এক তরুণের চোখের পাতার উপরে টিউমর অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার পরে দেখা যায়, পাতার একাংশে একটি ছিদ্রের মতো ক্ষত তৈরি হয়েছে। এর জেরে চোখ শুষ্ক হয়ে কর্নিয়ার একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল চিকিৎসকদের। তার পরে দ্বিতীয় একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের পাতার ওই অংশের পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারটি চিকিৎসাগত ও কসমেটিক— দু’টি কারণেই প্রয়োজন ছিল। এই অস্ত্রোপচারের পোশাকি নাম অকুলোপ্লাস্টি।
চোখের আশপাশ, অর্থাৎ অক্ষিগোলকের পাশে, চোখের পাতা, ভুরু, অশ্রুনালি এবং চোখের তলার অংশের একাধিক অস্ত্রোপচারকে এক কথায় অকুলোপ্লাস্টি বলা হয়। চিকিৎসাগত একাধিক কারণের পাশাপাশি মুখের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্যও এই ধরনের অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই পেশার খাতিরে এই অস্ত্রোপচার করে থাকেন।
চিকিৎসাগত কারণ
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শুভ্রাংশু সেনগুপ্ত বলছেন, “চিকিৎসাগত কারণের মধ্যে রয়েছে চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়ার মতো সমস্যা। এ ক্ষেত্রে নেত্রনালি বা অশ্রুনালির মধ্যে ব্লক থাকলে তা অকুলোপ্লাস্টির মাধ্যমে দূর করা হয়। চোখের পাতা বা তার লাগোয়া কোনও জায়গায় টিউমর থাকলে অস্ত্রোপচারের পরে সেই অংশ পুনর্নির্মাণ করার প্রয়োজন হতে পারে। বার্ধক্য বা রোগের কারণে চোখের পাতা ঝুলে গেলে, অতিরিক্ত চামড়া বাদ দিয়ে সেই সমস্যার সমাধানও করা হয় অকুলোপ্লাস্টির মাধ্যমেই।” কারও চোখের পাতা ভিতরের দিকে ঢুকে গিয়ে মণির উপরে ঘষা খাওয়া বা দু’সারি আইল্যাশ থাকার সমস্যা দূরীকরণেও এই পথেই হাঁটেন চিকিৎসকেরা।
শুভ্রাংশু বললেন, “দুর্ঘটনার জেরে কারও চোখের চারপাশের হাড়ে আঘাত লাগতে পারে বা অক্ষিগোলক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর জন্য একাধিক অকুলোপ্লাস্টির পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। হাড়ে চোট লাগলে সূক্ষ্ম ধাতব পাত বসিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাড়ের গঠন রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়। আবার কোনও কারণে আঘাত লাগলে বা নার্ভে টিউমর হয়ে চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে প্রস্থেটিক বা কৃত্রিম চোখও তৈরি করা হয়, যা প্রতিস্থাপন করা হয় অকুলোপ্লাস্টির মাধ্যমে।”
তিনি জানাচ্ছেন, দু’টি চোখের মণি সমান্তরাল না থাকলে দৃষ্টি বাঁকা হয়, চলতি কথায় যাকে ট্যারা বলা হয়। অকুলোপ্লাস্টির মাধ্যমে এর সম্পূর্ণ থেকে আংশিক সমাধান করা সম্ভব। চোখে তীব্র শুষ্কতার সমস্যা, যা অনেক সময়েই আর্থ্রাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার জন্য চোখের মণির উপরের অংশ গলে যাওয়ার ভয় থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময়ে শুষ্কতা কমাতে সাময়িক ভাবে দুই চোখের পাতা জুড়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের অস্ত্রোপচারও পড়ে অকুলোপ্লাস্টির আওতায়।
কসমেটিক কারণ
সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য চোখের আশপাশে করা একাধিক প্রক্রিয়াও পড়ে অকুলোপ্লাস্টির মধ্যে। তার মধ্যে রয়েছে ক্রো’জ় ফিট বা চোখের চারপাশের বলিরেখা কমানোর জন্য চামড়ার তলায় পাতলা সুচ দিয়ে দেওয়া বোটক্স ইঞ্জেকশন। অবশ্য কিছু রোগের কারণে কেউ চোখের পাতা খুলতে না পারলেও বোটক্স ইঞ্জেকশনের দ্বারস্থ হতে হয়। সেটিকে এসেনশিয়াল বোটক্স ইঞ্জেকশন বলা হয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক শুভ্রাংশু। এ ছাড়াও, চোখের তলার অংশ বসে যাওয়া বা অতিরিক্ত ফোলা ভাব থাকার জন্যও অকুলোপ্লাস্টি করা হয়। আবার চোখের চারপাশ-সহ মুখের চামড়ার জেল্লা বাড়ানোর জন্য পিআরপি (প্লেটলেট রিচ প্লাজ়মা) পদ্ধতির আশ্রয়ও নেওয়া যেতে পারে।
কারা করেন অকুলোপ্লাস্টি?
চিকিৎসাগত কারণের অকুলোপ্লাস্টি চোখের সার্জন করতে পারেন। এটি একটি সুপার স্পেশালাইজ়েশনের মধ্যে পড়ে বলে জানাচ্ছেন শুভ্রাংশু। তবে সৌন্দর্য চিকিৎসার জন্য কসমেটিক অস্ত্রোপচার কোনও ডার্মাটোলজিস্ট, প্লাস্টিক সার্জন বা ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জন করতে পারেন। চোখের সমস্যা কতটা গভীর, কোন ধরনের অকুলোপ্লাস্টি হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে সার্জারির খরচ।
চোখের নানা সমস্যায় এখন দিশা দেখাচ্ছে অকুলোপ্লাস্টি। এই অস্ত্রোপচারের পরে কী ভাবে যত্ন নেবেন, সেটাও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো মেনে চলতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)