Advertisement
E-Paper

অস্ত্রোপচারে বাঁচলেন করাতে চিরে যাওয়া বিদূর

কাঠ চেরাইয়ের সময় আচমকা মাচা ভেঙে করাতের উপর পরে গিয়েছিলেন বছর চল্লিশের বিদূর দাস। অতিকায় করাত তাঁর পেট এবং বুকের মাঝে আড়াআড়ি চিরে বসে গিয়েছিল। শরীরের মাঝামাঝি অংশ প্রায় দুই টুকরো হওয়ার জোগাড়।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০৩:০৩
শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জিষ্ণু রায় বাসুনিয়া ও বিদূর দাস। নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জিষ্ণু রায় বাসুনিয়া ও বিদূর দাস। নিজস্ব চিত্র।

কাঠ চেরাইয়ের সময় আচমকা মাচা ভেঙে করাতের উপর পরে গিয়েছিলেন বছর চল্লিশের বিদূর দাস। অতিকায় করাত তাঁর পেট এবং বুকের মাঝে আড়াআড়ি চিরে বসে গিয়েছিল। শরীরের মাঝামাঝি অংশ প্রায় দুই টুকরো হওয়ার জোগাড়।

পেট এবং বুকের মাঝের অংশ করাতে চিরে যাওয়ায় বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল ফুসফুস। পিঠের দিকে শিড়দাঁড়ার অংশে আট-নয় ইঞ্চি শরীরের সঙ্গে লেগে ছিল মাত্র। পেটের কাছে থাকা ৬ থেকে ১০ নম্বর পাঁজর গুলিও ভেঙে গিয়েছিল একাধিক জায়গায়। মঙ্গলবার দুপুরে আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরির উত্তর ঢালকোর এলাকায় নিজের বাড়িতেই দুর্ঘটনা ঘটে বিদূরবাবুর। ওই রাতেই টানা দু’ ঘন্টা অস্ত্রোপচার করে তাঁর প্রাণ বাঁচালেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক জিষ্ণু রায় বাসুনিয়া। তবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নয়, শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে রোগীর অস্ত্রোপচার করেন তিনি।

জিষ্ণুবাবু বলেন, ‘‘রোগীর এ ধরনের পরিস্থিতি আগে কখনও পাইনি। শরীর বুক এবং পেটের মাঝামাঝি অংশে চিরে কার্যত দুই টুকরো হয়ে গিয়েছিল। পিঠের দিকে আট-নয় ইঞ্চির মতো অংশ লেগে ছিল মাত্র। তা ছাড়া আড়াআড়ি ভাবে শরীর চিরে গিয়েছিল। আর দুই সেন্টিমিটার বেশি চিরলে মহাধমনী কেটে রোগী মারাই যেত।’’

তিনি জানান, রোগী পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি ভাল নয় বলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেছিলেন। রোগীর পরিবার দ্বিধা করে। তা ছাড়া কার্ডিও থোরাসিক ব্যবস্থা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেই বলে সেখানে সমস্যা হতে পারে বলেও মনে হয়েছিল জিষ্ণুবাবুর। তার পর দেরি করেননি তিনি। নার্সিংহোমেই অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেন।

রাত ৯ টা নাগাদ অস্ত্রোপচার করা হয়। চিরে যাওয়া মধ্যচ্ছদা সেলাই করে মেরামত করা হয়। ফুসফুসের যে অংশ করাতে চিরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তা মেরামত করা হয়। বুকের নিচের দিকে যে পাঁজরগুলি ভেঙে গিয়েছিল তা বিশেষ তার দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। শেযে পেট এবং বুকের মাঝে চিরে যাওয়া অংশ সেলাই করে জোড়া দেওয়া হয়েছে। ওই কাজে জিষ্ণুবাবুকে সাহায্য করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অ্যানাস্থেটিস্ট বিকাশ মণ্ডল। তিনিও ওই নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। এখনও রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এ দিন বিকেলে তাঁকে রক্তও দিতে হয়েছে। তবে তিনি বিপদমুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে পাঁজর ভেঙে যাওয়ায় তাঁর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে অন্তত দেড় মাস লাগবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

চিকিৎসকরা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখে এ ধরনের অস্ত্রোপচার করার ঝুঁকি অনেকেই নিতে চাইবেন না। তার উপর রোগীর রক্ত চাপ একেবারেই নেমে গিয়েছিল। শরীরে ফ্লুইড দিয়ে তা বাড়ানো হয়। না হলে অস্ত্রোপচারও করা যাচ্ছিল না।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িতে কাঠ চেরাইয়ের ব্যবসা রয়েছে বিদূরবাবুর। এদিন সকালে বড় কাঠের পাটাতন মাচার উপরে তুলে কাঁঠাল কাঠ কাটার কাজ চলছিল। নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই জন। মাচায় পাতা কাঠের পাটাতনের উপরে দাঁড়িয়ে লম্বা করাত ওপরের দিকে টানছিলেন বিদূরবাবু। নিচের দিকে টানছিলেন বাকি দু’জন। আচমকা নাটবল্টু খুলে গিয়ে মাচা ভেঙে করাতের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান বিদূরবাবু। পেটের এবং বুকের মাঝামাঝি অংশে আড়াআড়ি ভাবে করাত গেঁথে যায়। চোখের সামনে ঘটনা দেখে বাকি দু’জন চিৎকার জুড়ে দেন। ছুটে আসেন বাড়ির লোক এবং আশেপাশের বাসিন্দারা। অতিকায় করাত টেনে বার করতেই শরীরের ওই অংশ হা হয়ে ভিতরের সব দেখা যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর আত্মীয়রা। কিছু জড়িবুটি ও পাতা তাঁর শরীরের চেড়া অংশে লাগিয়ে গামছা, শাড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে রিকশা ভ্যানে করে বিদুরবাবুকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান আত্মীয় ও পড়শিরা। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ওই পরিস্থিতি দেখে স্যালাইন লাগিয়ে, গামছা, শাড়ির উপরে অ্যাবডোমিনাল বেল্ট লাগিয়ে দেন। রোগীকে তারা রেফার করে দেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চেনা পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রোগীকে মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। সেখানেই সন্ধে নাগাদ রোগীকে দেখেন জিষ্ণুবাবু।

বিদূর দাসের স্ত্রী কাননবালা দেবী বলেন, ‘‘অবস্থা দেখে হাত পা কাঁপছিল। চিকিৎসকের উপরেই সব ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের আর্থিক অবস্থা যে ভাল নয়, তাও জানিয়েছি। চিকিৎসক ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’

saumitra kundu running saw saw mill carpentar bidur das bidur das jishnu roy basunia dr. jishnu roy basunia uttarbanga medical college saw parted body
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy