Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
আলো আর বাতাসের সহাবস্থানে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের চার দেওয়াল সদা উজ্জ্বল
Room Decoration

‘অনেক কমলা রঙের রোদ’ খেলে যায় এ আবাসে...

ইদানীং ফ্ল্যাটের বিভিন্ন দেওয়ালে থাকে রঙের খেলা। তবে লীনার আস্থা চিরন্তন সাদায়।

ছিমছাম বেডরুম

ছিমছাম বেডরুম ছবি: দেবর্ষি সরকার।

পারমিতা সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৫
Share: Save:

সারল্যের সৌন্দর্য বড় নিষ্পাপ, যেন ভোরবেলার শিউলি। প্রকৃতির সেই সারল্য মানুষের মনে যেমন থাকে, তেমন বহিরঙ্গেও কখনও কখনও তার প্রকাশ ঘটে বইকি।

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের আবাস একখানি অবকাশ। তাঁর অন্দরমহলে শৌখিনতার প্রকাশ নেই বরং সকালবেলার আদুরে রোদের মতো এক মায়াবী উষ্ণতা ঘিরে রয়েছে তাকে। কর্মব্যস্ত লীনার ঠিকানা দক্ষিণ কলকাতার এক নামী আবাসনের ২৩ তলায়। রোদ্দুর আর হাওয়ার অবাধ যাতায়াত সেখানে। তার মাঝে সবুজের ‘আছে তো হাতখানি’। ‘‘বাড়ি যেন এত সাজানো না হয় যে, কারও এখানে এসে আরাম করে বসতে অস্বস্তি হবে, এটা আমি প্রথম থেকে মাথায় রেখেছিলাম। অন্দরসাজ দেখে কেউ যদি বলেন ‘বাহ’, তা হলেই আমার জন্য যথেষ্ট। এর পরেরটুকু বাহুল্য,’’ বললেন লীনা, এটাই তাঁর অন্দরসজ্জার মূল কথা। কোনও পেশাদার অন্দরসজ্জাশিল্পীর সাহায্য না নিয়ে নিজের ভাবনায় গুছিয়ে নিয়েছেন আবাসখানি।

ইদানীং ফ্ল্যাটের বিভিন্ন দেওয়ালে থাকে রঙের খেলা। তবে লীনার আস্থা চিরন্তন সাদায়। অবশ্য কোনও কোনও দেওয়ালে ওয়ালপেপারের উপস্থিতি কাটিয়ে দিয়েছে সাদার মোনোটোন। ‘‘ওয়ালপেপারের সুবিধে হল, সহজে বদলে ফেলা যায়। আর ওয়ালপেপার বদলালে পুরো ঘরের লুকটাই বদলে যায়,’’ বললেন তিনি। বসার ঘরের সোফা, টি টেবল, মেঝের রাগ... সবেতেই সাদার নৈঃশব্দ্য। তবে ঘরে ঢুকলে চোখ টেনে নেয় জনৈক পরিচিতের এঁকে দেওয়া দেওয়ালজোড়া ছবি। ছবির নীচে সুদৃশ্য টবে সাজানো রয়েছে সারি সারি গাছ।

এই ফ্ল্যাটের অন্যতম আকর্ষণও ইন্ডোর প্লান্টের বাহার। এবং ওড়িশার রঘুরাজপুর থেকে কেনা অনবদ্য সব ছবি। বসার ঘর, শোওয়ার ঘরে তো বটেই, খাওয়ার ঘরেও রয়েছে অজানা শিল্পীদের আঁকা শিল্পের সম্ভার। লীনার খাওয়ার ঘরে সাদার আধিক্য একটু বেশি-ই, যা সচরাচর দেখা যায় না। সাদা পাথরের টেবিল, লেদারে মোড়া চেয়ারও সাদা। লীনার কথায়, ‘‘অতিরিক্ত রঙের ব্যবহার আমার পছন্দ নয়, তা বাড়ির দেওয়াল হোক বা আসবাব। আর সাদা তো প্রশান্তির রং। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে এই শান্তিটুকুই তো দরকার।’’ সাদার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করেছে সেরামিকের কারুকাজ করা টবে পামের সবুজ স্পর্শ।

এ বাড়িতে আসবাবের আধিক্য নেই। ঠিক যতটুকু যেখানে প্রয়োজন। ঢোকার মুখে নজর কাড়ে দুটি কাঠের ক্যাবিনেট। সেখানে বইয়ের পাশে সাজানো প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে লীনার পাওয়া নানা পুরস্কার ও স্বীকৃতি। দু’টি সুদৃশ্য কাঠের ক্যাবিনেটের মাঝে রুপোর স্ট্যান্ডের উপর রাখা কাচের ল্যাম্পশেডটি যোগ করেছে বাড়তি উষ্ণতা। ‘‘বাড়িতে আমি অতিরিক্ত আসবাব রাখিনি। চেষ্টা করেছি খোলামেলা অ্যাম্বিয়েন্সটা রাখতে। এখানে আমার ছাত্রছাত্রীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। ওরা যেন স্বচ্ছন্দে এখানে চলাফেরা করতে পারে বা কাজ করতে পারে, সেটা সবসময়ে মাথায় রেখেছি।’’ এ বাড়িতে ল্যাম্পশেড হোক বা টেরাকোটার শিল্প কিংবা ছবি... যা কিছু শৌখিন জিনিস রয়েছে, সবই এ রাজ্যের নানা জেলা কিংবা এ শহরেরই বিভিন্ন দোকান থেকে ঘুরে ঘুরে পছন্দ করে কিনেছেন গৃহকর্ত্রী। অতিরিক্ত মূল্যের ভ্রুকুটি নেই বলেই হয়তো এ নিরালা আবাসের কোনও কিছু থেকে আরামের লালিত্যটুকু হারিয়ে যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Room Decoration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE