীন বলেছেন নবজাতক চিকিৎসক অরুণ সিংহ। তাঁর বক্তব্য, শিশুকে জন্মের পরে মায়ের সঙ্গে রাখাটাই এক সময়ে ঐতিহ্য ছিল এ দেশের। এ দেশে আসার পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের অফিসারদের স্ত্রীদের জন্য প্রথম মা ও শিশুকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা চালু করেছিল। কারণ, তাদের মনে হয়েছিল সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে ক্লান্ত মা-কে কিছুটা বিশ্রাম দেওয়ার জন্যই ওই ব্যবস্থা জরুরি। তিনি জানান, দেশে ফিরে গিয়ে ইংরেজরা সেই ব্যবস্থা বদল করে মা ও সদ্যোজাতকে এক সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা চালু করে। কিন্তু এ দেশে এখনও পর্যন্ত ইংরেজদের চালু করা নিয়মই আঁকড়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জন্মানোর আগে থেকেই বাচ্চা মায়ের হার্টবিট, মায়ের গন্ধ চেনে। তাই জন্মের পর তাকে মায়ের কাছেই রাখা উচিত। তা না হলে তার উদ্বেগ বেড়ে যায়, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ধাক্কা খায়। বুদ্ধির বিকাশে প্রভাব পড়ে।’’ মা ও সদ্যোজাতের সুস্থতার জন্য সর্বত্রই এই ব্যবস্থা চালু করার উপরে জোর দেন তিনি।

rooming in kangaroo care new born baby baby mother relation baby mother bondage motherhood soma mukhopadhyay new kangaroo care process
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy