সন্তানকে ভুলিয়ে রাখতে স্মার্টফোনের শরণাপন্ন হন তারকারাও। যেমন প্রিয়ঙ্কা চোপ়ড়া। স্বামী নিক জোনাস এবং কন্যা মালতী মেরি জোনাসকে নিয়ে নিউ ইয়র্কের একটি রেস্তরাঁয় নৈশাহারে বেরিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁদের সেই নৈশ অভিযানের যে সমস্ত ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তার একটিতে দেখা যাচ্ছে, ডিনারে ব্যস্ত নিক এবং প্রিয়ঙ্কা। পাশে চেয়ারে বসা মালতী মোবাইলে কার্টুন দেখতে ব্যস্ত।

সাধারণ বাবা-মায়েদের মতোই মেয়েকে ভুলিয়ে রাখতে স্মার্টফোনের শরণাপন্ন হন প্রিয়ঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত।
দৃশ্যটা অত্যন্ত চেনা। আকছার সন্তানকে নিয়ে বাইরে বেরোলে তাকে ভুলিয়ে রাখতে স্মার্টফোনে ভরসা রাখেন বাবা-মায়েরা। অল্প বয়সে ছেলে-মেয়ের মোবাইল আসক্তির কুফল নিয়ে নানা আলোচনা সত্ত্বেও সন্তানদের সামলে রাখার এমন উপযোগী অস্ত্র প্রয়োগ করতে পিছপা হন না কিছু কিছু বাবা-মা। কিন্তু বলিউডের সব তারকা মায়েরা কি তা-ই করেন?
আলিয়া ভট্ট
বলিউডে এই মুহূর্তে যে তারকাসন্তানকে দেখলেই ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝিকিয়ে ওঠে, তার নাম রাহা কপূর। আলিয়া ভট্ট এবং রণবীর কপূরের কন্যা রাহা। তাকে মোবাইল দেখানো তো দূর অস্ত্, মোবাইল বা ট্যাবলেটের ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেন না আলিয়া। এক সাক্ষাৎকারে আলিয়া বলেছেন, ‘‘রাহা জানেই না আইপ্যাড জিনিসটা কী? আমি ওকে মোবাইলের কাছেই ঘেঁষতে দিই না।’’

রাহা কি কখনও পর্দায় বাবা-মাকেও দেখেনি? ছবি: সংগৃহীত।
আলিয়া নিজে অবশ্য ছোটবেলায় নিয়মিত টিভি দেখতেন। ওই সাক্ষাৎকারেই আলিয়া বলেছেন, ‘‘আমি দিনের অনেকটা সময়ই টিভি দেখতাম। রাহাকে দেখতে দিই না বলে আমার মা এখন বলে, ‘মা হিসাবে অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছি। তোমাকে টিভি দেখতে বারণ করিনি কখনও। আমারই আটকানো উচিত ছিল’। যদিও আমি মাকে বলি, খারাপ কিছু করোনি। বরং দেখতে দিয়েছিলে বলেই আমার কল্পনাগুলো পাখনা মেলেছিল।’’ কিন্তু রাহা কি কখনও পর্দায় বাবা-মাকেও দেখেনি? জবাবে আলিয়া বলেছেন, ‘‘একেবারে দেখেনি, তা নয়। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিতে আমার আর রণবীরের একটি গানের দৃশ্য ও দেখেছে। কিন্তু ওটুকুই।’’
করিনা কপূর
রাহার আগে বলিউডের যে তারকাসন্তানকে নিয়ে ছবিশিকারিরা মেতে থাকতেন, তার নাম তৈমূর আলি খান। করিনা কপূর এবং সইফ আলি খানের জ্যেষ্ঠ সন্তান তৈমূরেরও মোবাইল দেখার সময় সীমিত। করিনা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘সোম থেকে শুক্র বার পর্যন্ত তৈমূর এবং জে (সইফ-করিনার কনিষ্ঠ সন্তান)-র স্মার্টফোনে বা আইপ্যাডে ভিডিয়ো দেখা বারণ। ভিডিয়ো গেম খেলাও বারণ। বাকি দু’দিনও নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করা আছে।’’

দুই সন্তানকে মোবাইল বা টিভি দেখা থেকে বিরত রাখতে নিজেদের স্বভাবও পাল্টাতে হয়েছে করিনা এবং সইফকে। ছবি: সংগৃহীত।
তবে দুই সন্তানকে মোবাইল বা টিভি দেখা থেকে বিরত রাখতে নিজেদের স্বভাবও পাল্টাতে হয়েছে করিনা এবং সইফকে। করিনা বলেছেন, ‘‘এখন ছেলেরা প্রশ্ন করে, ‘তুমি টিভি দেখছে কেন? বা তোমরা কেন মোবাইল দেখছে?’ আমরা তাই রাতে খাওয়ার সময়ে এবং ঘুমোনোর আগে খুব প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল দেখা বন্ধ করেছি। কারণ এখনকার ছেলেমেয়েদের কিছু বারণ করলে, তা নিজেদেরও করে দেখাতে হবে।’’
তবে আলিয়া-করিনা যা-ই বলুন, সন্তানদের সারা দিন সামলে রাখা কতখানি কঠিন, তা যাঁরা সামলান তাঁরাই জানেন। কাজ তো থেমে থাকে না! যে মা বা বাবা বাড়িতে থেকে সন্তানের খেয়াল রাখেন বা যাঁরা কর্মরত, তাঁদের প্রত্যেককেই আরও পাঁচ রকম কাজ করতে হয়। সেই সব কাজ করতে করতেই খেয়াল রাখতে হয় ছেলে বা মেয়ের খাওয়া-ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সে পরিচ্ছন্ন থাকছে কি না। তার কোনও বিপদ যাতে না ঘটে, তার দিকেও নজর রাখতে হয়। ৫ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তান না ঘুমোলে তাকে এক জায়গায় ধরে রাখাটাই মা-বাবার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর ঠিক সেইখানেই প্রবেশ স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের।

নিজের কাজ গোছানোর প্রয়োজনে যে সময়টুকু সন্তানকে ভুলিয়ে রাখার দরকার পড়ে, সেই সময়ে তার চোখের সামনে স্মার্টফোনে পছন্দের কার্টুন বা ভিডিয়ো চালালেই সে সব কাজ ভুলে তাতেই মগ্ন হয়ে থাকবে। বিরক্ত করবে না কাউকে!
প্রিয়ঙ্কা অবশ্য একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি সাধারণত নিজেই মেয়ের সঙ্গে খেলেন। তবে মালতী একেবারে স্মার্টফোন দেখে না তা-ও নয়, জরুরি পরিস্থিতিতে খুব দরকার পড়লে সাধারণ বাবা-মায়েদের মতোই মেয়েকে ভুলিয়ে রাখতে স্মার্টফোনের শরণাপন্ন হন প্রিয়ঙ্কা।