বয়সের সঙ্গে ছোটবেলার স্মৃতিমেদুরতা মনের মধ্যে ভিড় করে। আজ সমাজমাধ্যমের যুগে হাত বাড়ালেই বন্ধুত্বের হাতছানি। কিন্তু তারা কি শৈশবের বন্ধুদের সমগোত্রীয় হয়ে উঠতে পারে? দেখা যাচ্ছে, বয়সের সঙ্গে মানুষের বন্ধুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে শুরু করে। মনোবিদদের একাংশের দাবি, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে বন্ধুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। পাশাপাশি, নতুন বন্ধুত্ব তৈরির ক্ষেত্রেও সে আরও বেশি ‘সতর্ক’ থাকে। বেশি বয়সে কেন নতুন করে বন্ধু তৈরির সুযোগ কমে আসে? নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ—
আরও পড়ুন:
১) সময়ের অভাব: বয়সের সঙ্গেই বাড়ে দায়িত্ব। কর্মজীবন এবং সাংসারিক জীবনের জাঁতাকলে আলাদা করে বন্ধুর সন্ধান অনেকেই করে উঠতে পারেন না।
২) সুযোগ নেই: শৈশবে স্কুল বা খেলার মাঠে নিয়মিত সমমনস্কদের মেলামেশার সুযোগ থাকে। বয়স যত বাড়ে, এই ধরনের সুযোগও কমে আসে। তাই নতুন করে বন্ধুত্বও তৈরি হয় না।
৩) জীবনের গুরুত্ব: সময়ের সঙ্গে ব্যক্তিভেদে জীবনের প্রতি গুরুত্ব বদলে যায়। কেরিয়ার, পরিবার, ব্যক্তিগত শখ বা অবসর জীবনের পরিকল্পনা তখন বেশি গুরুত্ব পায়। তাই বন্ধুত্বের স্বাদ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
৪) প্রত্যাখ্যানের ভয়: শৈশবে আমাদের মনের মধ্যে ধুলো-বালির আস্তরণ থাকে না। তাই বন্ধুত্বে প্রত্যাখ্যানের ভয় থাকে না। কিন্তু সামাজিক কাঠামোর শর্ত মেনে জীবনযাপন শুরু হলে তখন প্রত্যাখ্যানের ভয় আরও বেশি করে মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসে। ফলে বন্ধুত্বের হাত কেউ বাড়িয়ে দিলেও অনেক সময়েই অন্য পক্ষের হাত এসে পৌঁছোয় না।
৫) নিরাপত্তাহীনতা: বয়সের সঙ্গেই আসে নিরাপত্তাহীনতার বোধ। কে কী বলছে এবং নিজেকে অন্যেরা কী ভাবে বিচার করতে পারে, তা নিয়ে অনুমান প্রতিনিয়ত মনকে দগ্ধ করে। ফলে অপরিচিত বা পেশাগত দায়বদ্ধতার মধ্যেই অনেক সময়ে সম্পর্ক আটকে থাকে। সেখানে নিখাদ বন্ধুত্ব তৈরি হয় না।
৬) সমাজমাধ্যমে ভরসা: আধুনিক সমাজে প্রত্যেকেই কম-বেশি একাকিত্বের শিকার। সেখানে পাশে থাকার মতো বন্ধু পেতে এখন অনেকেই সমাজমাধ্যম বা বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপের সাহায্য নেন। কলকাতায় বসেই হয়তো সিডনির কোনও মানুষের সঙ্গে ভার্চুয়াল বন্ধুত্বে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
৭) ব্যক্তিগত পরিস্থিতি: বড় হওয়ার পর জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিও দ্রুত বদলাতে থাকে। মানুষ চায় তার নিজের সমগোত্রীয় ক্ষেত্রে আরাম খুঁজে নিতে। দাম্পত্য, সন্তানহীনতা বা মাসিক উপার্জনের মতো বিষয়গুলিও বন্ধুত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৮) তথ্যের গোপনীয়তা: ছোটবেলার বন্ধুকে খোলা মনে যা যা বলা যায়, সেটা নতুন বন্ধুকে না-ও বলা যেতে পারে। সেখানেই কার্য-কারণ বা শর্তসাপেক্ষে তৈরি বন্ধুত্ব পিছিয়ে পড়ে।
৯) শৈশবে বন্ধুই ভরসা: শৈশবে মন থাকে সাদা ক্যানভাসের মতো। তখন সেখানে একে অপরের কাটা আঁচড় আজীবনের বন্ধুত্বের ভিত গড়ে তোলে। বেশি বয়সে নতুন বন্ধুদের মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে মানুষ তখন শৈশবের বন্ধুর কাঁধে মাথা রাখে।