সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে নবজাতকদের টিকা দেওয়াতেই হবে। তবে আজকাল নানা ধরনের নতুন নতুন প্রতিষেধকও এসে গিয়েছে। ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াঘটিত অসুখবিসুখ যত বাড়ছে, ততই নতুন প্রতিষেধক নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। তাই সদ্যোজাতকে কী কী টিকা দেওয়াতে হবে সে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন অনেক বাবা-মা। বছর কয়েক আগেও শিশুকে জন্মের পর চার বার টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে গেলেই হত। কিন্তু এখন যেতে হয় অন্তত ৬ থেকে ৭ বার। নিউমোনিয়ার টিকা (পিসিভি), হাম ও রুবেলার টিকা (এমআর) এবং পোলিওর ইঞ্জেকশনও(আইপিভি)সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে তালিকায়। তা হলে জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন টিকা এই সময়ে দিইয়ে রাখা ভাল।
সরকারি কর্মসূচিতে যক্ষ্মার (বিসিজি) ও মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা (ওপিভি) জন্মের পরই দেওয়ানো যায়। ৬, ১০ ও ১৪ সপ্তাহে শিশুকে পোলিও টিকা (মুখে খাওয়ার ওপিভি-র পাশাপাশি আরও একটি প্রতিষেধক দেওয়াতে হয়, তা হল পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা। ডিপথেরিয়া, পার টু সিস (হুপিং কাশি), টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি এবং হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (টাইপ-বি)এই পাঁচটি মারণরোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে এই প্রতিষেধকের।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, নিউমোনিয়ার কারণেও শিশু মৃত্যুর হার এ দেশে বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, মেনিনজাইটিস এবং নিউমোনিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হল হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (টাইপ-বি) জীবাণু। প্রায় তিন লক্ষের মতো শিশু প্রতি বছর এই রোগে গুরুতর অসুস্থ হয়। এত দিন এই জীবাণুর প্রতিষেধক বাজার থেকে কিনে শিশুকে দিতে হত। কিন্তু এখন পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও দেওয়া হয়। তাই এই টিকা শিশুকে দিয়ে রাখতেই হবে। শিশু জন্মানোর ছ’মাস পরে চার সপ্তাহের ব্যবধানে তিন বার পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দিতে পারলে ভাল।
বেসরকারি পর্যায়েও নানা ধরনের টিকা দেওয়া হয়। যেমন, দেড় মাস বয়সে কলেরার টিকা, ১২ মাস বয়সে চিকেন পক্সের টিকা, ১৮ মাস হলে হেপাটাইটিস এ এবং দু’বছর বয়সে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া যেতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে মিজ়লস-রুবেলা (এমআরভিসি)টিকাকরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল। তিনি জানান, এই প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশেষ কিছু দেখা যায় না। অল্প জ্বর বা সর্দিকাশি থাকলেও খুদেরা এই টিকা নিতে পারে। যদি দেখা যায় টিকা নেওয়ার পরে শিশুটির কোনও রকম অ্যালার্জির সংক্রমণ দেখা গিয়েছে, শুধু সে ক্ষেত্রে টিকাটি নেওয়া যাবে না। মিজ়লস বা হামে শিশুরা ভোগে বেশি, তবে তার চেয়েও সাংঘাতিক রুবেলা। একে তো হার্টের রোগ দেখা দেয়, তার সঙ্গে চোখে সমস্যা হতে পারে। কনজেনিটাল ক্যাটারাক্টও হতে পারে, অর্থাৎ চোখে ছানি নিয়েই সন্তান জন্মাতে পারে। সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন যদি মায়ের রুবেলা হয়, তা হলে গর্ভস্থ শিশুর কনজেনিটাল রুবেলা হতে পারে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই হবু মায়েদের রুবেলার টিকা দেওয়া হয়। সন্তানের বয়স ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হলে এই টিকা নেওয়া যাবে বলে জানালেন চিকিৎসক।