Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Homosexuality

জোট বাঁধছেন সমপ্রেমী সন্তানের মা-বাবারাও

এমনিতে সারা পৃথিবীর জনসংখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের মধ্যে সমপ্রেমী বা রূপান্তরকামী প্রবণতা থাকে।

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০৮
Share: Save:

নিজেদের মধ্যে নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও মাসে মাসে 'রেনবো রুম’-এ সন্তানদের নিয়ে জড়ো হন তাঁরা। কলকাতার কোনও নিরাপদ কাফেয় বসে সেই ‘রেনবো রুম’-এর আসর।

ইতিমধ্যে কলকাতার বাইরে কোন্নগরেও একাধিক অনুষ্ঠানে সমপ্রেমী বা ছক-ভাঙা লিঙ্গ পরিচয়ের ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনুষ্ঠানও করা হয়েছে। এই রেনবো রুম-এর অন্যতম আহ্বায়ক মহুয়া শেঠ বলছিলেন, “শিগগিরই আমরা আলিপুরদুয়ারেও যাব! পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে অনেক অভিভাবকই তাঁদের সন্তানের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন (যৌন ঝোঁক) বা লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সংশয়ে, সঙ্কটে জেরবার। তাঁদের কাছে পৌঁছনোর একটি মঞ্চই আমরা গড়ে
তুলতে চাইছি!”

কলকাতা বা ভারতের অন্যত্র সমপ্রেমী বা রূপান্তরকামীদের জন্য নিরাপদ পরিসর গড়ে তোলার চেষ্টা অনেক দিনই শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের তরুণদের মা-বাবারা সংগঠিত হয়ে জোট বাঁধছেন, এ রাজ্যে তা কিছুটা বিরল। নিজেকে এক জন সমকামী ছেলের মা বলে পরিচয় দেওয়া কলকাতার বাসিন্দা মহুয়ার মতে, “বাচ্চাদের জন্য কিন্তু নিজের মা-বাবার কাছে স্বীকৃতি বা মর্যাদা পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার ছেলে তার ১৫ বছর বয়সে (বর্তমানে স্নাতকোত্তর পাঠরত) যখন প্রথম তার মনের কথা বলল, তখন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। কিন্তু আমি ভয় পেয়েছিলাম। এই সমকামী বিদ্বেষী সমাজ বা দেশে ছেলেকে তো আগুনে পা রেখে চলতে হবে! তখনই মনে হয় অন্য সমপ্রেমী ছেলেমেয়ের মা-বাবাদের সঙ্গে বা আমার ছেলের মতো ছোটদের সঙ্গে যাতে কথা বলতে পারি।”

২০১৭ সালে মুম্বইয়ে শুরু হওয়া ‘স্বীকার’ বলে সমপ্রেমী, কুইয়ার, রূপান্তরকামী সন্তানদের অভিভাবকদের একটি মঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মহুয়া। এখন দেশে তাদের ৪৫০-র বেশি সদস্য। মহুয়া বলছিলেন, “হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, স্বীকার-এর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম পেজ অর্থাৎ সমাজমাধ্যমকে আমরা কাজে লাগাতে চাইছি।”

ঘটনাচক্রে, কলকাতার এমন অনেক মা-বাবা ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের সমকামী সন্তানদের অপরাধমুক্ত করতে পারস্পরিক সম্মতির যৌন সম্পর্কে ৩৭৭ ধারা রদ করার আর্জি জানিয়েছিলেন। সেই লড়াইয়ের ফসল হিসেবেই ২০১৭ সালে ৩৭৭ ধারায় সমকামীদের সাজা দেশে রদ হয়ে যায়। সম্প্রতি সমপ্রেমী বা সমলিঙ্গে বিবাহ নিয়েও স্বীকার-এর তরফে অভিভাবকেরা সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জানিয়েছেন।

কলকাতায় এখন নিয়মিত আলোচনাচক্রে দেখা করছেন এই ধরনের অভিভাবকেরা।

এমনিতে সারা পৃথিবীর জনসংখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের মধ্যে সমপ্রেমী বা রূপান্তরকামী প্রবণতা থাকে। এ রাজ্যে শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের ‘রেনবো স্টাডি’ বলে একটি সমীক্ষাতেও তেমনই আভাস মিলেছে। ব্রিটেনের মতো দেশেও স্টোনওয়াল সমীক্ষা বলছে এলজিবিটিকিউ বা যৌন সংখ্যালঘু গোত্রের ছোটরা ৯৫ শতাংশই হিংসার শিকার হয়।

ভারতে জাতীয় অপরাধপঞ্জির রিপোর্টও বলে, এমনিতেই কলেজ ছাত্রদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। তার উপরে বিভিন্ন দেশের সমীক্ষায় প্রকাশ, এলজিবিটিকিউ তরুণেরা অনেক বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ। মহুয়া বলছেন, “এই বিপুলসংখ্যক সঙ্কটাপন্ন তরুণের পাশে দাঁড়তেই তাঁদের জন্য নিরাপদ পরিসর তৈরি করা এবং অভিভাবকদের কাছাকাছি আসা জরুরি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Homosexuality Parents Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE