Advertisement
E-Paper

ডাক্তার ও নার্সদের নিয়মে বাঁধার চেষ্টা

পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া হচ্ছে। শুরু হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়াও। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মনে সন্তুষ্টির জায়গাটা তৈরি হচ্ছে না। সরকারি স্বাস্থ্য-পরিষেবা সম্পর্কে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পর্যবেক্ষণের পরে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। আর তার জেরেই চিকিৎসক ও নার্সদের দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করে তাঁদের নিয়মের রশিতে বাঁধতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে এ নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। শীঘ্রই এ নিয়ে নির্দেশিকাও জারি হতে চলেছে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৫

পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া হচ্ছে। শুরু হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়াও। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মনে সন্তুষ্টির জায়গাটা তৈরি হচ্ছে না। সরকারি স্বাস্থ্য-পরিষেবা সম্পর্কে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পর্যবেক্ষণের পরে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। আর তার জেরেই চিকিৎসক ও নার্সদের দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করে তাঁদের নিয়মের রশিতে বাঁধতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে এ নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। শীঘ্রই এ নিয়ে নির্দেশিকাও জারি হতে চলেছে।

সরকারের এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। হাসপাতালে ডাক্তারদের সময়ে হাজিরা, সময়ে আউটডোর খোলা, রোগী প্রত্যাখান বন্ধ করার মতো বিষয়ে গত চার বছরে নানা সার্কুলার জারি হয়েছে। কিন্তু কোনওটাই বেশিদিন কার্যকর থাকেনি। ফলে এ বারেও দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করার প্রয়াস কতটা ফলপ্রসূ হবে সে নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এমন বহু ঘটনা ঘটছে যেখানে সঙ্কটজনক অবস্থার রোগীকে চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হচ্ছে বা শুধুমাত্র মেডিক্যাল পড়ুয়ারাই চিকিৎসা করছেন। সিনিয়র ডাক্তারের যখন অস্ত্রোপচার করার কথা, তখন তিনি দূরে কোনও নার্সিংহোমে রোগী দেখতে ‘ব্যস্ত’। তাঁর হয়ে অস্ত্রোপচার করছেন তাঁরই কোনও ছাত্র। পর পর এমন ঘটনা কানে আসায় বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্তাদের এ নিয়ে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এত টাকা, কর্মী নিয়োগের পরেও মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় খুশি নন। ডাক্তার ও নার্সদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে ভাবে হোক পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে বলেছেন তিনি। প্রয়োজনে কঠোর হতে বলেছেন।’’

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, মঙ্গলবারের বৈঠকে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সাম্প্রতিক মাতৃমৃত্যুর বিষয়টি একাধিক বার উঠে এসেছে। ওই সব ঘটনায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের গাফিলতি ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। বহু ক্ষেত্রেই যে ডাক্তারের অধীনে প্রসূতি ভর্তি হয়েছেন, তিনি একবার দেখতেও আসেননি। ফলে সিজারিয়ান-এর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। মাস কয়েক আগে এসএসকেএমে সুহানা ইয়াসমিন নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয় ডাক্তারদের এমনই দায় এড়ানোর অভ্যাসের জেরে। কোন ডাক্তার রক্ত দেবেন, তা নিয়ে টালবাহানা চলেছিল টানা দু’দিন। রক্ত না পেয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা যায় সুহানা। বৈঠকে সামনে এসেছে সেই প্রসঙ্গও।

সরকার গঠনের ঠিক পর পরই সরকারি হাসপাতালের হাল বদলাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মমতা। মহাকরণ যাওয়ার আগে বেশিরভাগ দিনই কোনও না কোনও হাসপাতালে আচমকা ঢুকে পড়তেন তিনি। বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির অধিকর্তা শ্যামাপদ গড়াইয়ের সঙ্গে এ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়লেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁর ওই আচমকা সফরের ফল ভালই হয়েছিল। ডাক্তারেরাও তটস্থ থাকতেন। কিন্তু ক্রমশ মমতার সেই অভিযান থিতিয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশের অনুমান, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই বেশি করে জোর দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সরকারি হাসপাতালের কর্মসংস্কৃতির ছবিটা বদলাতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবারের বৈঠকে স্থির হয়েছে, যাঁর অধীনে রোগী ভর্তি হচ্ছেন, সেই ডাক্তারকে যত দ্রুত সম্ভব এসে রোগীকে দেখতে হবে। স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়াদের উপরে দায়িত্ব চাপানো যাবে না। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকেই করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা করছেন কি না তা নজরে রাখবেন নার্সেরাও। ওটি-তে নার্সিং পড়ুয়াদের উপরে দায়িত্ব ছেড়ে রাখলে চলবে না। কোনও রোগীর মৃত্যুর পরে যদি চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে, তা হলে যাঁর অধীনে তিনি ভর্তি সেই ডাক্তার ও ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স এবং নার্সিং ইনচার্জের উপরে দায়িত্ব বর্তাবে। ‘আমি তো রোগীকে দেখিনি’ বলে দায় এড়ানো যাবে না।

শুধু ডাক্তার-নার্সদের দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করাই নয়, ডাক্তারদের কাজের পরিসর বাড়ানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের অভাবের অভিযোগ ওঠে সব সময়ে। তাই প্রিক্লিনিক্যাল ও প্যারা-ক্লিনিক্যাল অর্থাৎ ফিজিওলজি, অ্যানাটমি, ফরেন্সিক ইত্যাদি বিভাগের চিকিৎসকদের দৈনন্দিন রোগী পরিষেবার কাজে আরও বেশি করে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম দফায় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এই নিয়ম চালু হবে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘এটা দফতরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখনই কিছু বলব না।’’

Soma Mukhopadhyay Doctor Nurse Health medical college out door
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy