Advertisement
E-Paper

চপ্পল থেকে নুন! পাকিস্তানি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় ভারতে কোন কোন জিনিসের ‘অভাব’ হবে?

তালিকাটি খুব ছোট নয়। পাকিস্তান থেকে ভারত যে সমস্ত জিনিস সস্তায় কিনত, তার মধ্যে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু পাকিস্তান থেকে আপাতত কোনও বাণিজ্য জাহাজ বা কোনও পণ্যবাহী গাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে পারবে না। বাণিজ্য হবে না বিমানপথেও।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৫ ১৯:১৮

ছবি : সংগৃহীত।

পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বসিয়েছে ভারত। ফলে পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত খাবার এবং দৈনন্দিন কাজে লাগার জিনিসপত্র নিয়মিত বাণিজ্য পথে ভারতে এসে পৌঁছোতে, আপাতত তার ভারতে আসার পথ বন্ধ। এতে পাকিস্তানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হতে চলেছে ৪২৭০ কোটি টাকা। কিন্তু ভারতের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি? পাকিস্তান থেকে ভারত ঠিক কোন কোন জিনিস আমদানি করত, যা বন্ধ হলে ভারতে অভাব তৈরি হতে পারে? বা ঘুরপথে ভারতে আনলে দাম বাড়তে পারে?

তালিকাটি খুব ছোট নয়। পাকিস্তান থেকে ভারত যে সমস্ত জিনিস সস্তায় কিনত, তার মধ্যে যেমন শৌখিনীদের প্রিয় এক বিশেষ ধরনের চামড়ার চপ্পল রয়েছে, তেমনই রয়েছে স্বাস্থ্যসচেতনদের পছন্দের এক স্বাস্থ্যকর নুনও। রয়েছ আরও অনেক কিছু। কিন্তু পহেলগাঁও হামলা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ামক সংস্থা ডিজিএফটি পাক-পণ্য আমদানি বন্ধ করায় পাকিস্তান থেকে আপাতত কোনও বাণিজ্য জাহাজ বা কোনও পণ্যবাহী গাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে পারবে না। বাণিজ্য হবে না বিমানপথেও। ফলে পাকিস্তান থেকে আসা পণ্য ভারতে যদি আসেও তবে তা আসবে ঘুরপথে দুবাই বা অন্য দেশ হয়ে। তাতে অনেকটাই বাড়বে দাম।

কোন কোন জিনিস ভারত পাকিস্তান থেকে আমদানি করে?

১। হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট

পাকিস্তানের খেওরা সল্ট রেঞ্জে তৈরি হয় সেন্ধা নমক বা হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট। পিঙ্ক সল্ট ভারতে কেন গুরুত্বপূর্ণ? নুন খাওয়া নিয়ে যখন রাশ টানতে বলছেন চিকিৎসকেরা, তখন পিঙ্ক সল্টকে সাধারণ নুনের থেকে কম ক্ষতিকর বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদেরা। শুধু তা-ই নয়, ভারতে পিঙ্ক সল্টের ব্যবহার হয় পুজো বা উপোসের সময় রান্নাবান্না করতে এমনকি আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং প্রসাধনী তৈরি করতেও। পাকিস্তান থেকে আমদানি বন্ধ হলে এর বিকল্প খুঁজতে হবে বা ঘুরপথে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে ভারতকে।

২। শুকনো ফল

পাকিস্তান থেকে সস্তায় শুকনো খেজুর আমদানি করত ভারত। এ ছাড়া কাঠবাদাম, আখরোট, কিশমিশও আসত বালোচিস্তান এবং পেশোয়ার থেকে। বিশেষ করে ইদ, দীপাবলি এবং শীতকালে ওই শুকনো ফল আসত সবচেয়ে বেশি। পাকিস্তান থেকে শুকনো ফল না আনলে, ভারতে তার দাম অনেকটা বাড়তে পারে।

৩। পেশোয়ারি চপ্পল

পাকিস্তানের চামড়ার জিনিস গুণমানে ভাল। পাকিস্তান থেকে চামড়ার তৈরি পেশোয়ারি চপ্পল আমদানি করত ভারত। যে চপ্পল শৌখিনীদের কাছে প্রিয়। দেশের বহু ফ্যাশন ব্র্যান্ডও ওই ধরনের চপ্পল আমদানি করত পাকিস্তান থেকে। আমদানি বন্ধ হলে ভারতে ওই চপ্পল পাওয়া দুরূহ হবে। বিদেশ থেকে কিনতে হলে দিতে হবে বাড়তি কর।

৪। লাহোরি কুর্তা এবং পাকিস্তানি স্যুট

ভারত এবং পাকিস্তানের পোশাকের পছন্দ অনেকটাই মেলে। দু’দেশেই সালোয়ার, কুর্তা, লেহঙ্গা পরার চল আছে। পাকিস্তানের মিহি সুতোর উপর নকশা করা স্যুটের আলাদা চাহিদা রয়েছে ভারতে। ঢলঢলে হাতার, লম্বা ঝুলের কেতাদুরস্ত লাহোরি কুর্তা-পাজামার চাহিদাও ভারতে বিপুল। প্রতি বছর পাকিস্তান থেকে প্রচুর স্যুট এবং কুর্তা এসে পৌঁছোয় ভারতে। আপাতত, তা পাওয়া যাবে না। বা পেলেও দাম বাড়বে।

৫। মুলতানি মাটি এবং পটারি

যে মুলতানি মাটি রূপচর্চার জন্য মুখে ব্যবহার করা হয়, ব্যবহার করা হয় নানা প্রসাধনী তৈরির জন্যও, সেই মুলতানি মাটিও আসে পাকিস্তানের মুলতান থেকে। এর পাশাপাশি মুলতানি মাটির থালা-বাসনও শৌখিন ভারতীয়দের মধ্যে জনপ্রিয়। উজ্জ্বল নীল এবং সাদা রঙের নকশা তোলা সেই সব থালা-বাসন, ঘর সাজানোর জিনিস ভারতে পরিচিত মুলতানি পটারি নামে। আগামী দিনে হয়তো খাঁটি মুলতানি পটারি সহজলভ্য হবে না ভারতে।

৬। চিনিয়ট কাঠের কাজ

পাকিস্তানের চিনিয়ট শহরের কাঠের শিল্পীরা কয়েকশো বছর ধরে করে চলেছে কাঠে নকশা তোলার কাজ। কাঠের ক্যানভাসে সেই সূক্ষ্ম কারুকাজে চিনিয়টের শিল্পীদের টক্কর দিতে পারা দুষ্কর। শোনা যায়, তাজমহল এবং অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির তৈরি করার সময় চিনিয়টের মিস্ত্রিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেই গোষ্ঠীর হাতের কাজের কাঠের শিল্পেরও চাহিদা রয়েছে ভারতে। যা আপাতত সীমান্ত পেরিয়ে এ প্রান্তে আসবে না।

৭। উটের চামড়ার নকশাদার পণ্য

পাকিস্তানে উটের চামড়া থেকে ব্যাগ, জুতো, টেবিল ল্যাম্প থেকে শুরু করে ফুলদানি, ঘর সাজানোর নানা জিনিস তৈরি হয়। চামড়ার ছুরি দিয়ে নকশা করে তাতে নানা রকম রং দিয়ে তৈরি সেই সমস্ত জিনিস ফ্যাশন দুনিয়ায় তো বটেই, শিল্পপ্রেমীদের কাছেও জনপ্রিয়।

৮। দামি পাথর

পাকিস্তান থেকে পান্না, চুনি, নীলা টোপাজের মতো বহুমূল্য রত্ন আসে ভারতে। আবার মাঝারি দামের রত্ন, যা গয়না বানানোর কাজে লাগে, তা-ও অনেকাংশে পাকিস্তান থেকে আমদানি করত ভারত। এখন ভারতকে এর জন্য প্রতিবেশী দেশের বদলে অন্য দেশের উপর ভরসা করতে হবে।

৯। চশমার কাচ

চশমার কাচ এবং চশমা বানানোর অন্যান্য উপকরণও পাকিস্তান থেকে আসত ভারতে। সে ব্যাপারেও আপাতত আত্মনির্ভর হতে হবে ভারতকে।

এ ছাড়া আর যা যা

এ ছাড়া আর যা যা পাকিস্তান থেকে আমদানি করে ভারত, তার মধ্যে রয়েছে তরমুজ, ফুটি, সিমেন্ট, বিট নুন, সুতির কাপড়, ইস্পাত, চামড়ার জিনিস, তামা, সালফার, রাসায়নিক ইত্যাদি।

India vs Pakistan India Pakistan Conflct India Pakistan War Operation Sindoor India Pakistan Tension
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy