Advertisement
১১ মে ২০২৪

পুজোর আগেই ঝকঝকে ত্বক চাই? এই সব যত্ন এখন থেকেই নিন

বড় রেস্তরাঁয় ডিনার বা নামী কাফেয় বন্ধুদের আড্ডায় হাত বাড়াতে গিয়ে আধখাওয়া নখে আটকে যাবেন না। বরং মাখন-মসৃণ হাত এগিয়ে দিন স্বচ্ছন্দে। একটু সময় দিন নিজের হাত ও পদযুগলকে। ওরাও যে আপনারই অংশ

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০০:১৫
Share: Save:

শুধু পেডিকিয়োর আর ম্যানিকিয়োর করলেই কাজ শেষ নয়। বরং তার পরেই আসল কাজ শুরু। দৈনন্দিন পরিচর্যা, মাসাজ সবই দরকার। তা হলেই দেখবেন আপনার হাত-পা হেসে উঠবে মুখের মতোই।

দৈনন্দিন পরিচর্যা

• হাত ও পায়ে রোজই স্ক্রাব করা প্রয়োজন। যেহেতু রাস্তার ধুলোবালি সবচেয়ে বেশি পায়ে লাগে। তবে পায়ের স্ক্রাবের ক্ষেত্রেও পায়ের পাতা আর তলাকে দু’ভাগে ভাগ করে নিন। পায়ের তলার জন্য যেমন ধরুন, মসুর ডাল বাটা বা বেসনের সঙ্গে টক দই দিয়ে পা স্ক্রাব করতে পারেন। অন্য দিকে পায়ের উপরি ভাগের জন্য এবং হাতের স্ক্রাবের জন্য বেছে নিন চিনির গুঁড়ো ও পাতিলেবুর রস।

•এর পরেই ক্লেনজ়িংয়ের পালা। হাল্কা ফেসওয়াশ বা শ্যাম্পু দিয়ে পা ও হাত ভাল করে ধুয়ে মুছে নিন। এতেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

•প্রত্যেক দিন একটা সময় বেছে নিন হাত ও পা ময়শ্চারাইজ় করার জন্য। ঘন ক্রিম লাগাবেন পায়ের তলায়। কোনও ফুট ক্রিমও কিনে নিতে পারেন। হাতের জন্য হ্যান্ড ক্রিম। মনে রাখবেন হাতের ত্বক পায়ের চেয়ে অনেক স্পর্শকাতর। তাই একই ময়শ্চারাইজ়ার হাত ও পায়ে সমান কাজ করবে না।

•বাইরে থেকে ফিরেই সাবান দিয়ে হাত ও পা ধুয়ে ফেলতে হবে। চেষ্টা করবেন কাপড় কাচা বা বাসন মাজার সাবান কম ব্যবহার করতে। একান্তই করতে হলে গ্লাভ্স ব্যবহার করুন। এই সাবান ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেয়।

•ব্যাগে হ্যান্ডক্রিমও রাখবেন। অফিসে এসি থাকলে এর প্রয়োজন পড়বে। কাজের ফাঁকে দিনে দু’বার হ্যান্ড ক্রিম লাগাবেন। তার আগে হাত ধুতে ভুলবেন না কিন্তু।

•রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঈষদুষ্ণ জলে কিছুক্ষণের জন্য পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। এতে সারা দিনের ক্লান্তি ধুয়ে যাবে সেই জলে।

একটু সময় দিন নিজের হাত ও পদযুগলকে

সপ্তাহান্তের যত্ন

•ছুটির দিন সময় রাখুন হাত ও পায়ের মাস্ক বা প্যাকের জন্য। সারা সপ্তাহের ক্লান্তির ছাপ কিন্তু হাত ও পায়েই ফুটে ওঠে বেশি। তাই এক দিন তাদের একটু যত্নআত্তি করতে হবে, যাতে সেই ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে পারে। এর জন্য চাই বিশেষ কিছু ধরনের প্যাক।

•হাতের জন্য ডিমের সাদা অংশে চিনি, মধু ও চালের গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাক বানান। এই প্যাক হাতে লাগিয়ে মিনিট দশেক অপেক্ষা করুন। পুরো প্যাক শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে তুলে নিন।

•পায়ের জন্য প্যাক বানাতে মধু, পাকা কলা ও ওটমিল নিন। একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে রাখুন। পায়ের প্যাক শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ জলে পা ডুবিয়ে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করুন। এ বার দু’হাত দিয়ে ভাল করে ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন।

ক্লান্তি কাটাতে মাসাজ মাস্ট

এ বার পালা মাসাজের। ভাল মাসাজেই রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরা থাকে। হাতের জন্য নিন আমন্ড, অলিভ বা হোহোবা অয়েল আর পায়ের জন্য নারকেল তেল।

পায়ের মাসাজ: আগে পা দিয়ে মাসাজ শুরু করুন। দু’হাতে তেল লাগিয়ে একটা পা দিয়ে শুরু করুন। পুরো পায়ে ভাল করে তেল মাখিয়ে নিন অল্প চাপ দিয়ে। এ বার পায়ের তলায় ঠিক মাঝখানে দু’হাতের বুড়ো আঙুল চেপে ধরুন। ছেড়ে দিন। আবার কিছুক্ষণ চেপে ধরে ছেড়ে দিন। পায়ের উপরের অংশেও চাপ দিন। এ বার গোড়ালির নীচের অংশে আঙুলে চাপ দিয়ে দিয়ে মাসাজ করুন। মাসাজ করতে করতে টোয়ের দিকে আসুন। মাসাজের শেষে আঙুলগুলোকে সামনের দিকে টেনে টেনে ছেড়ে দিন। এতে পুরো পায়ের রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে। হপ্তাভরের ক্লান্তিও দূর হবে।

হাতের মাসাজ: পায়ের পরে হাতের যত্ন। দু’হাতেই তেল মাখান। তার পরে এক হাতের চার আঙুল দিয়ে অন্য হাতের চার আঙুল ধরে অর্ধেক মুঠো করুন। এ বার একে অপরের দিকে টানুন। এ বার দুই হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে হাতের চেটো দুটো বন্ধ করে চাপ দিন ও খুলুন। এক হাত দিয়ে অন্য হাতকে যত ভাবে ধরা যায়, সে ভাবে ধরে চাপ দিতে হবে। সবশেষে দু’হাতে আঙুল সামনের দিকে টেনে টেনে মাসাজ শেষ করুন।

সবশেষে আর এক বার গরম জলে মিনিট পাঁচেক হাত ডুবিয়ে বসে থাকুন। তোয়ালেয় হাত মুছে নিন। দেখবেন অনেক রিল্যাক্সড লাগছে। তবে মাসাজের পরে হাত ও পাকে অন্তত পক্ষে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কোনও কাজে লেগে পড়বেন না। সবচেয়ে ভাল হয় যদি ঘুমের আগে এই মাসাজ করতে পারেন।

প্রতি সপ্তাহান্তে এক দিন করে হাত এবং পায়ের মাসাজ করতে পারেন। এতে ভাল ফল পাবেন।

পেডিকিয়োর

পায়ে ধুলোবালি জমে কড়া পড়ার ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। পায়ের মৃতকোষের উপরে যদি ধুলোময়লার স্তর জমতে থাকে, তা হলেই কড়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ ছাড়া নখকুনি তো আছেই। সর্বোপরি ফাটল ধরা বিশ্রী পা-ও রয়েছে। সব সুন্দর জুতো দিয়েই তো আর পায়ের খুঁত ঢাকা যাবে না। তাই পায়ের নিয়মিত যত্নের মধ্যে মাসে এক বার পেডিকিয়োর করাও জরুরি।

•প্রথমেই নেলপলিশ তুলে ফেলুন।

•বাড়িতে পেডিকিয়োর করতে বড় গামলা নিন। ঈষদুষ্ণ জল, সি সল্ট ও হাল্কা শ্যাম্পু গুলে নিন। পা ডুবিয়ে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করুন।

•পিউমিস স্টোন দিয়ে পায়ের নীচটা ঘষে মৃতকোষ তুলে ফেলুন।

•নখের কোণও পরিষ্কার করে নিন নেল ক্লিপার দিয়ে। প্রয়োজনে নখ কেটে শেপ করে নিতেও পারেন।

•এ বার জল থেকে পা তুলে একটা কোনও প্যাক লাগিয়ে নিন। এর জন্য মুলতানি মাটি, মধু ও টম্যাটোর ক্বাথ দিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন।

•প্যাক শুকিয়ে গেলে আবার তা ঈষদুষ্ণ জলে ঘষে ধুয়ে নিন। সবশেষে ফুটক্রিম লাগিয়ে পছন্দের নেলপালিশ পরে নিন।

ম্যানিকিয়োর

পেডিকিয়োর আর ম্যানিকিয়োরের স্টেপ প্রায় একই রকম।

•এর প্যাক আলাদা হবে। দুধ, বেসন ও গোলাপজল মিশিয়ে হাতে লাগান। সবশেষে হ্যান্ডক্রিম লাগাতে ভুলবেন না যেন!

অল্প অল্প করে পরিচর্যা শুরু করুন। দেখবেন, অচিরেই আপনার হাত ও পা হয়ে উঠবে মাখনের মতো উজ্জ্বল ও পশমের মতো নরম।

মডেল: মুনমুন রায়

ছবি: দেবর্ষি সরকার; মেকআপ: অভিজিৎ পাল; লোকেশন: দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন, কলকাতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lifestyle beautytips pedicure manicure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE