Advertisement
E-Paper

সমকামীরা কতটা স্বাধীন পরিচয় প্রকাশে? প্রান্তিক যৌনতার সন্তানকে নিয়ে কি পারিবারিক অস্বস্তি কমছে?

দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭ সালে। ৩৭৭ ধারা বাতিল হয়েছে (আংশিক ভাবে) ২০১৮ সালে । মাঝে কেটে গিয়েছে ৭১টি বছর। নিজের মতো ভালবাসার জন্য নিরপরাধ চিহ্নিত হতে এতগুলি বছর লেগে গিয়েছে। তাও কি স্বাধীন ভাবে ভালবাসার অধিকার সন্তানদের দিতে পারেন বাবা-মায়েরা?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৫ ১১:১৮
নিজের মতো ভালবাসা, নিজের মতো লিঙ্গ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা।

নিজের মতো ভালবাসা, নিজের মতো লিঙ্গ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা। চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।

উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সুদীপ মণ্ডল। পরিমাণমতো আদর ও শাসনে বড় হওয়া। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম বার সে বুঝতে পারে, ছেলেদের প্রতিই সে আকৃষ্ট হয়। ক্লাসের অন্য ছেলেরা যখন মেয়েদের নিয়ে ফিসফিসিয়ে গল্প করছে, সুদীপ আনন্দ পাচ্ছে না। তার বরং হৃতিক রোশনকে একটু আলাদা ভাবে ভাল লাগছে। সেই ভাল লাগা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তা বলার স্বাধীনতা আছে কি না, সে বুঝতে পারে না। কারণ, ছেলেদের কেবল মেয়েদের প্রতিই আকৃষ্ট হতে হবে, আর মেয়েদের আকর্ষণ থাকবে ছেলেদের প্রতি— এইটিই সমাজের নিয়ম। ‘স্বাধীন সমাজ’-এর নিয়ম। তবে কে বুঝবে তার কথা? এক দিন হঠাৎ মনের আগল খুলে দিল তার বৃদ্ধা ঠাকুরমার সামনে। তার পর যত দিন ঠাকুরমা বেঁচে ছিলেন, তত দিন সমাজের সঙ্গে লড়াই করা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতে হয়নি সুদীপকে।

ঠাকুরমার কাছে হয়তো খুব স্পষ্ট ছিল না ছেলেতে-ছেলেতে ভালবাসার সংজ্ঞাটা। কিন্তু নিজেকে প্রকাশ না করায় যে স্বাধীনতার অভাব আছে, তা বুঝেছিলেন নাতির চোখ-মুখ দেখে।

কোচবিহারের সেই ঠাকুরমার মতোই নজির গড়েছেন নাগরিক অধিকার আন্দোলনকর্মী অনুরাগ মৈত্রেয়ীর মা নন্দিতা মুখোপাধ্যায়। অনুরাগ রূপান্তরকামী নারী। নন্দিতা খুব ছোট থেকেই ছেলের মধ্যে ‘নারীসুলভ’ আচরণ টের পেতেন। ৮০-র দশকে এই ‘এলজিবিটিকিউআইএ প্লাস প্লাস’-এর মতো অভিধাগুলি তৈরি হয়নি বলে ছেলে বা মা কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারতেন না। মোটামুটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর মায়ের কাছে প্রথম বার নিজের লিঙ্গপরিচয় নিয়ে কথা বলেন অনুরাগ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মা, আমি তোমার ছেলে হয়ে উঠতে পারিনি।’’ অসবর্ণ ছেলের প্রেমে পড়েছিলেন মফস্সলে বড় হওয়া নন্দিতা। কিন্তু সেই প্রেম যাতে পরিণতি না পায়, তাই অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে। ফলে উচ্চশিক্ষার সুযোগও পাননি। সেই পরাধীন নন্দিতার প্রথম উত্তর ছিল, ‘‘সারা পৃথিবীও যদি তোমায় বলে, তুমি মেয়ে নও, তোমাকে ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। জোর করে, ঝগড়া করে কখনও গ্রহণ আসবে না। তোমাকেও সহনশীল হতে হবে, মানুষের সঙ্গে সমানে কথা বলে যেতে হবে।’’ অনুরাগ বলেন, ‘‘নিজের অবদমিত সত্তা দিয়ে আমার অবদমনকে বুঝতে পারতেন মা। তাঁর প্রেম মুক্তি পায়নি। তিনি খাঁচা ভাঙতে পারেননি। তাই মা আমার প্রেম-ভালবাসা, লিঙ্গপরিচয় যাতে মুক্তি পায়, সেই চেষ্টা করেছেন। মা বুঝেছিলেন, আমার নারীসত্তা অপুষ্টিতে ভুগছে, সেটি মুক্তি চায়।’’

নাগরিক অধিকার আন্দোলনকর্মী অনুরাগ মৈত্রেয়ী।

নাগরিক অধিকার আন্দোলনকর্মী অনুরাগ মৈত্রেয়ী। নিজস্ব চিত্র

কোচবিহারের ঠাকুরমা বা অনুরাগের মা কেউই ‘এলজিবিটিকিউআইএ প্লাস প্লাস’ কাকে বলে, তা জানতেন না। কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন।

এই দু’টি ঘটনা সত্য, কিন্তু বিরল। খুব কম সংখ্যক মানুষই এ ভাবে ভাবেন। বিশেষ করে নিজের পরিবারের ক্ষেত্রে। সমলিঙ্গের প্রতি প্রেম, প্রান্তিক যৌনতার প্রতি ভালবাসা, নিজের লিঙ্গ নতুন করে নির্ধারণ করা— এ সবই বৃহত্তর সমাজের চোখে অসুস্থতা। অনেক বাবা-মায়ের জন্য তাঁদের ছেলেমেয়েরা ‘অস্বাভাবিক’। আর এখানেই লোকে সন্দেহ প্রকাশ করে বাবা-মায়েদের ‘নিঃশর্ত ভালবাসা’ নিয়ে।

দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭ সালে। ৩৭৭ ধারা বাতিল হয়েছে (আংশিক ভাবে) ২০১৮ সালে । মাঝে কেটে গিয়েছে ৭১টি বছর। নিজের মতো ভালবাসার জন্য নিরপরাধ চিহ্নিত হতে এতগুলি বছর লেগে গিয়েছে। তবে এখনও সকলে নিজের লিঙ্গ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পাননি। এখনও ইচ্ছেমতো ভালবাসার স্বাধীনতা পাননি।

বাবা-মায়েদের ভুলে বহু সন্তান সারা জীবন মিথ্যে যাপন করেছেন। ঠিক যেমন ‘বধাই দো’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল, রাজকুমার রাও এবং ভূমি পেডনেকরের চরিত্র দু’টিকে তাদের পরিবার জোর করে বিয়ে দেয়। অথচ তারা দু’জনেই সমকামী। পরবর্তী সময়ে বাড়িতে জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরও তাদের বিবাহিতই থাকতে হল। এখানে আর একটি দুঃখজনক ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। কলকাতা শহরের এক সমকামী স্কুলশিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সমকামী, রূপান্তরিত পুরুষ এবং উভকামীদের ডেটিং অ্যাপে ডান দিক-বাঁ দিক করতে করতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ান। চোখে পড়ে তাঁর মেসোমশাইয়ের প্রোফাইল। যিনি কিনা ‘সুখে’ ঘর করছেন শিক্ষকের মাসির সঙ্গে। আদপে কি তাঁদের কেউ জীবনে সুখ পেলেন? তাঁদের পরাধীনতার শিকলের চাবি রয়ে গেল তাঁদের পরিবারের হাতে।

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বভারতীর কলাভবনের ছাত্রী অর্চির গল্পও এখানে উল্লেখযোগ্য। সমকামী, তায় মহিলা, তায় আবার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। লড়াই তাঁর জীবনেরই অঙ্গ। তাঁর বাবা-মা তাঁকে যথাসম্ভব সমাজের আক্রমণ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছেন আজও। কিন্তু যে দিন জানতে পারেন, তিনি ছেলেদের নয়, মেয়েদের কামনা করেন, বাবা-মা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। অর্চির কথায়, ‘‘আসলে বাবা-মা আমাদের স্বাধীনতা দিতে পেরেছেন কি না, সেটা বিচার করতে হলে, আগে বুঝতে হবে, তাঁদের কাছে স্বাধীনতার অর্থ কী। আমার কাছে স্বাধীনতা যা, বাবা-মায়ের কাছে সেটা নয়। আবার বাবা-মায়ের কাছে যেটা স্বাধীনতা, আমার কাছে নয়। সে ভাবে দেখতে গেলে, আমার বাবা-মা তাঁদের ৩৭ বছরের মেয়েকে আবার পড়াশোনা করতে দিচ্ছেন। তাঁরা অন্য শহরে মেয়েকে একা ছেড়ে দিচ্ছেন। তাঁদের কাছে এগুলিই স্বাধীনতা। কিন্তু সমাজের ধরাবাঁধা যৌন পরিচয়কে চট করে মেনে নেওয়া কঠিন। তাঁদের ভয় ছিল, সমাজ আমাকে মেনে নেবে কি না। কিন্তু আমি যখন বাইরের চোখরাঙানিকে চ্যালেঞ্জ করে এগোচ্ছি, সমর্থন পাচ্ছি অনেকের থেকে, সেটা দেখার পর বাবা-মা সাহস পেয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’’ অর্চির কাহিনি আশার কথা বলে।

তবে নতুন যুগের বাবা-মায়েরা প্রথম থেকেই নতুন যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করছেন।

শহর কলকাতার একাংশ, জেলারও একাধিক পরিবার এখন অন্য ভাবে ভাবছেন প্রান্তিক লিঙ্গপরিচয়, প্রান্তিক যৌনতা নিয়ে। তাঁরা সন্তানকে স্বাধীনতা দেওয়ার প্রশ্নই ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। যৌনপরিচয়, লিঙ্গপরিচয় নিয়ে ভিন্ন ভাবে ভাবার জন্য স্বাধীনতার প্রশ্নই বা কেন আসবে! এমনই বক্তব্য অনেক বাবা-মায়ের। যেমন অভিনেতা-পরিচালক রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ধরা যাক। তাঁর ১২ বছরের ছেলে সহজ যদি পরে উপলব্ধি করে যে সে সমকামী, তখন মা-বাবার প্রতিক্রিয়া কী হবে? তাঁরা স্বাধীনতা দেওয়াকে কী ভাবে দেখবেন? রাহুল বলছেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কার (সরকার) সঙ্গে এ বিষয়ে বেশ অনেক দিন আগেই কথা বলেছিলাম। ছেলের যৌন-পছন্দ সমাজ অনুমোদিত না হলে কী ভাবে এগোব আমরা, সে নিয়ে ভেবেছি। কারণ আর কেউ না দাঁড়াক, আমরা তো পাশে দাঁড়াবই। আর স্বাধীনতা? আমরা বাবা-মা, লর্ড মাউন্টব্যাটেন নই। স্বাধীনতা দেওয়ার অধিকারই নেই আমাদের। আমরা কেবল তাকে বাড়ির পরিবেশ, শিক্ষা দিতে পারি। এমনিতে স্বাধীনতা নিয়েই সে জন্মেছে। এর পর যা লড়াই আসবে, যুঝে নেবে সহজ। পাশে থাকব আমরা। অন্য শরীরে আটকে পরাধীন থেকে, অন্য শরীরের থেকে স্বাধীন হওয়ার ভান করে আজীবন অসুখী থাকার চেয়ে লড়াই করে খুশি থাকা জরুরি। আর আমি এবং প্রিয়াঙ্কা যে সময়ের বাবা-মা, সে সময়টা কিন্তু আগের থেকে একটু হলেও সহজ।’’

ছেলের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা সরকার এবং রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছেলের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা সরকার এবং রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমরা বেশ শাসনে বড় হয়েছি। কিন্তু আমাদের সন্তানেরা জন্ম থেকেই স্বাধীন, তাদের পৃথিবী দর্শন জন্ম থেকেই, মোবাইল হাতে জন্মেছে তারা। আমাদের বাবা-মায়েরা পরাধীন ভারতে জন্মেছে, তাদের কাছে সন্তানদের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রশ্নটা ভিন্ন। কিন্তু আমরা আর সে ভাবে ভাবি না। এখন যদি আমার ৬ বছরের মেয়ে কিয়ান কোনও এক দিন গিয়ে বুঝতে পারে যে, তার মেয়েদের পছন্দ, আমার কোনও সমস্যাই হবে না। সে তার লিঙ্গ বেছে নিতে পারে নিজের মতো করে। তার ভালবাসার মানুষকে খুঁজে নিতে পারে নিজের মতো। তার বাবার হয়তো হতে পারে। তিনি একটু অন্য রকম। তখন বাকিদের বোঝানোর চেষ্টা আমি করব। আমি মনে করি, আমরা হেটেরোসেক্সুয়াল নারীরা তো নিজেদের চাহিদার কথা মুখ খুলে বলতেই পারি না। তার চেয়ে তো আমার সমকামীদের সুখী বলে মনে হয়। আমার সব সমকামী বন্ধু অনেক বেশি সোচ্চারে মনের কথা বলতে পারেন। অনেক বেশি স্বাধীন তাঁরা।’’

মেয়ের সঙ্গে কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মেয়ের সঙ্গে কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

মানুষ কোন লিঙ্গ নিয়ে জন্মাবে, সেটি কারও হাতে নেই। তাই পরবর্তী কালে সে কোন লিঙ্গকে বেছে নেবে, কোন লিঙ্গের মানুষকে ভালবাসবে, সেটিই বা কেন কারও হাতে থাকবে? লিঙ্গপরিচয় নির্ধারণ করা নিয়ে অভিনেত্রী অপরাজিতা ঘোষ বলছেন, ‘‘আমি যদি ১২ বছর আগে চলে যাই, পান্থ (অপরাজিতা ঘোষ-ঋত্বিক চক্রবর্তীর ছেলে) যদি জন্ম নিত প্রান্তিক যৌনতার মানুষ হিসেবে, আমি তাও একই ভাবে ভালবাসতাম, একই ভাবে লড়াই করতাম সমাজের সঙ্গে। আর যদি এখন ও উপলব্ধি করে যে ও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট, আমি বা ঋত্বিক একবিন্দুও বিচলিত হব না। ভালবাসার জন্য কারও অনুমতি প্রয়োজন নেই। তাই আমাদের স্বাধীনতা দেওয়ারও অবকাশ নেই।’’

ছেলের সঙ্গে ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং অপরাজিতা ঘোষ।

ছেলের সঙ্গে ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং অপরাজিতা ঘোষ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

১৭ বছরের পড়ুয়ার মা, ৪২ বছরের চান্দ্রেয়ী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমি যেমন নিজের ব্যক্তিগত পরিসরকে গুরুত্ব দিই, তেমনই আমার মেয়ে, সে যত ছোটই হোক, তারও ব্যক্তিগত পরিসর আছে বলেই মনে করি। কিন্তু হ্যাঁ, এখন যদি মেয়ে এসে বলে, তার মেয়েদের অথবা রূপান্তরকামীদের পছন্দ, ঝটকা লাগবে প্রথমে। কারণ আমরা তো যা-ই হোক না কেন, অন্য প্রজন্মের। আমরা যখন ওদের বয়সে ছিলাম, সমকামিতার বিষয়ে সে ভাবে কেউ বোঝায়নি। সেটার ভার তো এখনও রয়েছে মাথার ভিতরে। তবে প্রথম ঝটকা কাটিয়ে উঠে মেয়ের পাশে দাঁড়াব। পরিবারের অন্যেরা যদি মেনে নিতে না পারেন, তাঁদের বোঝানোর দায়িত্ব নেব। কিন্তু তাকে ভালবাসতে দেব না, আটকে রাখব, এমন ভাবে ভাবতে পারি না।’’

তবে এমনই এক নতুন প্রজন্মের মায়ের এক গল্প খানিক ভাবতে বাধ্য করে। ৪০-এর কোঠায় পৌঁছেছেন সেই মা (নামপ্রকাশের অবকাশ নেই)। কিশোরী কন্যা তাঁর। শহরের উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিতদের দলে পড়ে তাঁদের পরিবার। মেয়েকে নিয়ে বন্ধুমহলে গেলে মা সবার আগে বলেন, ‘‘আমার মেয়ে কিন্তু সমকামী। আমি তো খুব খুশি।’’ নিজের কন্যার প্রান্তিক যৌনতার পরিচয় সম্পর্কে উদার হওয়ার ক্ষমতা সকলের থাকে না। সে দিক থেকে এইরকম মা কিন্তু হাতেগোনা। কিন্তু যেই মুহূর্তে যেচেপড়ে সকলের সামনে কন্যার পছন্দ সম্পর্কে বলছেন, সেই মুহূর্তেই কন্যাকে বাকি সকলের থেকে খানিক দূরে ঠেলে দিচ্ছেন না কি? আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন কেনই বা পড়বে? আদপে তো অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়। তা ছাড়া, সন্তানের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলা যায় না। অর্থাৎ, গোড়ায় গলদ রয়ে যাচ্ছে।

নতুন যুগের বাবা-মায়েরা প্রথম থেকেই নতুন যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করছেন।

নতুন যুগের বাবা-মায়েরা প্রথম থেকেই নতুন যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করছেন। ছবি: সংগৃহীত।

আসলে আগের প্রজন্মের শিক্ষার ভার বহন করার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সময়োপযোগী হয়ে ওঠার তাড়না। সেখান থেকেই ভয় থেকে যায় যে, মা-বাবা নিজেদের সন্তানদের যৌন-পছন্দকে স্বাভাবিক ভাবতে পারছেন না, তাঁরা শেষ পর্যন্ত সন্তানদের স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দেবেন তো? না কি মনের ভিতরে এমন ধারণা রয়েছে, ‘‘ছোটবেলায় এমন কত কী মনে হয়, বড় হলে বিয়ে দিলে নিশ্চয়ই ‘ঠিক’ হয়ে যাবে’’?

Same Sex Relationship LGBTQIA parenthood Homosexuality Transwoman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy