খুদের দুষ্টুমি সামলাতে পারছেন না, কী করবেন? ছবি: শাটারস্টক
স্কুল থেকে প্রায়ই ফোনে অভিযোগ আসে অর্কের মায়ের কাছে। ছেলে প্রতি দিনই কাউকে না কাউকে মারছে, নয়তো প্রচণ্ড দুষ্টুমি করছে। ছেলেকে শাসন করেছেন। বকাবকি করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি কোনও। অর্কের মতো আরও অনেক বাবা-মায়েরা এমন সমস্যার সম্মুখীন। কারও বাড়িতে গিয়ে বা কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে গিয়েও শিশুরা অনেক সময় এমন বায়না, কান্নাকাটি করে বসে যে, বাবা-মায়েরা অস্বস্তিতে পড়ে যান। শিশুরা দুষ্টুমি করবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে মাটিতে বসে কান্নাকাটি বা কাউকে মারধর, সমানে হুটোপাটি করলে তখন সেই দুষ্টুমি আর সহনীয় থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেক মায়েরাই খুদের গালে একটা চড় কষিয়ে দেন বা প্রকাশ্যে ধমক দেন অভিভাবকেরা। কিন্তু এতে আদৌ কোনও লাভ হয় কি?
খুদের লাগামছাড়া দৌরাত্ম্য কী ভাবে বশে আনা যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ দিলেন মনোসমাজকর্মী ও মনোরোগ চিকিৎসক। মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, বাইরে যাতে সে দুষ্টুমি না করে সে জন্য বাড়িতেই থাকে সঠিক ভাবে, উপযুক্ত শিক্ষায় বড় করে তোলা প্রয়োজন। বাইরে গিয়ে লোকজনের সামনেই খুদে দু্ষ্টুমি শুরু করলে বা খারাপ কোনও ব্যবহার করলে বকবকি নয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে শিশুর মন অন্য দিকে ঘোরানোর পরামর্শ দিচ্ছেন মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ।
১. মোহিত বলছেন, ‘‘সন্তানের মন ভোলাতে কোনও একটি বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলুন কিংবা ওই জায়গা থেকে খুদেকে বার করে আনুন। কোথাও একটু নিয়ে যান তাকে, ভুলিয়ে দিন। বা বাইরে খোলা জায়গায় নিয়ে গিয়ে যদি সে ছোটছুটি করতে চায় তা করতে দিন। খানিক ক্ষণ খেলাধুলো করলে বা ছোটাছুটি করলে সে শান্ত হয়ে যাবে।’’
২. অনেক সময় কোনও জিনিসের জন্যই বায়না জুড়ে দেয় খুদে। যদি তা সেই মুহূ্র্তে দেওয়া সম্ভব না হয়, তা হলে পরে দেবেন বলে বোঝানো যেতে পারে। তবে যদি অন্যায় চাহিদা হয়, তাতে সে যত বায়নাই করুক না কেন শান্ত অথচ দৃঢ় ভাবে বলতে হবে, সেটা তাকে দেওয়া সম্ভব নয়। কেন দিতে পারবেন না, সেই কারণটিও তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। তবে এর পরেও নাছোড়বান্দা হয়ে থাকলে, তাকে বাড়তি গুরুত্ব না দিয়ে সরে যাওয়াই ভাল।
অন্য দিকে, মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, ‘‘খুদের আচরণের কারণ অনেকটাই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাড়িতে তাকে কী ভাবে বড় করা হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে গিয়ে সন্তান যাতে মাত্রাছাড়া দুষ্টুমি না করে সে জন্য বাড়িতেই তাকে ঠিক ভাবে বড় করে তুলতে হবে।’’
শর্মিলার মতে, অনেক সময় দেখা যায়, শিশু চিৎকার করছে, কখনও খারাপ কথাও বলতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেখা দরকার, অভিভাবকেরা বাড়িতে এমন ভাবে কথা বলেন কি না। অনেক সময় সামান্য কারণে মা রেগে গিয়ে প্রচণ্ড বকছেন। সেই জিনিসগুলি খুদেও শেখে। সে-ও বোঝে, কোনও কিছু পেতে গেলে বা তার কথা অন্যদের শোনাতে হলে এটাই বুঝি উপায়। কিংবা বাবা-মা বাড়ির গুরুজনদের সঙ্গে কী আচরণ করছেন, সেটাও তার মনোজগতে ঠাঁই পায়। স্কুলে গিয়ে দৌরাত্ম্যের কারণ এটাও হতে পারে যে, বাড়িতে বাবা হয়তো সময় দিতে পারছেন না। কিংবা মা কথায় কথায়, মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। তাকে সঙ্গ দেওয়ার লোকের অভাব, কথা বলতে না পারা মনে অনেক সময় রাগ বা জেদ তৈরি করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে শর্মিলার পরামর্শ, সন্তানকে শান্ত ভাবে বলুন, স্কুলে গিয়ে দুষ্টুমি করলে সবাই তাকে খারাপ বলবে। কিংবা বলতে পারেন, আর স্কুল থেকে ডাকলে কিন্তু আপনি গিয়ে ঝামেলা মেটাবেন না। আবার স্কুলে দুষ্টুমি না করলে তাকে পুরস্কার দিতে পারেন। তবে তা চকোলেট বা খেলনা নয়, তাকে ভাল বলা, আদর করাতেও কাজ হতে পারে।
তবে যদি কোনও খুদের দৌরাত্ম্য একেবারেই লাগামছাড়া হয়ে যায়, তা হলে মনোবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন শর্মিলা। তাঁর মতে, অনেক সময় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটির সমস্যা থাকতে পারে সন্তানের। কনডাক্ট ডিজ়অর্ডারও হয়। পেশাদার কারও কাছে গেলে তিনি এগুলি বুঝতে পারবেন। দ্রুত কাউন্সেলিং বা চিকিৎসা শুরু হলে সমাধানও দ্রুত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy