Advertisement
E-Paper

বালিকার মৃত্যুতে মারধর, কাজ বন্ধ মঙ্গলকোটের হাসপাতালে

চিকিৎসক না থাকায় জলে ডোবা এক বালিকাকে মঙ্গলকোট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করেছিলেন সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের এক নার্স। কিন্তু নিয়ে যেতে যেতেই মাঝ রাস্তায় মাথরুন গ্রামের পাঠান পাড়ার ওই বালিকা রেশমি খাতুন (৯) মারা যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫১
রেশমির মৃত্যুতে শোকার্ত পরিবারের লোকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

রেশমির মৃত্যুতে শোকার্ত পরিবারের লোকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসক না থাকায় জলে ডোবা এক বালিকাকে মঙ্গলকোট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করেছিলেন সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের এক নার্স। কিন্তু নিয়ে যেতে যেতেই মাঝ রাস্তায় মাথরুন গ্রামের পাঠান পাড়ার ওই বালিকা রেশমি খাতুন (৯) মারা যায়। খবর গ্রামে পৌঁছতেই বেশ কয়েকজন বাসিন্দা হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালায় ও নার্সকে মারধর করে বলে অভিযোগ। সোমবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের নার্স-সহ অন্য কর্মচারীরা নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার এসিএমওএইচ (কাটোয়া) ওই হাসপাতালের কর্মী ও নার্সদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতাল কার্যত এক বছর ধরে চিকিৎসকশূন্য। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে কোনও রোগীও ভর্তি হয় না। শুধুমাত্র বহির্বিভাগটি চালু আছে। তাও কোন দিন চিকিৎসক আসেন, আর কোন দিন আসে না তা কেউ জানে না। কার্যত নার্সদের উপরই নির্ভর করে চলে হাসপাতালটি। অথচ মঙ্গলকোটের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। অত্যাধুনিক মানের অস্ত্রপোচারের ঘর রয়েছে, রক্ত রাখার ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও প্রসূতি অস্ত্রোপচার চালু হয়নি এই হাসপাতালে। ক্ষোভ রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদেরও। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, চিকিৎসকের অপ্রতুলতার কারণেই ওই হাসপাতালে অস্ত্রপোচার চালু করা যায়নি।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকালে রেশমি পুকুরে হাত-পা ধুতে গিয়ে জলে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পাশের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু গিয়ে দেখেন, কোনও চিকিৎসক নেই। একমাত্র নার্স সুছন্দা দত্ত রয়েছেন। তিনি রোগীর অবস্থা দেখে মঙ্গলকোট বা অন্য কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলেন। দেরি না করে মোটরবাইকে চাপিয়েই মঙ্গলকোটের দিকে রওনা দেন তাঁরা। পথেই ওই বালিকা মারা যান। তারপরেই বিনা চিকিৎসায় শিশুমৃত্যুর অভিযোগ তুলে মাথরুন গ্রামের এক দল লোক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। নার্স সুছন্দা দত্তকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রেশমির বাবা ধুলো খান, তাঁদের আত্মীয় সুফান শেখ, লালচাঁদ শেখদেরও দাবি, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসাও হয় না। চিকিৎসক থাকলে এ ভাবে অঘোরে আমাদের মেয়েকে হারাতে হত না।”

এই ঘটনার পরেই ওই নার্স ও অন্য কর্মীরা হাসপাতালের গেটে তালা মেরে এলাকা ছেড়ে চলে যান। এসিএমওএইচ (কাটোয়া) পুলিশ, প্রশাসন ও দফতরের কর্তাদেরও বিষয়টি জানান তাঁরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ জুন এই হাসপাতালের সুপার হিসাবে যোগ দিয়েছেন ধীমান মণ্ডল। তিনি আবার হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসকও। কিন্তু সোমবার ছিলেন না কেন? তিনি জানিয়েছেন, কাজে যোগ দিলেও এখনও তিনি দায়িত্ব নেননি। তবে খবর শুনেই হাসপাতালে চলে এসেছেন। এ দিন এসিএমওএইচ (কাটোয়া) হাসপাতাল সুপার, নার্স ও কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেখানে নিরাপত্তার পাশাপাশি হাসপাতালের ন্যূনতম পরিষেবা চালু রাখার জন্য আরও চিকিৎসক নিয়োগের দাবি ওঠে। এসিএমওএইচ (কাটোয়া) কবিতা শাসমল তাঁদেরকে নিরাপত্তার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন এবং চিকিৎসকের দাবি নিয়ে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। তারপর হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়।

mangalkote rural health center singat health center girls death dead girl girl drowned hospital ransacked
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy