হালকা বৃষ্টি হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। আবার চড়া রোদ উঠছে। দিনের বেলায় জ্বালাপোড়া গরমে নাজেহাল হচ্ছেন শহরবাসী। এই সময়ের কয়েক পশলার অকালবৃষ্টি ডেঙ্গির বাহক এডিস মশাদের বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ। রোগও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বর্ষার মাঝামাঝি চরম রূপ ধারণ করে। তবে বর্ষার আগমনের আগেই শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়ে চলেছে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। এই সময় শিশুদের জ্বর হলেই বাবা-মায়েদের বাড়তি সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। ডেঙ্গি ভাইরাসের কারণে জ্বর কি না, তা রক্ত পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে। তার আগে বেশ কিছু লক্ষণও প্রকাশ পাবে। সেই সব লক্ষণ চিনে সাবধান থাকতে হবে অভিভাবকদের।
লক্ষণ চিনুন
শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। ‘ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ’-এর শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল সাবধান করে বললেন, “যদি দেখা যায় যে শিশুদের সর্দিকাশি নেই, এ দিকে জ্বর ও গা-হাত-পা ব্যথা আছে, সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গির কথা ভাবতেই হবে। পাড়ায় বা এলাকায় কেউ ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে, আরও বেশি সাবধানে থাকা জরুরি। জ্বরের সঙ্গেই গায়ে, হাত-পায়ে র্যাশ বেরোতে পারে, তীব্র মাথাযন্ত্রণা, চোখে ব্যথা ভোগাবে। পেশির ব্যথা, খিঁচুনিও হতে পারে।” আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
১) নাক দিয়ে রক্ত পড়া
২) মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে
৩) পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হবে, ক্লান্তি বাড়বে
৪) ঘন ঘন বমি হতে থাকবে
৫) প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাবে
৬) শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে
অভিভাবকদের জন্য কিছু পরামর্শ
সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা আর বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময়টাতে সাবধান থাকতে হবে। এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি থাকলে, ছোটদের লম্বা হাতার জামা ও ফুল প্যান্ট পরানো উচিত।
ডেঙ্গির মশা ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে চেষ্টা করে। তাই বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেওয়া চলবে না। এখন মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, বাড়ির ভেতরে বা বাইরে যেন কোথাও জল না জমে থাকে। মাটির টবেও জল জমতে দেওয়া যাবে না।
ঝড়বৃষ্টিতে নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে চত্বরে কোথাও জল জমছে কি না, চৌবাচ্চা বা জলের ট্যাঙ্ক থাকলে তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে কি না, নজরে রাখতে হবে।
রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস করান শিশুকে।
জ্বর হলে হালকা প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে শিশুকে। তবে অবশ্যই শিশুর ওজন ও শারীরিক অবস্থা বুঝে। তবে কোনও ভাবেই অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ দেবেন না। কোনও রকম অ্যান্টিবায়োটিকও খাওয়ানো যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনও রকম ওষুধ খাওয়াবেন না।
ডেঙ্গি হয়েছে কি না জানতে প্লেটলেট কাউন্টের সঙ্গে সঙ্গে পিসিভি বা প্যাকড সেল ভলিউম টেস্ট করিয়ে নেওয়াও জরুরি। এর সঙ্গে যদি শিশুটি জানায় যে, বুকে বা পেটে ব্যথা করছে, তা হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। অনেক সময়ে ডেঙ্গি হলে পেটে জল জমে প্লেটলেট কাউন্ট দ্রুত কমতে থাকে। তাই সাবধান হওয়া জরুরি।