Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Mental Stress

‘মনের রোগ আবার রোগ নাকি!’ পুলিশ উদাসীন আর কত দিন

চার দিনের ছুটিতে গিয়ে আরও ৩৫ দিন পরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন পুলক ব্যাপারি নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই কনস্টেবল। কাজে যোগ দিয়ে নিজের সার্ভিস রিভলভার নেওয়ার পরের দিনই তিনি আত্মঘাতী হন।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি। Sourced by the ABP

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৭
Share: Save:

কখনও থানার গেটের সামনে, কখনও বা খাদ্য ভবনের মধ্যেই নিজের সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে কনস্টেবলের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিজের বাসভবনে সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে একই রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা দলের এক পুলিশকর্মীও। তবে, এই সমস্ত কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছিল বেকবাগানের কাছে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউটপোস্টে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীর এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর ঘটনা। একাধিক জনকে আহত এবং এক তরুণীকে খুন করে আত্মঘাতী হন কলকাতা পুলিশের ওই কর্মী। কিন্তু একের পর এক এমন ঘটনার পরেও কি বাহিনীর অন্দরে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে উদাসীনতা কাটেনি?

মঙ্গলবার বিকেলে পর্ণশ্রীতে কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবলের একই ভাবে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনার পরে নতুন করে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, চার দিনের ছুটিতে গিয়ে আরও ৩৫ দিন পরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন পুলক ব্যাপারি নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই কনস্টেবল। কাজে যোগ দিয়ে নিজের সার্ভিস রিভলভার নেওয়ার পরের দিনই তিনি আত্মঘাতী হন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, রিভলভার হাতে পেতেই কি কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি? পুলিশের তরফে আত্মহত্যার কারণ স্পষ্ট নয় বলে জানানো হলেও পারিবারিক বিবাদ ও ধারদেনার তত্ত্ব সামনে এসেছে। আরও জানা গিয়েছে, বেশি দিনের ছুটি চেয়েও না পাওয়ায় অখুশি ছিলেন ওই পুলিশকর্মী। এই সমস্ত কারণে তিনি অবসাদে ভুগছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন তিনি এত দিন পরে কাজে যোগ দিচ্ছেন, সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর না নিয়েই কী করে তাঁকে বন্দুক দিয়ে দেওয়া হল? কাজে যোগ দেওয়ার আগে এক জন পুলিশকর্মী মানসিক ভাবে কতটা সুস্থ, তা পরীক্ষা করা জরুরি নয় কি?

পুলিশকর্মীদেরই একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, পরীক্ষা করা তো দূর, কাজে যোগ দেওয়ার আগে শুধু নাম নথিবদ্ধ করলেই রাইফেল কিংবা রিভলভার দিয়ে দেওয়া হয়। কাজের সময় শেষ হলে ওই একই পদ্ধতিতে অস্ত্র হস্তান্তরিত হয়। সমস্যা হলেও শোনার কেউ থাকেন না। তাঁদের দাবি, এর মধ্যেই রোদ-জল উপেক্ষা করে ডিউটি করে যেতে হয়। তার উপরে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়ায় ক্রমাগত গাড়ির ধোঁয়া এবং হর্নের শব্দ। দীর্ঘদিন ধরে টানা অতিরিক্ত সময় কাজ করে যাওয়ার চাপও মানসিক সমস্যা তৈরি করে। খোঁজ করে জানা গেল, এই মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমাতে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকা তো দূর, কলকাতা পুলিশে শেষ বার ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ক্লাস’ কবে হয়েছিল, মনে করতে পারছেন না অনেকেই। পুলিশ হাসপাতালেও নিয়মিত কোনও মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য পাওয়ার সুবন্দোবস্ত নেই বলে অভিযোগ। কিছু দিন আগে এ বিষয়ে জোর দিতে ভবানী ভবনে ‘ওয়েলনেস সেন্টার’ তৈরি করে মনোবিদ রাখার পদক্ষেপ করা হলেও সে ভাবে কেউই আসেন না বলে খবর। মাঝেমধ্যে কিছু বেসরকারি সংস্থা যৌথ ভাবে পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে ক্লাসের আয়োজন করে ঠিকই, কিন্তু ওই পর্যন্তই। উল্টে ঘনিষ্ঠ মহলে বহু পুলিশকর্মীই বলেন, ‘‘মনের রোগ আবার রোগ নাকি!’’

‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র অধিকর্তা অমিত ভট্টাচার্য যদিও বললেন, ‘‘পুলিশের চাকরি এমন একটি বিষয়, যার সঙ্গে বহু ধরনের মানুষকে সামলানোর ব্যাপার জড়িয়ে থাকে। এমন কাজে প্রচণ্ড চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই পুলিশের পেশায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে করা দরকার।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘স্ট্রেস কী ভাবে হচ্ছে, সেটা দ্রুত চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এর বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেবে। আচমকা কম কথা বলা, যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া, আড্ডা বা অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, একা দীর্ঘক্ষণ উদাস ভাবে তাকিয়ে থাকা, আচমকা নেশা শুরু করা, অল্প নেশার অভ্যাস থাকলে হঠাৎ তা মারাত্মক বেড়ে যাওয়া বা ঘুমের সমস্যার মতো ব্যাপার দেখা দিতে পারে। সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ভাল পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পেলেও কিন্তু অনেকটা উপকার পাওয়া সম্ভব।’’ এই পরিবেশ পাওয়ার ক্ষেত্রেই কি কোথাও ঘাটতি হচ্ছে? কোনও পুলিশকর্তার কাছেই স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE