Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
post covid diet

করোনা থেকে সেরে উঠছেন? ভাল থাকতে কী কী খেতেই হবে

করোনা  সেরে যাওয়ার পরেও বেশিরভাগ মানুষের দুর্বলতা থেকে যায়।

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সুস্থ থাকুন। ছবি: শাটারস্টক।

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সুস্থ থাকুন। ছবি: শাটারস্টক।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ১৩:০৪
Share: Save:

পুজো এল, চলেও গেল, কিন্তু অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস কিছুতেই যেতে চাইছে না। নভেল করোনা ভাইরাস আরও কতদিন একই ভাবে আমাদের সংক্রমণ সৃষ্টি করে চলবে সে বিষয়ে বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরাও কিছু আন্দাজ করতে পারছেন না। সব থেকে মুশকিল হল করোনা সেরে যাওয়ার পরেও বেশিরভাগ মানুষের দুর্বলতা থেকে যায়।

এমনকি যাঁদের অত্যন্ত কম উপসর্গ ছিল, বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করে সেরে উঠেছেন তাঁদেরও দুর্বলতা নেহাতই কম নয়। সামান্য পরিশ্রমেই হাঁফ ধরে। সঙ্গে আছে মাথা ঝিমঝিম আর শ্বাসকষ্ট। মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় রোজকার ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, পরামর্শ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের।

একই সঙ্গে প্রয়োজন যথেষ্ট বিশ্রাম। কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট জানতে পারলেই বেশিরভাগ পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কিন্তু বিপদের মোকাবিলা তো করতেই হবে, বললেন পুষ্পিতা। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাবার পাশাপাশি সঠিক ডায়েট করতে হবে। কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরেও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো দরকার।

আরও পড়ুন: সুস্থ থাকতে জল খাওয়া নিয়ে কী কী মানতেই হবে

কোভিড-সহ যে কোনও ভাইরাল জ্বর হলে শরীরে জলের পরিমাণ কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও জলীয় খাবার খেতে পরামর্শ দিলেন ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ। স্যুপ, টাটকা ফলের রস, ডাবের জল, লেবুর সরবত, দইয়ের ঘোল, পাতলা ডালের সঙ্গে দিনে ৮ – ১০ গ্লাস জলপান করা দরকার। তবে এই নিয়ম স্বাভাবিক মানুষের জন্যে। কিডনির সমস্যা বা অন্য কারণে জলপানে নিয়ন্ত্রণ থাকলে তা মেনে চলা উচিত।

পেট ভরে শাক-সব্জি খেতে হবে। ফাইল ছবি

সকালের জলখাবার, মধ্যাহ্ন ভোজন ও রাতের খাবার তিন বারের পথ্য প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। তার মানে এই নয় যে কষা মাটন দিয়ে লুচি খেতে হবে। বিভিন্ন ডাল, রাজমা,ডিম, চিকেন, মাছ, ছানা প্রোটিনের ভাল উৎস। বাড়িতে অল্প তেলে রান্না করা চিকেন, মাছ, ডিম সহ অন্য প্রোটিন খেতে হবে। নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে শরীরের অভ্যন্তরে যে ক্ষয় ক্ষতি হয়, তা পূরণ করতে প্রোটিন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। তবে চিংড়ি, কাঁকড়া জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে না। এই সময় হজম শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:উপসর্গহীন মারি নিয়েই ঘর, করোনা তার নতুন দোসর​

সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি খেলে পেটের গোলমাল ফিরে আসতে পারে। চিকেন স্ট্যু, মাছের ঝোল বা মাছ ভাজা, ডাল সেদ্ধ, অল্প তেলে সাঁতলে রান্না ডাল ইত্যাদি বাড়িতে হালকা করে রান্না খাবার খাওয়া দরকার। বাইরের খাবার ও বেশি তেল মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার একেবারেই বাদ দিন। ইন্দ্রাণী জানালেন সকালের জলখাবারে ডিমের পোচ বা ডিম, চিজ ওমলেট সঙ্গে চিকেন স্যুপ বা স্ট্যু খাওয়া যেতে পারে।

গোটা মুগ, কলাই ডাল দিয়ে তৈরি তড়কা বা গোটা সেদ্ধ খাওয়া যায় বদলে বদলে। আবার ছানা, চিজ টোস্ট, রুটি ডালও খাওয়া যায়। মাছের টুকরোতে নুন লেবুর রস দিয়ে অল্প তেলে সেঁকে খাওয়া যায়। ভাইরাল সংক্রমণের পর খাবার খেতে ইচ্ছে করে না। অরুচি কাটাতে তেতো অত্যন্ত উপযোগী, জানান ইন্দ্রাণী।

আরও পড়ুন:থাকে মৃত্যুর আশঙ্কাও,হবু মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এ সব মনে রাখতেই হবে​

করলা, উচ্ছে, নিমপাতা রোজকার মধ্যাহ্ন ভোজনে থাকলে ভাল হয়। তেতো ও নানা সব্জি দিয়ে বানানো শুক্তো খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া তেতো সব্জিতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস একদিকে হজম শক্তি বাড়ায়, অন্য দিকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে। এর সঙ্গে পালং শাক (কিডনি স্টোন বা অন্যান্য সমস্যা না থাকলে), মেথি শাক, গাজর, বিনস, ক্যাপসিকাম, কুমড়ো, লাউ ইত্যাদি সব্জি বদলে বদলে খেলে ভাল।

সুষম খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বাড়ির সবার মধ্যেই। ছবি: শাটারস্টক

রাতের খাবার সাড়ে আটটার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে হালকা মাশরুম, ভুট্টা বা ভেজিটেবল স্যুপ খেলে, একদিকে ঘুম ভাল হবে অন্যদিকে পুষ্টির ঘাটতি মিটবে। নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় ফলে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও মিনারেলস, বললেন নিউট্রিশনের শিক্ষিকা সুস্মিতা ঠাকুর।

আরও পড়ুন:শুধু খাওয়া নয়, এই সব কাজেও ব্যবহার করা যায় ডিম​

ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শরীরে বিভিন্ন ভিটামিন মিনারেলসের অভাব হয়। ডাবের জলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম, ইলেকট্রোলাইটস, এনজাইম, সাইটোকাইন ও ফাইটো-হরমোন। এর সবগুলিই সংক্রমণ পরবর্তী দুর্বলতা-সহ বিভিন্ন ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। তাই এই সময়ে সপ্তাহে ৩–৪ দিন ডাব খেলে ভাল। তবে ভাইরাল অসুখের পর শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে প্রোটিন খাওয়া অত্যন্ত দরকার।

যাঁরা নিরামিষাশী তাঁদের রোজকার ডায়েটে সয়াবিন, ডাল, রাজমা, ছোলা, দুধ, ছানার মতো উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থাকা আবশ্যক বলে পরামর্শ ইন্দ্রাণী ও সুস্মিতার। তবে শরীর বুঝে খেতে হবে, উপকারি বলে গাদাখানেক মাছ মাংস খেয়ে হজমের গোলমাল ডেকে আনলে মুশকিল। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে মন ভাল রেখে দ্রুত সেরে উঠুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE