Advertisement
১০ মে ২০২৪

আত্মহত্যা ঠেকাতে ভরসা সম্পর্কের বাঁধনে

এই দূরত্ব যত স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, ততই বন্ধুবান্ধব-ভাইবোনের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে ভিডিও গেম, কম্পিউটার, টিভি। অর্থাৎ, সামাজিক আদানপ্রদান থেকে আরও দূরে দূরে থাকার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে।

আজ, রবিবার বিশ্ব আত্মহত্যা বিরোধী দিবস। সচেতনতা প্রসারে চলছে পোস্টার তৈরি। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

আজ, রবিবার বিশ্ব আত্মহত্যা বিরোধী দিবস। সচেতনতা প্রসারে চলছে পোস্টার তৈরি। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৬
Share: Save:

আত্মহত্যার প্রবণতা একটা বড় সমস্যা। তা কোনও বিপদের সমাধান নয়। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার হোক বা পড়ার চাপ, চাকরি না পাওয়া, নীল তিমির গ্রাসে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া— কোনও কিছুরই নয়।

বিশ্ব আত্মহত্যা বিরোধী দিবস উপলক্ষে সে কথাই মনে করালেন সমাজের নানা স্তরে মনস্তত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় যুক্ত অভিজ্ঞরা। কোনও আত্মহত্যা প্রবণ মানুষ কি এত কথা খেয়াল রাখেন? না কি তা খেয়াল করানোর দায়িত্ব নেন তাঁদের আশপাশের মানুষেরা?

মনস্তত্ত্বের শিক্ষক উশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করান, সামাজিক সব সম্পর্ক যদি একটু বেশি গুরুত্ব পায়, তা হলেই অনেকটা সহজ হয় পরিস্থিতি। মন খারাপ হলে কারও কাছে বলে ফেলা খুব জরুরি।

কিন্তু বলবে কার কাছে?

এ সময়টাই যেন শুধুই নিজস্বীর, মনে করেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র। আগে সমস্যা হলে নানা আত্মীয়ের কাছে গিয়ে ‘আশ্রয়’ খোঁজার চল ছিল। বাড়ির বড়রাও তা নিজেদের কর্তব্য মনে করতেন। ছোটরাও ভরসা করতেন গুরুজনেদের ভাবনার উপরে। ফলে মন খুলে নিজের কষ্টের কথা বলা, পরামর্শ চাওয়ায় কোনও সম্মানহানির প্রশ্ন উঠত না। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘এখন সকলেই নিজের নিজের ‘স্পেস’ সম্পর্কে সচেতন। কেউই কোনও সম্পর্কের দায় নিতে রাজি নন। বন্ধুত্বও হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতে। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই সামনাসামনি বন্ধুত্বের কর্তব্য পালন করতে এগিয়ে আসেন না। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে!’’ দূরত্ব এতই বাড়ছে যে মন খারাপ বা কঠিন কোনও সময়ে খুব নিকট আত্মীয়ের কাছেও যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। নিজের ভাই-বোন-মা-বাবার কাছে গিয়েও কোনও কথা বলতে অনেকটা ভাবতে হচ্ছে। তত ক্ষণে পেরিয়ে যাচ্ছে সময়।

এই দূরত্ব যত স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, ততই বন্ধুবান্ধব-ভাইবোনের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে ভিডিও গেম, কম্পিউটার, টিভি। অর্থাৎ, সামাজিক আদানপ্রদান থেকে আরও দূরে দূরে থাকার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। উশ্রী মনে করান, এর ফলে হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমাজ থেকে বেশিই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে শৈশব। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে বাড়ন্ত বয়সের মানসিক গঠনে।

তাই বলে কি খেলবে না ভিডিও গেম? তাতেও কিন্তু থেকে যায় সমবয়সিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা— মনে করাচ্ছেন উশ্রী। তবে কী করবেন অভিভাবকেরা?

ছোট থেকেই নজর দিতে হবে সামাজিক মানসিকতা তৈরির দিকে। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ মনে করান, সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করলে অনেকটাই বাকি সমাজের সঙ্গে যোগ স্থাপনে সুবিধে হয়। গল্পের ছলেও যদি বোঝানো যায় জীবনের কাছাকাছি থাকার গুরুত্ব, তা হলে হয়তো ছোট থেকে আটকানো যায় বিপদ। অর্থাৎ, নেট দুনিয়ার ব্লু হোয়েল হোক বা অন্য কোনও গেম-চক্রের দেখানো ভয়ের থেকে যে অনেক বেশি বাস্তব আশপাশের মানুষজন ও তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে-পেঁচিয়ে থাকা দিনগুলো। এটুকু বুঝতে শিখলে ছোট বয়স থেকেই নিজে নিজে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে আত্মহত্যা করে কোনও কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালানোর ইচ্ছে।

অভিজিৎবাবুর মত, আত্মহত্যা বিরোধী দিবসটি সামাজিকতার দিন হিসেবে পালন করলে আরও ভাল হয়। মানুষ ফের সামাজিক ভাবে সচেতন হলে এমনিই নিয়ন্ত্রণে আসবে আত্মহত্যার ঝোঁক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE