Advertisement
E-Paper

কোটি কোটি টাকায় দর্শনধারী গেট চার মেডিক্যালে

ওষুধ, যন্ত্রপাতি, সাফাইকর্মী বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ কিংবা পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য নয়, কলকাতার চার মেডিক্যাল কলেজে ছ’টি সুদৃশ্য গেট তৈরিতেই দু’কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। সেই খাতে ৬০ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে খরচও হয়ে গিয়েছে। ধাপে ধাপে একই রকম গেট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে রাজ্যের বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৫

ওষুধ, যন্ত্রপাতি, সাফাইকর্মী বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ কিংবা পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য নয়, কলকাতার চার মেডিক্যাল কলেজে ছ’টি সুদৃশ্য গেট তৈরিতেই দু’কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। সেই খাতে ৬০ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে খরচও হয়ে গিয়েছে। ধাপে ধাপে একই রকম গেট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে রাজ্যের বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও।

অথচ, এই সরকারই কথায়-কথায় আর্থিক সঙ্কট ও ঋণে জর্জরিত হওয়ার কথা বলে। পরিকাঠামোর অভাবে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে প্রতিদিন বহু রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ ওঠে। আরও অভিযোগ, দুঃস্থ রোগীকে প্রচুর ওষুধ ও চিকিৎসা-সরঞ্জাম নগদ টাকা দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে হয়। যথাযথ পরিকাঠামো না-থাকায় ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই) রাজ্যে একের পর এক মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রভর্তির অনুমোদন ঝুলিয়ে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে কোটি-কোটি টাকা খরচ করে শুধু ‘দেখনদারি’ গেট লাগানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথম দফায় কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে দু’টি, নীলরতন সরকার হাসপাতালে একটি, কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে একটি ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দু’টি কারুকাজ করা, তোরণযুক্ত গেট তৈরি হবে। এর মধ্যে এসএসকেএমে হরিশ মুখার্জি রোডের দিকে ৪০ ফুট চওড়া, ৩৫ ফুট উঁচু গেটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। খরচ হয়েছে ১৮ লক্ষ টাকা। এ জে সি বসু রোডের দিকের গেটটির কাজও শেষের মুখে। এটিও ৪০ ফুট চওড়া, তবে উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। এর জন্য খরচ হচ্ছে ৪২ লক্ষ টাকা। এসএসকেএমে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে সাংসদ তহবিল থেকে। নীলরতন, সাগর দত্ত এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক-একটি গেটের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকা করে। কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে তার নির্মাণকাজ। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার দফতরের খবর, এই টাকা খরচ হবে স্বাস্থ্য দফতরের ‘কনস্ট্রাকশন’ ফান্ড থেকে। দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে গেট তৈরি শুরু হবে, যার এক-একটির জন্য বরাদ্দ ৩৮ লক্ষ টাকার মতো।

বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকদের একাংশ এবং স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এটা অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁদের প্রশ্ন, গেটের সৌন্দর্যে রোগীদের কী এসে যায়? এই টাকায় বরং একটু বেশি যন্ত্রপাতি-দামি ওষুধ-ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম কিনলে, শিশুদের ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু)’-এর সংখ্যা বাড়ালে, শয্যা সংখ্যা বাড়ালে এবং সাফাইয়ের কাজ করলে রোগীরা বেঁচে যেতেন। তাঁদের মত, নির্মাণকাজ যদি করতেই হয়, তবে এমসিআই নির্দেশিত কাজ দ্রুত শেষ করতে ওই টাকা ব্যয় হোক। কলকাতা মেডিক্যালে যেমন এখনও ৬৫০ আসনের ক্লাসঘর তৈরি হয়নি। একসঙ্গে ৩০০ লোক ধরে এমন ঘর ও ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলের কাজও বাকি।

এসএসকেএম হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যায় অপারেশন থিয়েটার তৈরি হচ্ছে না বলে শিশুদের অস্ত্রোপচার হতে মাস কাবার হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন টেলিকোবাল্ট যন্ত্র খারাপ থাকায় অসংখ্য ক্যানসার রোগী রেডিয়েশনের ডেট পাচ্ছেন না। ইলেক্ট্রো ফিজিওলজিক্যাল স্টাডি মেশিন এবং সি-আর্ম যন্ত্র অকেজো বলে হেনস্থার চূড়ান্ত হচ্ছেন প্রচুর রোগী। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন— গেট তৈরিতে খরচের বদলে কেন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র সারাতে বা কিনতে টাকা ব্যয় হয় না?

সাগর দত্তে এখনও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা যায়নি, টেকনিশিয়ান নেওয়া বাকি। নীলরতনে এখনও ৩০০ লোকের একটি লেকচার থিয়েটার, ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল, ৬৫০ জনের পরীক্ষার হল, গ্যালারিযুক্ত অটোপ্সি রুম, ক্যাজুয়াল্টি রুম, বড় গ্রন্থাগার তৈরি শেষ হয়নি। ওই হাসপাতালগুলির বেশির ভাগ শিক্ষক চিকিৎসকও মনে করছেন, গেটের টাকা পরিকাঠামো গড়তে ব্যবহৃত হলে কাজের কাজ হত।

যদিও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘মেডিক্যাল কলেজগুলির সৌন্দর্যও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অঙ্গ। হাসপাতালগুলো দেখতে ভাল লাগলে রোগীদেরও ভাল লাগবে।’’ কেন সরকার হাসপাতালের তোরণওয়ালা গেট তৈরিতে এত টাকা খরচ করছে, সে প্রসঙ্গে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ব্যাখ্যা, ‘‘পহলে দর্শনধারী, পিছে গুণ বিচারি। গেট থেকেই হাসপাতাল দেখতে ভাল লাগলে রোগীদেরও একটু ভক্তি-ভরসা আসবে। তা ছাড়া, আমরা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যা উন্নতি চার বছরে করেছি, বামফ্রন্ট ৩০ বছরে করেনি। তাই সমালোচনার কিছু নেই।’’

Showpiece gates medicla college gates 2 crore ruppes gates parijat bandyopadhyay west bengal health department expensive gates
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy