সফল অভিনেত্রী। প্রশংসিত তাঁর অভিনয়। আকর্ষণীয় চেহারা। স্বাভাবিক ভাবেই অনুরাগীর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁর ভাবনা ভীষণ স্পষ্ট। ঝট করে প্রেমে পড়েন না তিনি। মনে করেন, সম্পর্কে থাকা যায় এক জনের সঙ্গেই। সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎকারে মনের কথা বলেছেন ‘পতি, পত্নী অউর উয়ো’-এর নায়িকা ভূমি। চলতি বছরেই মুক্তি পেয়েছে ভূমি অভিনীত ‘মেরি হাজ়ব্যান্ড কি বিবি’। দুই গল্পই ত্রিকোণ সম্পর্কের। দ্বিতীয়টি কৌতুকের মোড়কে সম্পর্কের রসায়ন তুলে ধরেছে।
কিন্তু সে সব তো রুপোলি পর্দায়? বাস্তব জীবনে অভিনেত্রীর ভাবনা কী, সে সম্পর্কেই একটি সাক্ষাৎকারে মনের কথা প্রকাশ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, সিনেমায় যেমন চরিত্রই থাকুক না কেন, তিনি মনে করেন, জীবনে বিশেষ মানুষ এক জনই হন, এবং এই ক্ষেত্রে তাঁর উপরে অধিকারবোধ বা পজ়েসিভনেস থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এখানেই না থেমে ভূমির খোলামেলা উত্তর ছিল— সেই মানুষটিকে না পেলে তিনি একলাই রয়ে যাবেন। একলাও তিনি খুশি।
সম্পর্কে অধিকারবোধ। তা নিয়ে নানা ভাবনা, নানা রকম মতামত। পজ়েসিভনেস কি সত্যি দাম্পত্যের জন্য সুস্থ ভাবনা!
মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, ‘‘ সুস্থ সম্পর্কে অধিকারবোধ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সেই সীমারেখাটা বোঝা। অন্যের প্রতি ভালবাসা থেকে অধিকার তৈরি হয়। তবে সেই বোধ যদি কারও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে খর্ব করে, তা আর সুস্থ থাকে না।’’
আরও পড়ুন:
লেখিকা এবং মনোবিদ, গুরলীন বড়ুয়ার কথায়, দু’জনের পারস্পরিক বিশ্বাস, ভরসা থাকা সত্ত্বেও কারও মনে প্রিয়মানুষটিকে হারানোর ভয় হয়। উদ্বেগ তৈরি হয়। তা থেকেই সেই মানুষটিকে নিজের করে রাখার বা আঁকড়ে ধরার প্রবণতা, অধিকারবোধ তৈরি হয়। অতীতের খারাপ অভিজ্ঞতাও অতিরিক্ত অধিকারবোধের নেপথ্যে থাকতে পারে।
কখন গলার ফাঁস হয়ে ওঠে অধিকারবোধ?
বিশেষ মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার বাসনা থাকতেই পারে। কিন্তু যদি সাধারণ অধিকারবোধের বদলে সঙ্গীর জীবনের জবরদস্তি দখল নেওয়ার চেষ্ট করেন অন্য জন, সমস্যা হয় তখনই। কারও প্রতিটি পদক্ষেপ যদি কেউ ভালবাসার অধিকার দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন বা করার চেষ্টা করেন, তখনই সম্পর্ক গলার ফাঁস হয়ে উঠতে পারে।
আর সেই সূক্ষ্ম সীমারেখাটি বোঝার কথাই বলছেন মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা। তাঁর কথায়, অধিকারবোধ এবং সন্দেহ সূক্ষ্ম সুতোর মতোই একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন কারও মনে হয় প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যেতে পারেন, তিনি শুধু তাঁরই, সেখান থেকে জন্ম নেয় অধিকারবোধ। আবার যখন মনে এই প্রশ্ন আসে, অন্য পক্ষও কি একই ভাবে আমায় ভালবাসে, সেখান থেকে জন্ম হয় সন্দেহের। তা থেকেই অনেক সময় অন্যের পরিসরে ঢুকে পড়া, তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করার ভাবনা জন্মায়।
‘অধিকারবোধ’-এর জেরে দমবন্ধ হয়ে এলে কী করণীয়?
প্রেমের সম্পর্ক হোক বা বিবাহের, অনেক সময় দেখা যায়, যুগলের এক জন অন্যকে সন্দেহ করছেন। তাঁর ফোন পরীক্ষা, মেসেজ দেখা, প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। এটা কিন্তু সুস্থ সম্পর্কের ছবি হতে পারে না, জানাচ্ছেন মনোবিদ। শর্মিলার কথায়, “সম্পর্কে বিশ্বাস এবং ভরসা থাকা জরুরি। সঙ্গীর আচরণে যদি দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, তা হলে এ নিয়ে দু’জনের খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন। তাতে কাজ না হলে পেশাদার কাউন্সিলরের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।”