ঠিক একেই বলে প্রেম! প্রথম দিকে এমনই মনে হবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন খোলস ছাড়তে থাকে সম্পর্ক। বেরিয়ে পড়ে নগ্ন চেহারা। যা দেখে বোঝা যায়, সম্পর্কের অন্তরালে রয়ে গিয়েছে অনেক গলদ। এই ধরনের সম্পর্কে প্রথম দিকে দু’টি মানুষ একে অপরকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারেন না। যাঁর সঙ্গে এমন ঘটে, তিনি শুরুর দিকে ভাবেন, এ যেন অটুট বন্ধন, এ রকম না হলে, সেটি প্রেমই নয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেই ব্যক্তি ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে অচল হয়ে যাচ্ছেন। নিজের সঙ্গীর উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে যান যে, কোনও কাজ নিজে নিজে করার ক্ষমতা থাকে না আর। সঙ্গীর সান্নিধ্যে খুঁজে নেন নিরাপত্তাবোধ। আর সেটিই হয়ে দাঁড়ায় ফাঁদের মতো। সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠলেও তা থেকে বেরোতে পারেন না।
প্রেমের সম্পর্কে এই ধরনের ঘটনা তো আকছার দেখা যেত আগেও। কিন্তু এই খুঁটিনাটিগুলির নতুন নতুন নামকরণ হচ্ছে সাম্প্রতিক কালে। সমাজমাধ্যমের দাপটের সময়ে আতশকাচ দিয়ে সম্পর্ককে দেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। আর সেখানেই নতুন অভিধার জন্ম। সম্পর্কের এই ধরনকে ইংরেজিতে বলা হয়, ‘এনমেশমেন্ট’। ‘স্ট্রাকচারাল ফ্যামিলি থেরাপি’র প্রবর্তক সালভাদর মিনুচিন প্রথম বার এই ধারণার কথা বলেন।
এনমেশমেন্টের লক্ষণ চেনেন কি?
‘এনমেশমেন্ট’-এর ধারণা নিয়ে কী বলছেন মনোবিদ?
কলকাতার মনোবিদ শ্রাবস্তী মজুমদার আনন্দবাজার ডট কমকে বললেন, ‘‘প্রথম প্রথম খুব ভাল লাগে। সব কী রকম সিনেমার মতো! নিরাপত্তাবোধ মনকে আরাম দেয়। এটা ভেবেই ভাল লাগে যে, কেউ আমার এত ভালবাসে! কিন্তু ধীরে ধীরে দমবন্ধকর হয়ে ওঠে সেই সম্পর্কই। যখন দেখা যায়, কেবলমাত্র নিজের বলে আর কিছু নেই, ব্যক্তিগত গণ্ডি বার বার মুছে দিচ্ছেন অন্য দিকের মানুষটি, বাইরের জগতের সঙ্গে মিশতেও দিচ্ছেন না, তখন বোঝা যায়, সবটা বদলে গিয়েছে। যেটাকে নিরাপত্তাবোধ হিসেবে দেখছিলেন, সেটা যে আগাগোড়া মিথ্যে, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই এটিকে অনেকেই ফাঁদ বলে চিহ্নিত করেন।’’
‘এনমেশমেন্ট’-এর ধারণা নিয়ে কী বলছেন মনোবিদ?
কী ভাবে নিজেকে বার করা যায় এই ফাঁদ থেকে?
মনোবিদের পরামর্শ, ধাপে ধাপে এই ফাঁদ থেকে বেরোতে হবে।
১. এই ধরনের সম্পর্ক যে নিজের বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা করছে, সেটা আগে চিহ্নিত করতে হবে।
২. তার পর নিজের কাছে স্বীকার করতে হবে যে, সম্পর্কটি বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে।
৩. এ বার অসুবিধাগুলিকে বুঝতে হবে।
৪. সম্পর্কে থাকতে চাইলে, একমাত্র উপায়, কথা বলা, সঙ্গীকে বোঝানো। তাঁকে স্পষ্ট নিজের ব্যক্তিগত পরিসরের সম্পর্কে অবগত করে তুলতে হবে। তা ছাড়া নিজেদের জন্য শর্ত তৈরি করতে হবে। একে অপরকে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৫. কিন্তু নিজেকে দুমড়ে-মুচড়ে কোনও সম্পর্কে থাকা খুব কষ্টকর। এত নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধন যেখানে, সেখানে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবেই। আরাম পাওয়া যায় না। তাই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গেলেও সেটি অন্যায় নয়।