Advertisement
E-Paper

বছর পার, নীলরতনে রক্ত চুরির তদন্ত থমকেই

এক বছরে কিনারা তো দূরের কথা, এক চুল অগ্রগতিও হল না রক্ত চুরি রহস্যের। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর নজির ভূরি ভূরি। এ নিয়ে হাজারো অভিযোগের পরেও সরকারি উদাসীনতা ঠিক কতটা, তারও প্রমাণ মিলেছে বারবারই।

সোমা মুখোপাধ্যায় ও দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০০:২৯

এক বছরে কিনারা তো দূরের কথা, এক চুল অগ্রগতিও হল না রক্ত চুরি রহস্যের।

সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর নজির ভূরি ভূরি। এ নিয়ে হাজারো অভিযোগের পরেও সরকারি উদাসীনতা ঠিক কতটা, তারও প্রমাণ মিলেছে বারবারই। কিন্তু এক বছর আগে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপরীক্ষিত রক্ত রাতারাতি গায়েব হয়ে যাওয়ার তদন্ত কার্যত চেপে দেওয়ার নেপথ্যে আরও বড় কোনও উদ্দেশ্য আছে কি না, এ বার তা নিয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশ।

পাশাপাশি ওই স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এর আগে মাঝেমধ্যেই রক্ত চুরির অভিযোগ আসত। কিন্তু এনআরএসের ঘটনার পরে তেমন বড় অভিযোগ আসেনি। শীর্ষ কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, তা হলে কি নেপথ্যের কোনও চক্রীকে আড়াল করতেই রাতারাতি সতর্ক অপরাধীরা?

এনআরএস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তদন্ত একেবারেই এগোয়নি। কেন? জবাব তাঁরা দেননি। অপরীক্ষিত ওই রক্ত যাঁদের শরীরে যাবে, তাঁদের বড়সড় বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। কী ঘটতে পারে? রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের উপ-অধিকর্তা নয়ন চন্দ্র জবাব না দিয়ে ফোন রেখে দেন। বিভিন্ন তরফের এই নীরবতাই বিষয়টি সম্পর্কে আরও সন্দিহান করছে স্বাস্থ্য দফতরকে। অবিলম্বে এ ব্যাপারে নতুন করে তদন্ত শুরু করা যায় কি না, তার ভাবনাচিন্তাও চলছে। তবে এত দিনে বহু তথ্যপ্রমাণই লোপাট। তদন্তে কিছু পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

গত বছর জুলাইয়ে রক্তদান শিবির করেছিলেন আয়কর ভবনের কর্মীরা। সেখানে সংগৃহীত রক্ত জমা হয়েছিল এনআরএসে। কিন্তু পরীক্ষার আগেই সেই রাতে ওই রক্তের প্যাকেটগুলি চুরি হয়ে যায়। অপরীক্ষিত ওই রক্ত কোথায় গেল, তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্য জুড়ে। গড়া হয় তদন্ত কমিটিও। দু’সপ্তাহের মধ্যে সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বছর পরেও সেই তদন্তের কাজ তিলমাত্র এগোয়নি।

এনআরএস সূত্রের খবর, সেই রাতে সংগৃহীত রক্ত এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কে পৌঁছনোর পরে কর্মীরা রক্তের উপাদান পৃথক করে রাখেন। পরদিন পৃথক করা উপাদানগুলির মধ্যে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ম্যালেরিয়া এবং যৌনরোগের জীবাণু রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করতে গিয়ে কর্মীরা দেখেন, লোহিত রক্তকণিকার প্যাকেটগুলি উধাও। এই ঘটনার দিন কয়েক আগেই ওই ব্লাড ব্যাঙ্কেরই আলমারি থেকে একটি ফাইল খোয়া গিয়েছিল। ওই ফাইলে যাবতীয় রক্তদান শিবিরের তথ্য মজুত ছিল। রক্তদাতাদের কার্ডের বিস্তারিত তথ্যও ছিল। সেই ফাইলও আর পাওয়া যায়নি। দু’টি ঘটনার মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা অংশ।

এর পরে গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ যেমন এগোয়নি, তেমনই পুলিশও সেই ঘটনার তদন্ত করেনি বলে অভিযোগ। ফলে কিনারা হয়নি, কে বা কারা ওই রক্ত এবং ফাইল চুরি করেছিল। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, রক্তদাতাদের কার্ড ও তথ্য সম্পর্কিত ফাইল লোপাটের বিষয়ে একটি সাধারণ অভিযোগ জানানো হলেও, রক্ত চুরির অভিযোগই জমা পড়েনি।

স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এর আগে ব্লাড ব্যাঙ্কে বসেই রক্তের কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। কলকাতা মেডিক্যালে এ ব্যাপারে জড়িত কয়েক জনকে হাতেনাতে ধরেছে পুলিশ। এনআরএসের ঘটনার ক্ষেত্রে শুধু কালোবাজারি নয়, শহর ও শহরতলির বিভিন্ন বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং নার্সিংহোমের সঙ্গে বড়সড় চক্র জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। অবিলম্বে এটা আটকানো না গেলে বহু মানুষের জীবনসংশয় হতে পারে।’’

কিন্তু বিষয়টি যদি এত গুরুতরই হবে, তা হলে এক বছর পরে কেন টনক নড়ল স্বাস্থ্যকর্তাদের? যে রিপোর্ট দু’সপ্তাহে জমা পড়ার কথা, তা এত দিনেও জমা পড়ছে না দেখে তাঁরা কেন আগেই নড়ে বসলেন না? উত্তর মেলেনি সেই প্রশ্নেরও।

Soma Mukhapadhya Diksha Bhunia blood bank NRS police health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy