নিয়মের তোয়াক্কা না-করে যত্রতত্র যে কেউ আল্ট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র কিনে টাকার বিনিময়ে দেদার ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করছেন— এমন অভিযোগ উঠছিল অনেক দিন ধরেই। স্বাস্থ্য দফতরের পিসিপিএনডিটি কমিটি প্রথম-প্রথম কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক, নার্সিংহোমে আচমকা অভিযানও চালিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই অভিযানে ভাটা পড়ে। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিও নিয়মিত স্বাস্থ্য দফতরে আল্ট্রাসোনোগ্রাফির তথ্য পাঠাতে গড়িমসি করছিল। শেষে ইউএসজি যন্ত্রের বেহিসেবি ব্যবহারে কিছুটা অন্তত রাশ টানতেই পরীক্ষায় পাশের এই নতুন নিয়ম ঠিক করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
ঠিক হয়েছে, স্ত্রীরোগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক ও রেডিওডায়াগনসিস-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকেরা আগের মতো এখনও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে পারবেন। কিন্তু সাধারণ এমবিবিএস পাশ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে নিয়ম বদলে যাবে। যে সব এমবিবিএস চিকিৎসক বহুদিন ধরে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করছেন, এ বার থেকে তাঁদের রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। পাশ করলে একটি সরকারি শংসাপত্র পাবেন। একমাত্র তখনই তাঁরা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি চালিয়ে যাওয়ার বৈধতা পাবেন। প্রতি বছরই ওই পরীক্ষা নেওয়া হবে। আবার যে সব এমবিবিএস পাশ চিকিৎসক নতুন আলট্রাসোনোগ্রাফি শুরু করবেন, এ বার থেকে তাঁদের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ মাসের একটি সার্টিফিকেট কোর্স করতে হবে। তার জন্য বাছাইয়ের ইন্টারভিউ হবে আগামী ১২ ও ১৩ জুন।
সাধারণ এমবিবিএস-দের আলট্রাসোনোগ্রাফি চালিয়ে যাওয়ার শংসাপত্র দিতে প্রথম পরীক্ষাটি হয়েছিল গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ফল প্রকাশ হয়েছে তার ১৫ দিনের মধ্যে। ৭৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছেন ৭০ জন। তাঁদেরই অন্যতম শশী পাঁজা। দীর্ঘদিন দক্ষিণ কলকাতার এক ইনফার্টিলিটি সেন্টারে চিকিৎসক হিসেবে জড়িত। সেখানে বহুদিন ধরেই আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করেন তিনি। এখন অতটা সময় দিতে না-পারলেও যখনই ফাঁক পান, সেন্টারে চলে যান। স্বাস্থ্য দফতরের নতুন নিয়মে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় তাঁর পাশ করা প্রয়োজন ছিল। অন্যথায় আইনত তিনি আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে পারবেন না। দেরি না করে ৮ ফেব্রুয়ারির প্রথম পরীক্ষাতেই বসে যান শশী। থিওরি পরীক্ষা দেন সল্টলেকে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্র্যাক্টিক্যাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।
রাজ্যের আর এক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও মন্ত্রিত্ব সামলে পিএইচডি করেছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাত জেগে পড়তেন তিনি। শশী পাঁজা কী ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন?
শশী উত্তর দেন, ‘‘তেমন কিছু পড়তে পারিনি। তবে এত দিন ধরে কাজটা হাতেকলমে করছি, বিশেষ অসুবিধা হয়নি। রেজাল্ট বেরোনোর সময়ে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা বললেন, ‘ম্যাডাম আপনার পরীক্ষা খুব ভাল হয়েছে। ভাল ভাবে পাশ করেছেন।’ নম্বর আলাদা করে এখনও জানতে পারিনি।’’
কিন্তু চিকিৎসকদের জন্য এই নতুন নিয়মে কি ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণে লাগাম টানা যাবে? শশীদেবীর কথায়, ‘‘একটা চেষ্টা তো হোক। একটা বেড়া অন্তত থাকুক। এই শংসাপত্র চালু হলে অন্তত রাম-শ্যাম যে কারও একটা ইউএসজি যন্ত্র কিনে বসে পড়াটা অনেকটা কমবে।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারেরও এই পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। আবেদন করেছিলেন। পরে ব্যক্তিগত কিছু সমস্যায় এ বারে বসেননি।